রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষকেরা তাদের ছাড়িয়ে নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় এক সাংবাদিককে মারধর ও অপর এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে প্রথম আলো জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মৌন মিছিল ছিল। ‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’ শিরোনামে মিছিলে শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থীও অংশ নেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে থেকে মৌনমিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে আবার এসে সেখানে শেষ হয়। এ সময় বক্তব্য দিচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। এরই ফাঁকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যেতে থাকে। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা তাদের বাঁচাতে পুলিশের কাছাকাছি আসেন। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশের কাছ থেকে ওই শিক্ষার্থীদের ছিনিয়ে নেন শিক্ষকেরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও উপস্থিত ছিল।
এই ঘটনার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ–আল মামুন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাওয়ার ব্যবস্থা আপনারা করবেন। যদি কোনো ছাত্রের গায়ে হাত পড়ে, আমরা কিন্তু এরপর আর কোনো দায়িত্ব নেব না। যদি আমাদের সহকর্মীদের গায়ে হাত পড়ে, এটা আমরা কিন্তু মেনে নেব না। এটা অত্যন্ত বাজে ঘটনা ঘটেছে। এভাবে কোনো শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যেতে পারে না। এই শিক্ষার্থীদের নামে কোনো মামলা আছে? এভাবে ছোঁ মেরে মানুষকে ছিনিয়ে নেওয়া, এটা কী? এর প্রতিবাদ করছি আমরা। এভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া শিবির বলেন আর যা–ই বলেন, এটা খুবই অন্যায়। এ কারণে আজ দেশের এই পরিণতি ঘটেছে। এটা মনে রাখতে হবে গত ১২ বছর ধরে এই কাজটাই করছেন ছাত্রলীগ এবং আপনারা মিলে।’
একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক সেলিম রেজা (নিউটন) বলেন, ‘এরা সাদা পোশাকের পুলিশ কি না, আমি জানি না। … আমি তো চিনি না এদেরকে। ওরা তো বলেনি আমাকে, আমি ডিবি। ওরা তো বলেনি গোয়েন্দা, ওরা তো বলেনি আমি রাষ্ট্রের পুলিশ। তারা কারা, আমি তো চিনি না। আমি তো গুন্ডামি দেখলাম। আমি তো এখানে হাইজ্যাক করে ছেলেদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিতে দেখলাম। এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা যতক্ষণ বেঁচে আছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এটা হতে দেব না। এই বাহিনী কারা, আমরা এর জবাব চাই। আমি এদের পরিচয় চাই।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারা তাদের আহ্বানে এখানে এসেছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ পুলিশ প্রশাসন করেছে, এটা অন্যায়। তারা পুলিশকে কিছুই বলেননি।
এ দিকে ভিডিও করায় সমকালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অর্পণ ধরকে ডিবি পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি আমজাদ হোসেনের আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তার পিঠে কিল-ঘুষি মারা হয়েছে।
অর্পণ বলেন, ডিবির এক সদস্য তাকে কাছে ডেকে নিয়ে যায়। পরে আরেকজন তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও এই কাজ তারা অব্যাহত রাখে। এতে তার হাতের একটি অংশ কেটে গেছে। পরে পরিচিত পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বলায় তারা ছেড়ে দেয়। ডিবি পুলিশের একজন বলছিল, ‘এই হচ্ছে বড় ইনফরমার। এরে তোল।’
আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি ভিডিও করায় তার আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন ডিবি সদস্য তার পিঠে একাধিক কিল-ঘুষি দিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আটকের চেষ্টা, ছাড়িয়ে নিলেন শিক্ষকেরা
– https://tinyurl.com/2eann3z5