করোনা পরিস্থিতির কারণে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে জুমা এবং মসজিদে এসে জামাতে নামায আদায়। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত জটিল আকার ধারণ না করলেও সংক্রমণের খবর পাওয়া যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জুমা-জামাত বন্ধ করা হবে কি না-এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠানো হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে জুমা-জামাত স্থগিত করে দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা’র রঈস, মাসিক আল কাউসারের সম্পাদক, বিশিষ্ট ফকীহ মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ। সে আলোচনায় তিনি বলেন-
জুমা এবং জামাতের নামাজ ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয়টিই হল নামাজ। কুরআনে কারিমে শুধু নামাজ আদায় করতে বলা হয়নি, নামাজ কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছে। তাফসিরের বিখ্যাত গ্রন্থসমূহে নামাজ কায়েমের ব্যাখা করা হয়েছে হক আদায় করে জামাতের সাথে নামাজ পড়া। সুতরাং জামাতের নামাজ বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই বলা চলে।
মিডিয়ার অতিরঞ্জনের কারণেই যেন বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে এতোটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বময়। পৃথিবীর অতীত ইতিহাসে এমন মহামারির উপস্থিতি কম নয়। কিন্ত মহামারির কারণে জুমা, জামাত এবং মসজিদ বন্ধ হওয়ার প্রশ্নটি এবারই প্রথম। শরিয়তেও জুমা ও মসজিদ বন্ধ করার ব্যাপারটি সমর্থিত নয়।
এলাকা ভিত্তিক আক্রান্ত ব্যক্তিরা মসজিদে যাবেন না, ঘরেই ব্যক্তিগতভাবে নামাজ আদায় করবেন। প্রয়োজনে তারা হোম কোয়ারিন্টিনে অবস্থান করবেন। আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান এ রকমই। কিন্তু সংক্রমণের অজুহাতে মসজিদ, জুমা, জামাতে নামাজ বন্ধ করাটা যুক্তিনির্ভর হতে পারে না। বাংলাদেশে কল-কারখানাগুলোতে এক সাথে যে পরিমাণ মানুষ কাজ করে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া মানুষের সংখ্যা সে তুলনায় খুব বেশি বলা যায় কি! তাহলে মসজিদে জামাত ও জুমা বন্ধের প্রসঙ্গটা কতটা যৌক্তিক।মসজিদের তুলনায় কল-কারখানাগুলোর প্রতি ফোকাস দেওয়া কি গুরুত্বের দাবি রাখে না!
মহামারির এই সময়ে আল্লাহমুখী হওয়াটা সবার কাম্য। বর্তমানে মানুষের মাঝে মসজিদমুখী হওয়ার প্রবণতাও বেশ লক্ষণীয়। আতঙ্কের এই সময়ে মসজিদমুখী মানুষগুলো যেন আল্লাহ তায়ালার কাছেই মনের প্রশান্তি খুঁজে পেতে চাইছে। ভয় থেকে বাঁচতে আল্লাহ তায়ালার কাছেই আশ্রয় চাইছে। হঠাৎ করে মসজিদ বন্ধ করে দিলে এরা শেষ আশ্রয়টা পাবে কোথায়!
তবে কারো মাঝে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তার মসজিদে যাওয়া তো শরিয়তও সমর্থন করে না। এমন ব্যক্তি ঘরেই জুমার পরিবর্তে যোহর আদায় করবেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলেও মনে হয় না মসজিদ বন্ধ করার মত পরিস্থিতি এসেছে।
জুমার নামাজ, জামাত এবং মসজিদ বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সৌদি আরব আমাদের অনুসরণীয় হতে পারে না। বর্তমান সৌদি সরকার কতটা শরিয়ত বান্ধব এটিও একটি প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।হাদিসে স্পষ্টভাবে আক্রান্ত এলাকার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত এলাকার পরিবর্তে একে বৈশ্বিক রূপ দিয়ে এর কারণে নামাজ, জামাত জুমা বন্ধ করা যৌক্তিক হতে পারে না।