তাঁর পূর্ণ নাম খালিদ বিন ওয়ালিদ বিন মুগিরা। তাঁর বংশধারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সপ্তম পুরুষ মুররাহ ইবনে কাব ইবনে লুআই এর সাথে মিলে যায়। তাঁর গোত্রের নাম বনু মাখজূম। এটি কুরাইশের একটি শাখা গোত্র। জাহেলি যুগে গোত্রটি অত্যন্ত মর্যাদাবান বিবেচিত হতো।
গোত্রটি আর্থিকভাবে ছিল যথেষ্ট স্বচ্ছল। কুরায়েশের সাথে তাদের বহু বৈবাহিক সম্পর্কও ছিল। বনু মাখজূমের অনেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের শুরুলগ্নে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের একজন হলেন হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুল আসাদ। প্রথমবার যাঁরা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন, হযরত আবু সালামা ছিলেন তাঁদের একজন। আরকাম ইবনে আবুল আরকামও ছিলেন বনু মাখজূম গোত্রের। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের শুরুলগ্নে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর বাড়ি দারুল আরকাম ছিল ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা।
খালিদ বিন ওয়ালিদের ভাই-বোন ছিল আটজন; ছয় ভাই ও দুই বোন।
তাঁর পিতার নাম অব্দে শামস ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা আল মাখজূমী। তিনি ছিলেন কুরাইশের সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি । জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার ব্যাপক খ্যাতি ছিল। তিনি ধনী ছিলেন। তার বেশ কয়েকটি বাগান ছিল। তার বাগানে বারো মাস ফল থাকত।
খালিদ বিন ওয়ালিদ সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের মাঝে বেড়ে ওঠেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানদের রীতিমাফিক তিনিও অশ্বারোহণে পারদর্শিতা অর্জন করেন। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতা ও রণকৌশলে তিনি সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে যান। যুদ্ধের ময়দানে তাঁর সক্ষমতা এমনভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, তাঁর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হওয়ার বিষয়টি ছিল সর্বজনস্বীকৃত।
প্রাথমিকভাবে তিনি ছিলেন ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো সুযোগই তিনি হাতছাড়া হতে দিতেন না। মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে তিনি জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করেন। ওহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের পক্ষে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। ওহুদ যুদ্ধে মুসলিম তীরন্দাজদের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের বিপরীতে নির্দেশিত স্থান ত্যাগ করে গনিমতের মাল সংগ্রহে ছুটে যান। ঠিক সেই মুহূর্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন দিক থেকে মুসলিমদের উপর প্রচণ্ড হামলা চালান। মুসলিম বাহিনী বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। ফলে মুশরিকদের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পরও তারা পুনরায় যুদ্ধে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
খন্দকের যুদ্ধে কুরায়েশের কয়েকজন সাহসী যোদ্ধা মুসলমানদের উপর হামলার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োজিত ছিল। তারা হামলার জন্য উপযুক্ত দুর্বলতম স্থানের তালাশে পরিখার আশপাশে ঘোরাঘুরি করত। এ কাজে যারা নিয়োজিত ছিল হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন তাদের অন্যতম। মুশরিকরা হামলা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর যখন পরাজিত হয়ে পলায়ন করছিল তখন তাদেরকে অতর্কিত যেকোনো হামলা থেকে রক্ষার জন্য হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ সতর্কতার সাথে বাহিনীর পেছনে পেছনে চলছিলেন।
হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বোঝাপড়ার জন্য এবং মুসলিমদের মক্কায় প্রবেশ রোধ করার জন্য হযরত খালিদ দুইশত অশ্বারোহী নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক হুদাইবিয়া সন্ধির মধ্য দিয়ে উক্ত টানাপোড়েনের ইতি ঘটে।
হযরত খালিদ ইসলাম ও মুসলিমদের কতটা ঘৃণা করতেন, তাঁর একটি আচরণ থেকে তা অনুমান করা যায়। উমরাতুল কাযার জন্য মুসলিমরা মক্কায় প্রবেশের সময় হযরত খালিদ কয়েকদিনের জন্য মক্কা ত্যাগ করেন। কারণ মুসলিমদের মক্কায় প্রবেশের দৃশ্য তিনি নিজ চোখে দেখে সহ্য করতে পারবেন না।
হযরত খালিদ অষ্টম হিজরীর সফর মাসে (জুলাই ৬২৯ইং) ইসলাম গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি ঘটে মক্কা বিজয়ের 6 মাস এবং মুতার যুদ্ধের দুই মাস পূর্বে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইসলাম গ্রহণে অনেক আনন্দিত হন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হিজরত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আসার পর তিনি বলেছিলেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাকে হেদায়েত দান করেছেন। তোমার মাঝে যে পরিমাণ বিবেচনা শক্তি ছিল তাতে আমি আশা করছিলাম যে, তোমার বিবেক অবশ্যই তোমাকে কল্যাণের দিকে পরিচালিত করবে। হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণে মুসলিমগণও আনন্দিত হয়েছেন। কারণ আল্লাহ তাআলা ইসলামের মাধ্যমে তাঁকে মর্যাদাবান করেছেন এবং মুসলিম বাহিনীকে শক্তিশালী করেছেন।
তথ্যসূত্র:
উজামা ফিল ইসলাম
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]
ভাই ফেসবুক শেয়ার হয়না
আলহামদুলিল্লাহ । চালিয়ে যান হে প্রিয় আখি ………সাথে আছি