নতুন একটি দশকে পা রাখার আনন্দে আপ্লুত ভারতবাসী। কিন্তু এই সব আনন্দের মধ্যেও বিশেষজ্ঞ মহলের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ, নতুন বছর বা নতুন দশক যাই আসুক না কেন, দেশের পক্ষে নতুন কোনও সুখবর বয়ে আনছে না ২০২০।
কেননা, গত ৮ নভেম্বর কয়েক দশকের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে করা ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ওই রায়ে ২৭ বছর আগে হিন্দু সন্ত্রাসীদের ভাঙা বাবরি মসজিদ ও তার লাগোয়া ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা সুপ্রিম কোর্ট হিন্দুদের দিতে বলে। উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসীরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পরও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের জমিতে হিন্দুদের রাম মন্দির নির্মাণের আদেশ দেওয়ার পর এ রায়কে সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করেছে মামলার অন্যতম পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। এছাড়া মুসলমানদের মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, অর্থনীতির অবস্থা গত কয়েক দিনে আরও খারাপ হয়েছে। গাড়ি শিল্প তলানিতে। টেলিকম শিল্প, ব্যাঙ্কিং সেক্টরের অবস্থা সঙ্গীন।
ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে বাঁচাতে বেশ কিছু ব্যাঙ্ককে কয়েকটি বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিপুল লোকসানের কারণে রেল, এয়ার ইন্ডিয়া, বিপিএল–কে আগামী মার্চেই বেসরকারিকরণ করা হবে বলে কয়েক দিন আগেই ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্র। তবে সরকারি অনুদান পাওয়ায় বিএসএনএল–এর আপাতত বেসরকারিকরণ হচ্ছে না।
ধসে পড়া অবস্থার জন্য পরিকাঠামো শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক মহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
পেঁয়াজের দাম এখনও ১০০ টাকার উপরে। রসুন, আদা অনেক আগে থেকেই উপরেই ঘোরাফেরা করছে। সম্প্রতি বেড়ে গিয়েছে আলুর দামও। প্রায় প্রতি দিনই বাড়ছে পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম। চা বাগানগুলি ধুঁকছে। একই অবস্থা দেশের তামাক শিল্পেরও।
দিল্লি থেকে তেলঙ্গানা, কর্নাটক থেকে রাজস্থান, রাতের শহরে একা মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছে কোনও রাজ্যের সরকারই। সাত বছর কেটে গেলও এখনও পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি নির্ভয়ার ধর্ষকদের।
গত অগাস্টে জম্মু–কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ হওয়ার পর থেকে চার মাস গড়িয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি উপত্যকা। আজও গৃহবন্দি উপত্যকা রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা।
এর মধ্যেই মুসলিম বিরোধী সিএএ আইন পাস করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তারপর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল আপামর ভারতবাসী। উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, অসম, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, দেশের প্রতিটি প্রান্তে নাগরিক আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন মানুষজন। বিক্ষোভকারীদের দমনে তাঁদেরই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস দিয়ে নিজেকে প্রায় স্বৈরাচারীর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এজন্য বিরোধী দল এবং সমাজকর্মীদের কাছে অরাজকতার কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে তাঁকে। আইন প্রত্যাহারের জন্য সব থেকে বেশি প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রসমাজ। বিক্ষোভ থামাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক মারধর করেছে পুলিস। যার পরে আরও প্রবল হয়েছে ছাত্রবিক্ষোভ।
আর এসবের মধ্যেই মঙ্গলবার নতুন দশককে বরণ করল দেশবাসী। ঠিক কতটা নতুন জীবনে প্রবেশ করল ভারতবাসী?