উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের উপর চলছে ভয়াবহ নির্যাতন

0
1447
উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের উপর চলছে ভয়াবহ নির্যাতন

মুসলিম-বিরোধী নাগরিকত্ব আইন পাশের পর ভারতের অন্যান্য অনেক এলাকার মতো উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরেও চলছিল বিতর্কিত নাগরিক (সংশোধিত) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে কোশেশ করছিলেন, কিন্তু পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ রূপ নেয় সহিংসতায়। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ টিয়ারস্যালের পাশাপাশি নির্বিচার গুলিও বর্ষণ করতে থাকে।

বিজনৌরের এক মসজিদ থেকে জুমার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরছিলেন সুলেমান নামক এক মুসলিম যুবক। তাঁর পরিবার জানায়, পুলিশি এ সহিংসতা এড়িয়ে সুলেমান ঘরে ফিরতে চাইছিলেন, এরই মধ্যে বিজনৌরের পুলিশ ইনচার্জ আশিস তোমর-সহ কয়েকজন পুলিশ তাঁকে পাশের একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে। গুলির আঘাতে প্রাণ হারান সুলেমান। (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ ডিসেম্বর, ১৯)

সেদিনরই আরেকটি ঘটনা। বিজনৌরের বাসিন্দা মুসলিম যুবক আনাস। তাঁর সাত মাস বয়সী শিশুসন্তানের জন্য দুধ কিনতে বেরিয়ে বিজনৌর পুলিশের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। শিশুসন্তানের জন্য দুধ কিনে বাসায় ফেরা হয়নি তাঁর, ফিরেছেন লাশ হয়ে। আনাসের বাবা আরশাদ হুসেন গণমাধ্যমকে জানান, বিজনৌর পুলিশ তাঁর ছেলেকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ ডিসেম্বর, ১৯)

সুলেমান এবং আনাসকে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করে পুলিশ। পরে কেবল সুলেমান হত্যার দায় তারা স্বীকার করে, কিন্তু আনাস হত্যার বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

চলতি মাসে মুসলিম-বিরোধী নাগরিকত্ব আইন পাশের পর অন্যান্য রাজ্যের মতো উত্তরপ্রদেশও উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে, বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসেন মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় বিক্ষোভ দমাতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ফলে দুই সপ্তাহের বিক্ষোভে অন্তত ২৭ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের বাম সংগঠন সিপিআই লিবারেশন। নিহতদের প্রায় সকলেই মুসলিম।

উত্তরপ্রদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এসে লিবারেশন নেত্রী কবিতা কৃষ্ণন মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু (মুসলিম) মহল্লাগুলোতে অভিযানের নামে পুলিশ ব্যাপক হয়রানি ও নির্যাতন চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে বিক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, বিক্ষোভে ভাঙচুরের সমস্ত ক্ষতিপূরণ বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে উসুল করা হবে। এরই সূত্র ধরে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরাবাদ শহরের ৭০টিরও অধিক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে এক সপ্তাহে রাজ্যের আরও বিভিন্ন শহরে মুসলিম ব্যবসায়ীদের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি নোটিশ জারি করে জানানো হয়, ভাঙচুরের ঘটনাগুলোর দাবিকৃত ক্ষতিপূরণ সরকারকে প্রদান না করলে এ সমস্ত সম্পত্তি সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

ফলে মুসলিম নাগরিকরা ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতিমধ্যে রাজ্যটির বুলন্দশহর এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা উঠিয়ে ৬ লাখ টাকা প্রদান করেছেন রাজ্য সরকারকে।

এদিকে সুলেমান হত্যার দায় রাজ্য পুলিশ স্বীকার করলেও হত্যার সঙ্গে জড়িত ৬ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে নারাজ যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের পেশাগত শিক্ষা ও স্কিল উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল দেব আগরওয়াল বিক্ষোভে হতাহত হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করলেও মুসলিম পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেনি। এমনকি সুলেমান ও আনাসের বাড়িতেও যায়নি। উল্টো সে এ সমস্ত পরিবারকে দাঙ্গাবাজ আখ্যায়িত করে সাংবাদিকদের কাছে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে। বিক্ষোভে নিহতদের উপদ্রুবী আখ্যা দিয়ে সে বলেছে, কেন ওদের বাড়ি যাব! যারা দাঙ্গাহাঙ্গামা করে রাজ্যে ‘লুঠপাট’ চালিয়েছে, তারা মারা গেলেও আমাদের কিছু যায় আসে না।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | ২০১৯ সাল : ফিলিস্তিনী শিশুদের উপর ইহুদীবাদের আক্রোশ!
পরবর্তী নিবন্ধনতুন বছরে মালাউন শাসকদের কবলে কতটা নতুন জীবনে প্রবেশ করল ভারতবাসী?