সুপেয় পানির তীব্র সংকটে উপজেলা জুড়ে হাহাকার

0
652
সুপেয় পানির তীব্র সংকটে উপজেলা জুড়ে হাহাকার

একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে রমজান মাস সমাগত। এই অবস্থায় বাগেরহাটের শরণখোলায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির (সুপেয়) তীব্র সংকট। এলাকার পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুকুরে বসানো পানি ফিল্টারিংয়ের বেশিরভাগ পিএসএফ অকেঁজো। কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পিএসএফ স্বচল থাকলেও করোনার ভয়ে অবাধে পানি নেওয়া সীমিত করা হয়েছে। তাছাড়া, উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় নলকুপের পানি লবণাক্ত হওয়ায় কারণে সুপেয় পানির অভাবে উপজেলা জুড়েই হাহাকার পড়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে খাবার পানির সংকটের কথা জানা গেছে। যেসব পুকরে পিএসএফ স্বচল রয়েছে, সেখানে দিনরাত নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন থাকে। করোনার ভয় উপক্ষো করে জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে পানির জন্য যেখানে ফিল্টার আছে সেখানে ছুঁটছে মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এক কলস পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। খবরঃ কালের কন্ঠ

আজ বুধবার সরেজমিনে উপজেলা সদরের আর.কে.ডি.এস বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ফিল্টারের পাশে সারি সারি কলস সাজানো। নারী-পুরুষরা অপেক্ষায় রয়েছে এক কলস পানির জন্য। সেখানে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের উত্তর কদমতলা গ্রাম থেকে পানি নিতে আসেন শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫)। তিনি জানান, তাদের গ্রামে কোথাও একফোটা খাবার পানি নেই। আগে গ্রামের পুকুরের পানি ফুটিয়ে এবং ফিটকিরি দিয়ে খেতেন। কিন্তু এখন সেসব পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই এখানে এসেছেন পানি নিতে। সামনে রমজান মাস। এই সময় ঘরে খাবার পানি না থাকলে মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।

রায়েন্দা বাজারের পূর্ব মাথার ঋষিপাড়ার নিতাই ঋষির স্ত্রী ঝর্ণা রাণী জানান, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন পানির জন্য। করোনার কারণে ঘর থেকে বের হতেই ভয় লাগে। তার পরও পানির জন্য না এসে উপায় নেই।

রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান জানান, তার ওয়ার্ডের ৫টি গ্রামের প্রায় সাত হাজার লোক বাস করে। গ্রামের সমস্ত পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির জন্য মানুষ হাহাকার করছে। তাছাড়া সিডরের পর বিভিন্ন পিএসএফগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তার ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোলার পাড় সামছুল উলুম কওমি মাদরাসা, উল্টার পাড়ের মোমিন গাজী বাড়ি এবং আমতলী গ্রামের স্বপন চৌকিদারের বাড়ির এই তিনটি পিএসএফ স্বচল আছে। তা দিয়ে এলাকার এতো জনগোষ্ঠীর চাহিদা পুরণ করা সম্ভব না। ভোলার পাড়ের মজিদ গাজীর বাড়ি জেলা পরিষদের পুকুরটি পুনঃখনন করা হলে পানির সমস্যা অনেকটা দূর হতো।

ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান স্বপন জানান, তার বাড়ির পাশে নবী হোসেন হাওলাদারের বাড়ির পিএসএফে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষের ভিড় পড়ে যায়। ওই ইউনিয়নে সরকারি ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে মাত্র ১০-১২টি পিএসএফ চালু আছে। সবগুলোতেই এভাবে মানুষেল ঢল নামে। করোনার এই মুহূর্তে এক জায়গায় এতো মানুষের সমাগম হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রমজান মাসের জন্য সরকারিভাবে ভ্রাম্যমাণ খাবার পানি সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর শরণখোলায় চরমভাবে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়। ওই সময় সিডর বিধ্বস্ত এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পানি সংকট নিরসণে প্রায় দুই হাজার পন্ড । সেসব পিএসএফ ব্যক্তি মালিকানা ছোট ছোট পুকুরে বসানোর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় তার অধিকাংশই ভেঙে ফেলা হয়।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯২ বছরের বৃদ্ধার ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে…
পরবর্তী নিবন্ধপশ্চিম তীরে ইহুদীবাদী ইসরাইলের গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শহীদ