সেই মুসলিম নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করলো তাগুত সৌদি বাহিনী!

1
1994
সেই মুসলিম নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করলো তাগুত সৌদি বাহিনী!

লোহিত সাগরে মেগা-প্রকল্পের নামে অশ্লীলতার আড্ডা বসাতে চায় তাগুত আলে সৌদ প্রশাসন। মেগা-প্রকল্পের নামে এই জঘন্য কাজটি করার জন্য যে সম্পত্তি দরকার, তা কেড়ে নিচ্ছে সাধারণ মুসলিমদের কাছ থেকে। আর যারা নিজের সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করছেন, তাদের উপর চলছে তাগুত সৌদি প্রশাসনের নির্মম নির্যাতন। সেই ধারাবাহিকতায় আবদুর রহিম আল-হাওয়াইতি নামে একজন মুসলিমকে আলে-সৌদ তাগুত বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
আল-জাজিরার সূত্রে জানা যায়, আমেরিকার গোলাম সৌদি সরকার আব্দুর রহিম আল-হাওয়াইতি নামক মুসলিম নাগরিককে নিজের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জঘন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু, ঐ মুসলিম নাগরিক নিজের বাড়ি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। আর এতেই মুসলিম ব্যক্তিটির বাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সৌদ পরিবারের গোলাম বাহিনী, নির্মমভাবে শহীদ করে দেয় ঐ মাজলুম মুসলিমকে।

EVgx-Lgh-Xs-AE43-BE
সৌদি বাহিনীর হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ঐ ব্যক্তি শহীদ (ইনশাআল্লাহ) হওয়ার আগে অনলাইনে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আব্দুর রহিম আহমাদ মাহমুদ আল-হাওয়াইতি নামে নিজের পরিচয় দেন। ভিডিওটিতে তিনি বলেন, উত্তর-পশ্চিম লোহিত সাগর অঞ্চলের আল-খ্রাইবাহ এলাকায় তাঁর বসবাস। ঐ এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের পাশাপাশি তাঁকেও নিজ সম্পত্তি সরকারকে দিয়ে দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
আল-হাওয়াইতি ইউটিউবে আপলোড করা ওই ভিডিওতে আরো বলেছেন যে, “কেউ যদি এই অঞ্চল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তাকে সরকারী এজেন্টরা গ্রেপ্তার করে”। তিনি আলে-সৌদ সরকারের এমন পদক্ষেপকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “এটি আমার বাড়ি এবং এ বাড়ি ছেড়ে আমি সৌদি আরবের অন্য কোথাও যাব না। কারণ এটি আমার মাতৃভূমি”
আল-হাওয়াইতি বলেন, এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের পিতৃপুরুষের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে চান না। তবে নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের উপর অত্যাচার চালিয়ে এমনটা করতে বাধ্য করবে—এই আশংকায় তাঁরা এখন ভীত অবস্থায় আছেন।

অন্য একটি ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, “আমার অঞ্চল থেকে এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে পরবর্তীতে আমাকে গ্রেফতার কিংবা হত্যা করা হতে পারে, যেমনটা তারা মিশরে করেছে। আমি নিশ্চিত, যদি তারা আমাকে হত্যা করে তবে হত্যার পর তারা আমার কাছে অস্ত্র রেখে দাবি করবে যে, আমি একজন সন্ত্রাসী ছিলাম!”
আল-হুওয়াইতাত গোত্রের লোকেরা আরো আগে থেকেই ইহুদীদের গোলাম সৌদি সরকারের তথাকথিত মেগা-প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছেন। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁরা সৌদির তাগুত সরকারের মেগা-প্রকল্প নামক শয়তানী প্রকল্পের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করছেন। বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করে তাঁরা বলছেন, “আমরা অন্য কিছু চাই না, কোনো মেগা-প্রকল্প চাই না, আমাদের কেবল এই ভূমি চাই, এই বাড়ি চাই। আমরা এখান থেকে যেতে চাই না।”

