ভারতের হিমাচল প্রদেশে সম্প্রতি দিলশাদ মাহমুদ নামের এক যুবক আত্মহত্যা করেন৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, পরীক্ষা করে এই যুবকের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া না গেলেও সামাজিক চাপে পড়ে এলাকার মানুষের অবজ্ঞা ও হুমকির কারণে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ স্থানীয় মানুষের এমন আচরণের কারণ মার্চে তাবলিগ জামাতের দুই অনুসারীর সঙ্গে দিলশাদ দেখা করেছিলেন৷ তাতে তাদের ধারণা হয়েছিল, দিলশাদও আক্রান্ত এবং তাকে এলাকাবাসীর জন্য হুমকি বলে ভাবছিলেন তারা৷
করোনা ও মুসলিমবিদ্বেষ
মার্চে ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাতের সমাবেশ হয়৷ সেখানে অংশ নেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে বিদেশিও ছিলেন অনেকে৷ এই সমাবেশে অংশ নেয়া কয়েকজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়৷ ফলে ভারতের নিজামুদ্দিনের সমাবেশের পর থেকে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা শুরু হয়৷ এর আগে ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিরোধের মুখে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করে৷ এমনকি তা মুসলিম গণহত্যার রুপ ধারণ করে।
হ্যাশট্যাগ করোনা জিহাদ
টুইটারে সম্প্রতি কয়েকটি হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচুর পোস্ট হচ্ছে৷ এর মধ্যে #CoronaJihad, #BioJihad কিংবা #MuslimMeaningTerrorist এসব সম্বলিত পোস্ট দেখা যাচ্ছে৷ কিছু মানুষ করোনা ভাইরাসকে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াবার উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷
Give Up Your SECULARISM #CoronaJihad pic.twitter.com/cpzKokCI85
— #lockdown Dr Harsh CoronaWale (@RajHarshit1000) April 13, 2020
এ বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিক রানা আইয়ুব একটি টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বের অতি-ডানপন্থি দল ও ওয়েবসাইটগুলো মানুষের ভয় ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুসলিমদের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে৷”
মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন অ্যানালিস্ট প্লাটফর্ম ইকুয়ালিটি ল্যাবের বরাত দিয়ে বলছে, ২৮ মার্চ থেকে প্রথম সপ্তাহেই #CoronaJihad হ্যাশট্যাগটি টুইটারে কমপক্ষে তিন লাখ বার প্রকাশিত হয়েছে এবং কমপক্ষে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ তা দেখেছেন৷
ফেসবুক ও টুইটারে বিদ্বেষমূলক এসব বক্তব্য যারা ছড়াচ্ছেন তাদের বিরাট অংশই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সন্ত্রাসী দল বিজেপির সমর্থক বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে৷ ওয়াশিংটন পোস্টে মন্তব্য প্রতিবেদনে রানা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করে লেখেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এমন একটা বৈশ্বিক সংকটের সময় যখন আমাদের সব হিংসা দূরে রাখা দরকার, তখন আমার দেশ ও আমার নেতারা আমাকে আবারো বাধ্য করছেন মানুষের নৈতিকতাবিবর্জিত অন্ধসংস্কার নিয়ে লিখতে৷”
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রবাসীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান মুসলিম কাউন্সিল (আইএএমসি) গেল শনিবার একটি যৌথবিবৃতি দিয়েছে৷ তারা মুসলিম সংখ্যালঘুদের করোনা সংকটে বলির পাঠা বানানোর নিন্দা জানিয়েছে, বিশেষ করে তাবলিগ জামাতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে৷
ইংল্যান্ড ও অ্যামেরিকাতেও
শুধু ভারতে নয়, ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গেছে৷ গেল কয়েকসপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যে ভুল তথ্য ও প্রচারণা চালাচ্ছে দক্ষিণপন্থিরা৷
হাফিংটন পোস্ট প্রতিবেদন করেছে, সামাজিক গণমাধ্যমে মসজিদ ও বাইরের পুরোনো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে বলা হচ্ছে, মুসলিমরা এখনো জমায়েত হচ্ছে৷ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ছড়ানো এসব ছবির সত্যতা পায়নি পুলিশ ও বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং গ্রুপ৷
এর মধ্যে একটি প্রচারণা ছিল, ‘যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের কেসগুলোর ২৫ ভাগ মুসলিমদের কারণে হয়েছে৷’ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা ‘নিজেদের আলাদা করতে চাননি৷’ ফ্যাক্ট চেকিং প্লাটফর্ম ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ এই পরিসংখ্যানের সত্যতা পায়নি৷
যুক্তরাষ্ট্রেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের রমজানের আগে তুলে নেয়া হবে, অথচ অন্য ধর্মাবলম্বীদের যেমন, খ্রিস্টানদের ইস্টার পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে