মালির সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে মুজাহিদগণের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা হলো

3
6332
মালির সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে মুজাহিদগণের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা হলো

ফুলানি এবং ডগন; দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত মালির এ দুটি সম্প্রদায়। গত বছর ফুলানি সম্প্রদায়ের উপর এক নির্মম গণহত্যার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ফুলানি সম্প্রদায়ের শতাধিক আদিবাসী মুসলিম এ হামলায় নিহত হন। এভাবে জমি ও পানির দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই লড়াইয়ে কয়েকশত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
২০১৯ সালের ১৬ই মে মালিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা (!) মিশন জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে মপটি ও সেগুর কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলোতে ফুলানি সম্প্রদায়ের উপর হামলায় নিহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৪৮৮জন। বিপরীতে সশস্ত্র ফুলানিবাসীদের হামলায় একই সময়ে নিহত হয়েছে ৬৩ জন। [১]
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে ফরাসী দখলদারদের দালাল মালির প্রশাসন; বরং তারাই ফুলানি সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যা চালাতে ডগন সম্প্রদায়কে সাহায্য করেছে, উস্কানি দিয়েছে বলে শক্ত অভিযোগ আছে। এমনকি গত বছরের মার্চ মাসে ফুলানি আদিবাসী মুসলিমদের উপর যে গণহত্যা চালানো হয়, তা সরকারি বাহিনীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে বলে অভিযোগ ফুলানিবাসীদের। কিন্তু সরকারি বাহিনী এ হামলার জন্য দায়ী করেছে ডগন সম্প্রদায়কে, অথচ ডগন সম্প্রদায় আবার বলেছে তারা এ হামলা করেনি। [২]
এভাবে সরকারি বাহিনী সম্প্রদায় দুটির মধ্যে সংঘাত না থামিয়ে উল্টো উস্কে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। একইভাবে এই সংঘাত থামাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার নামে সাধারণত দুর্বল সম্প্রদায়ের নারীদেরকে ধর্ষণের মিশনে মনোযোগ দিয়ে থাকে। মালির ঐ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘাতেও তাদের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, ফুলানি ও ডগন সম্প্রদায়ের নেতারা মনে করেন বিদেশী দখলদার শক্তিগুলো তাদের দেশে থেকে সুবিধা ভোগ করছে। এই বিদেশী দখলদাররাই নিজেদের লাভের জন্য দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত উস্কে দিচ্ছে।
ডগন সম্প্রদায়ের নেতা বলেন, মালির অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ফ্রান্স তার স্বার্থোদ্ধার করছে। তারা পুনরায় মালিকে তাদের উপনিবেশ বানাতে চায়।
অপরদিকে ফুলানি সম্প্রদায়ের নেতা বলেন, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মালিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে এখানে অর্থ ব্যয় করছে। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে একা ছেড়ে দিন, সাহেলিয়ানদের মাঝে ছেড়ে দিন। আমরা পরস্পর ভাই-ভাই। আমরা শত শত বছর একসাথে থেকেছি। আমাদের মধ্যকার সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করার পদ্ধতি আমাদের জানা আছে। আমাদেরকে যদি একা ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিজেদের মধ্যকার এই সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারবো। [২]
এভাবে দুটি সম্প্রদায়ই বিদেশী শক্তিকে নিজেদের মধ্যকার সংঘাতের প্রধানতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তিগুলো নিজেদেরকে ত্রাণকর্তা, শান্তিরক্ষী বাহিনী ইত্যাদি নামে অভিহিত করে থাকে। তারা যে পৃথিবীজুড়ে কেমন শান্তিরক্ষা করছে, তা মালির ঐ দুটি সম্প্রদায়ের নেতার বক্তব্য থেকেই কিছুটা আঁচ করা যায়। তারা শান্তিরক্ষার আড়ালে মূলত স্থানীয় জনসাধারণের উপর বর্বর আগ্রাসন চালায়।
অপরদিকে, এই কুফরি শক্তিগুলো মুজাহিদগণের নামে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে থাকে। মুজাহিদগণকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘জঙ্গী’, ‘উগ্র’ ইত্যাদি আখ্যায়িত করে জনসাধারণের সামনে খারাপভাবে উপস্থাপন করে। অথচ প্রতিটি ভূমিতে মুজাহিদগণ ইসলামের মহান শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপন করার চেষ্টায় আছেন, যার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো মালির যুদ্ধরত সম্প্রদায় দুটির মাঝে সংঘাত নিরসনে নেওয়া কার্যকর পদক্ষেপ।
যেখানে মালির সরকারসহ জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষী বাহিনীও ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে আল-কায়েদার পশ্চিম আফ্রিকান শাখা জামাআত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিনের মুজাহিদিন মালির ফুলানি ও ডগন সম্প্রদায়কে শান্তি আলোচনায় বসাতে সক্ষম হয়েছেন। গত জুলাই মাস থেকে যুদ্ধরত সম্প্রদায় দুটির মাঝে শান্তি স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছিলেন আল-কায়েদার মুজাহিদগণ। মপটি অঞ্চলের গ্রামবাসীরা যেন নিরাপদে বাজারে, খেত-খামারে যেতে পারেন এবং তাদের কাজকর্ম করতে পারেন, সর্বোপরি অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই আল-কায়েদার মুজাহিদগণের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসে ফুলানি ও ডগন সম্প্রদায়। [৩]
এভাবে সরকার, দখলদার ফরাসী লুটেরা বাহিনী ও কথিত শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যরা যেখানে শান্তি রক্ষা না করে উল্টো সংঘাত উস্কে দিচ্ছে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে; সেখানে আল-কায়েদার মুজাহিদগণ শান্তি বজায় রাখার কাজ করে যাচ্ছেন, জালিমদের কবল থেকে উদ্ধার করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে মানুষকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। মানুষও নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে মুজাহিদগণের শরনাপন্ন হচ্ছেন। আর মুজাহিদগণ ইসলামী শরীয়াহমতে বিচারকার্য পরিচালনা করে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দিচ্ছেন, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখছেন।

রেফারেন্স:
[১] https://www.globalsecurity.org/military/world/war/fulani-dogon.htm
[২] https://www.bbc.com/news/world-africa-47694445
[৩] https://www.aljazeera.com/programmes/talktojazeera/inthefield/2019/08/mali-crisis-fight-dogon-fulani-190822125317990.html
[৪] https://www.reuters.com/article/us-africa-islamists-mali-insight/where-state-is-weak-mali-militants-broker-talks-between-rival-clans-idUSKBN25O0LA


লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দি, নির্বাহী সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ

3 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধনরসিংদীতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় দুই ভাইকে কুপিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই