বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর রাম মন্দির নির্মাণের রায়ের পর, আরও একটি প্রাচীন মসজিদের ভেতর মন্দিরের অস্তিত্ব খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বারাণসী এলাকার জ্ঞানভাপি মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর কোনও মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায় নিয়ে এরইমধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বারাণসী শহরটিকে ভারতের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়; হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধির স্থান হিসেবেও বিবেচনা করা হয় এটিকে। এখানে ১৭ শতকের জ্ঞানভাপি মসজিদ নিয়ে তিক্ত আইনি বিরোধ শহরের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বারাণসীর বাসিন্দা বিজয় দত্ত তিওয়ারি বলেন, “ঘর্ষণ ইতিমধ্যেই হয়েছে, এখন লড়াই চলবে।”
একজন হিন্দু আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছে, কোনও মন্দির ভেঙে ওই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল কি না, ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তা সমীক্ষা করে দেখবে। কিন্তু ভারতের মুসলিম নেতারা অনেকেই মনে করছেন, কোর্টের এই রায় অসাংবিধানিক এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকাও আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।
মসজিদটি কড়া পুলিশি প্রহরায় রয়েছে, এবং ইতোমধ্যে কংক্রিটের দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মুসলমানরা যারা এখনও দিনে পাঁচবার মসজিদটিতে নামাজের জন্য যান, তাদেরকে মসজেদে প্রবেশের আগে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী পার করে যেতে হয়। ভারতের সাধারণ নির্বাচনের চলাকালীন সেই নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪ এর জানুয়ারিতে আদালতের একটি রায়ে হিন্দু উপাসকদের মসজিদের ভেতরে প্রার্থনা করার অনুমতি দিয়েছে৷
এই রায়, অযোধ্যার বাবরির পর ভারতে আরেকটি মসজিদ-মন্দির বিবাদ নতুন করে উসকে দেবে বলেও অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন।
ভারতজুড়ে ইতিমধ্যে মসজিদ এবং অন্যান্য মুসলিম স্থাপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে কয়েক ডজন পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। ভারতে এমন একটি আইন থাকা সত্ত্বেও বিচারকরা মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন, যে আইনে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় উপাসনালয়গুলোর পরিবর্তন স্থগিত করে দেয়া হয়। ওই আইনে পরিষ্কার লেখা আছে যে, দেশের সব ধর্মীয় স্থানে যেভাবে উপাসনা চলছে সেটাকে কেউ বদলাতে পারবে না।
তাছাড়া ভারতে ১৯৯১ সালে পাস হওয়া ধর্মীয় উপাসনালয় আইনেও বলা হয়েছে যে, অযোধ্যা ছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। বারাণসী সিভিল কোর্টের এই নির্দেশ সেই রায়েরও লঙ্ঘন।
তথ্যসূত্র:
1. India’s Hindu nationalists are petitioning courts to tear down mosques and replace them with temples
– https://tinyurl.com/3sw9a73w