রোজার মাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি গাজার বাসিন্দারা

1
56

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রমজান মাসের শুরুতেই তীব্র দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বর্বর ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসস্তূপের মাঝে ঠাঁই নেওয়া গাজার লাখো মুসলমান সেহরি ও ইফতার আয়োজন করতে গিয়ে সীমাহীন সংকটে পড়েছেন। খাদ্যসংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, বৈরী আবহাওয়া এবং অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাদের জন্য রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই চরম কষ্টের হয়ে উঠেছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার গাজায় শুরু হয় পবিত্র রমজান। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা রোজার প্রথম দিন সেহরির মাধ্যমে শুরু করলেও গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য এই রাত ছিল দুঃসহ। ভারী বৃষ্টিতে তাদের অস্থায়ী তাঁবুগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তাঁবুর ভেতর পানি জমে গেছে, খাবার ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভিজে গেছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে তাঁবু ছেড়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে সেটিও ছিল কঠিন।

যারা ধ্বংসস্তূপে ফিরে গেছেন, তারাও দুর্ভোগের মধ্যে ছিলেন। ফাঁকা দেয়াল ও ছাদের ফাটল দিয়ে পানি প্রবেশ করায় অনেকের ঘুমানোর সুযোগও হয়নি। ফলে সেহরির সময় তারা তেমন কিছুই খেতে পারেননি। কেউ শুকনো রুটি বা খেজুর দিয়ে সেহরি করেছেন, আবার কেউ পানি পান করেই রোজা শুরু করেছেন।

দিনভর রোজা রাখার পর গাজার মুসলিমরা যখন ইফতারের অপেক্ষায় ছিলেন, তখনও তাদের কপালে জুটেছে চরম দুর্ভোগ। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে পর্যাপ্ত ইফতার সামগ্রী জোগাড় করা অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

যারা কিছুটা খাদ্য পেয়েছেন, তারা সাধারণত শুকনো রুটি, খেজুর এবং সামান্য পানি দিয়ে ইফতার করেছেন। রান্না করার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকেই কোনো গরম খাবার তৈরি করতে পারেননি। কিছু পরিবার মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করলেও ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের কারণে গাজায় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না, যার ফলে সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

গাজার বাসিন্দা মুহাম্মদ আল-মাসরি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘রমজান আমাদের জন্য আনন্দের সময় হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা ইফতারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছি না, আমাদের শিশুদের জন্য দুধ নেই, আমরা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

গাজার স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং ইসলামিক সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও বেশি সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। গাজার পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মাহনা বলেন, ইসরায়েল অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে আগামী দিনগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে।

দীর্ঘ দখলদারিত্ব, হামলা ও অবরোধের মধ্যেও গাজার মানুষ তাদের আত্মমর্যাদা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রমজানের প্রথম দিন চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটলেও তারা ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন।

তবে সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। দখলদার ইসরায়েলের অবরোধ অব্যাহত থাকলে গাজার মানুষদের জন্য রমজানের দিনগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠবে, যা মানবিক বিপর্যয়কে চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।


তথ্যসূত্র:
1. Gaza marks Ramadan amid ruins, hunger after months of Israeli assault
– https://tinyurl.com/48dnzwzu

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়ার অভিযোগে ভারতে মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি ধ্বংস
পরবর্তী নিবন্ধবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার চাঁদা আদায়ের ভিডিও ভাইরাল