ভারতে পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে গেল বাবরি মসজিদের নাম, ইতিহাস বিকৃতি

0
257

ভারতের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলা হল বাবরি মসজিদের নাম। ন্যাশানাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এনসিইআরটির দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নতুন পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদের পরিবর্তে লেখা হয়েছে তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো। ইতিহাসের এই বিকৃতি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এনসিইআরটি প্রকাশিত নতুন এই পাঠ্যপুস্তকটি গত সপ্তাহেই সামনে এসেছে। এই নয়া সংস্করণে দু’পাতায় অযোধ্যার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বাবারি মসজিদের পরিবর্তে লেখা হয়েছে- ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি কর্তৃক নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো। এটি শ্রী রামের জন্মস্থানে নির্মিত হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছে যে, কাঠামোটির আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অংশে হিন্দু প্রতীকের ধ্বংসাবশেষ দেখা গিয়েছিল।

এই পাঠ্যপুস্তকের আগের সংস্করণে বাবরি মসজিদকে মীর বাকি দ্বারা নির্মিত ষোড়শ শতকের মসজিদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুধু নাম বদলই নয়, নতুন প্রকাশিত এই বইয়ে অযোধ্যার ইতিহাসের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে।

বইটির আগের সংস্করণে লেখা ছিল, ফৈজাবাদ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার পর দুই তরফেই গোলমাল দেখা দেয়। সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, করসেবকদের উন্মাদনা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং দাঙ্গার উল্লেখ ছিল। নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, ‘অযোধ্যা নিয়ে আফশোসের অন্ত ছিল না বিজেপি-র।’ ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে বলে অযোধ্যা থেকেই ধারণা জন্মায় বলেও উল্লেখ রয়েছে বইয়ে।

নতুন প্রকাশিত এই পাঠ্যপুস্তকে দাবি করা হয়েছে, শ্রী রামের জন্মভূমিতে মন্দির ভেঙে তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণটি দাঁড় করানো হয় বলে বিশ্বাস জন্মায়। ১৯৯২ সালে কাঠামোটি ধ্বংসের পর সমালোচকদের একাংশের মনে হয়েছিল, ভারতীয় গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতায় ঝুঁকির সম্মুখীন।

এনসিআরটি প্রকাশিত বইয়ের আগের সংস্করণে খবরের কাগজের প্রতিবেদনের ছবি ছিল, যাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের উল্লেখ ছিল। ‘অযোধ্যা বিজেপি-র সবচেয়ে বড় ভুল’ বলে অটলবিহারি বাজপেয়ীর মন্তব্যেরও উল্লেখ ছিল। সেগুলির কিছুই আর নেই নতুন সংস্করণে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিংহ। ১৯৯৪ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট। পুরানো সংস্করণে তার উল্লেখ থাকলেও, নতুন সংস্করণে নেই।

উল্লেখ্য, ধবংস হয়ে যাওয়া মসজিদের স্থানে বর্তমানে রাম মন্দির নির্মিত হয়েছে। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্দিরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।


তথ্যসূত্র:
1. Babri Masjid to Chinese aggression: Comparing changes in NCERT Class 12 textbooks
https://tinyurl.com/mrjyt4xe
2. Babri Masjid’s Name Deleted, Referred as ‘Three-dome Structure’ in Revised NCERT Textbook
https://tinyurl.com/3zjhmwkj

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিমেন্ট কারখানা স্থাপনের জন্য ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে স্বাক্ষরিত হল ৩টি নতুন চুক্তি
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২১ জুন, ২০২৪