চলতি রমজানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত গণ-ইফতার কর্মসূচিকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ধর্মের মোড়কে অস্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি’ দাবি করে ‘তীব্র ঘৃণা’ জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছে টিএসসিভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন। তবে এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সবাই ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটির পদধারী নেতা এবং প্রতিটি বিবৃতিই অভিন্ন হিসেবে লক্ষ্য করা গেছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ, স্লোগান ৭১, ঢাবি ব্যান্ড সোসাইটি, কুইজ সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, সাংস্কৃতিক সংসদ, ঢাবি ফোকলোর সোসাইটির পক্ষ থেকে এ বিবৃতিগুলো দেওয়া হয়। বিবৃতিতে গণ-ইফতারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলেছে সংগঠনগুলো।
বিবৃতিগুলো যাচাই করে দেখা যায়, সব সংগঠনের বিজ্ঞপ্তির ভাষা হুবহু একই। এর মাঝে আইটি সোসাইটি, নাট্য সংসদ, স্লোগান ৭১, ব্যান্ড সোসাইটি, ঢাবি ফোকলোর সোসাইটির বিবৃতিতে নিজেদের সংগঠনের নাম ব্যতীত সম্পূর্ণ লেখাতেই হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাকি ঢাবি কুইজ সোসাইটি ও সাংস্কৃতিক সংসদের লেখার ধরনে কিছু পরিবর্তন আসলেও মূল বার্তা অভিন্ন হিসেবেই দেখা যায়।
বিবৃতি দানকারী ঢাবি কুইজ সোসাইটির সভাপতি ইনজামামুল হক খান আলভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ঢাবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক তামজীদ আহমেদ নিঝুম বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক, ঢাবি নাট্য সংসদের সভাপতি লিফটন ইসলাম উপনাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক, ঢাবি ব্যান্ড সোসাইটির সভাপতি ইনজামানুল কবির সাকলায়েন উপ মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, আইটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ উদ্দিন ভুইয়া নবীন উপ তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং স্লোগান ৭১’র সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের একাংশ শুরু থেকেই রমজান উপলক্ষ্যে কোনো ধর্মীয় প্রোগ্রাম মেনে নেয়নি। কেউ কেউ এটাকে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং অসাংস্কৃতিক বলেও দাবি করেছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও গণমাধ্যমকে এই কথা বলেছে। তারা সামনে ইফতারের পক্ষে থাকলেও আড়ালে ঘোর বিরোধী।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করতেই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে। বিবৃতি দেওয়া সবগুলো সংগঠনই তানভীর হাসান সৈকতের নিয়ন্ত্রণাধীন। তার মেসেজের হুবহু কপি হিসেবে সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়েছে। এজন্যই তাদের বিবৃতির হুবহু মিল দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক ‘প্রোডাক্টিভ রমজান’ আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে অন্তত ৭ মুসলিম শিক্ষার্থী আহত হন।
প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ১৪ মার্চ ফের ‘প্রোডাক্টিভ রমজান’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ‘গণ ইফতার’ আয়োজনের ঘোষণা দিলে সেটাও চাপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর এখন টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলো এই বিবৃতি দিলো।
তথ্যসূত্র:
১. ‘গণ-ইফতারের’ বিপক্ষে বিবৃতি সংগঠনগুলোর, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ
– https://tinyurl.com/2rpsw7k5