পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এই বিক্ষোভ সহিংসতা ও অরাজকতায় রূপ নিয়েছে। ফ্লোরিডা, আটলান্টা, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পাশাপাশি হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে দোকান, শপিংমল ও এটিএম বুথে। এর মধ্যে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেয়াপোলিসে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টও। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় গতকাল রবিবার মিনিয়াপোলিস, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসসহ অনেকগুলো শহরে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসব বিক্ষোভের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কয়েকটি শহর কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে। আন্দোলন থামাতে সরকার প্রয়োজনে দেশজুড়ে সেনাবাহিনী নামাতেও প্রস্তুত বলে টুইট করেছেন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জাল নোট রাখার অভিযোগে আটকের পর গত ২৫ মে মিনেয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় মারা যান ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান যুবক জর্জ ফ্লয়েড। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, আটকের সময় হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরে আছেন ডেরেক চউভিন নামে এক শেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। সে সময় ফ্লয়েড বারবারই বলছিলেন যে, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। একপর্যায়ে ফ্লয়েড মারা যায়। ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মিনেয়াপোলিসের কৃষ্ণাঙ্গরা। তারা দাবি করেন, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। ঘটনার জন্য এরই মধ্যে ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা চউভিনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং আজ সোমবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও।
সিএনএন জানায়, বিক্ষোভ ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলস, লস অ্যাঞ্জেলেস, কলোরাডোর ডেনভার, ফ্লোরিডার মায়ামি, জর্জিয়ার আটলান্টা, ইলিনইসের শিকাগো, কেনটাকির লৌইসিভিল, মিনেয়াপোলিস, সেন্ট পল, ওহিওর সিনসিনাটি, ক্লেভারল্যান্ড, কলোম্বাস, ডায়টন, টলেডো, ওরিগন ইউজিন, পোর্টল্যান্ড, পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, পিটসবার্গ, টেনেসির ন্যাশভিল, উথার সল্টলেক সিটি, ওয়াশিংটনের সিটেল, উইসকোনসিনের মিলওয়াউকি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তার পরও এসব শহরে কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ হয়েছে। এমনিতেই করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তার মধ্যেই স্বাস্থ্য সতর্কতা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন, যাদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
বিক্ষোভের খবর সংগ্রহের সময় মিনেয়াপোলিস, ওয়াশিংটন ডিসি, লাস ভেগাসসহ আরও অনেক শহরে বেশ কয়েক জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত ও গ্রেপ্তারের শিকার হন। গত শুক্রবার খবর সংগ্রহের সময় মিনেয়াপোলিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সিএনএনের এক সাংবাদিককে। ছবি তোলার সময় লাস ভেগাসে গেপ্তার হয়েছেন সংবাদপত্রের দুই ফটোগ্রাফার।
সূত্র: আমাদের সময়