আল-হুওয়াইতাত গোত্র ঐ অঞ্চলে ৮০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছেন। বিলাদুল হারামাইন ছাড়াও জর্দান এবং মিশরের সিনাইতেও এ গোত্রের শাখা রয়েছে।

লন্ডন ভিত্তিক সৌদি রাজনৈতিক কর্মী আলিয়া আবুতায়াহ সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের তাবুক শহরের বাসিন্দা।
তিনি আল জাজিরাকে বলেছিলেন যে, তিনি একাধিক ভিডিও পেয়েছেন – যার মধ্যে সাক্ষী স্বরুপ একটি ভিডিও রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আল-হাওয়াইতিকে হত্যা করছে। এটি তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন।

বুতায়াহ বলেছেন, “সৌদি সরকার কোন প্রকল্পের জন্য আমাদের অঞ্চল ও বাসিন্দাদের নিজ ভূমি ও বাড়িঘর থেকে উৎখাত করার কোন অধিকার নেই।” তিনি বলেন, সরকারের বিরোধিতা করার কারণে তাকেও সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী হত্যার হুমকি দেয়।

ইহুদিঘেঁষা সৌদি রাজপুত্র তাগুত মুহাম্মাদ বিন সালমান তাবুক প্রদেশের লোহিত সাগরের তীরবর্তী এ অঞ্চলে “NEOM” নামে একটি মেগা-প্রকল্প করার চিন্তা করছে।
এই প্রকল্পটি আকারে বেলজিয়ামের কাছাকাছি হবে, এটি “পর্যটন, প্রযুক্তি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি” এর কেন্দ্রস্থল হতে চলেছে। সৌদি আরবের তেলভিত্তিক অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য ও সৌদি আরবকে পশ্চিমা রঙঢঙে সাজাতে মুহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ এর অংশ এটি।

NEOM এর ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রকল্পটিতে “শহর-বন্দর, উদ্যোক্তা, গবেষণা কেন্দ্র, খেলাধূলা ও বিনোদন স্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে”।

ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক সৌদি একাডেমিক এবং একজন প্রবীণ সৌদি রয়েল কর্মী হামজাহ আল-কিনানী আল জাজিরাকে বলেন, ” এই অঞ্চলের বাসিন্দারা হয় কারাবরণ করবে নয়তো নিহত হবে, তবুও বাড়িঘর ত্যাগের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করবে না। যেমনটি আব্দুর রহিম আল-হাওয়াইতের ক্ষেত্রে হয়েছে।”

আল-কিনানির মন্তব্যের সাথে একমত হয়ে ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক সৌদি একটিভিস্ট আলী আল আহমাদ বলেছেন, ‘সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আল-হাওয়াইতিকে হত্যা করেছে এই খবরে আমি অবাক হয়নি,কারণ এই বর্বর বাহিনীর জন্য এই কাজ করা অসম্ভব নয়।’

ইনস্টিটিউট অফ গাল্ফ অ্যাফেয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আল-আহমদ বলেছেন, ‘সৌদি সরকার দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষত এর পূর্ব প্রদেশেও একই ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

তিনি বলেন “সৌদি সরকার ২০১৭ সালে পূর্ব কাতিফ প্রদেশের আওয়ামিয়া শহরের একটি আবাসিক অঞ্চলেও অনেক ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও বাড়িঘর এবং ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংস করেছে, যাতে মেগা-প্রকল্পটা সম্প্রসারণ করতে পারে। এই মেগাপ্রকল্প রাজ্যের কেবল কিছু লোককে ধনী বানাবে, আর বঞ্চিত হবে জনসাধারণ।”

 

 

১টি মন্তব্য

Leave a Reply to Mohammad প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতীয় মালাউন সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতে করোনার দায় চাপানো হচ্ছে মুসলিমদের উপর
পরবর্তী নিবন্ধভারতে করোনায় নৌবাহিনীর ২১ সদস্যসহ আক্রান্ত ৯৯২, আরও ৪৩ জনের মৃত্যু,