বসনিয়া বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, বসনিয়া যুদ্ধের বিভীষিকা ও ভয়ংকর সেই দিনগুলোর কথা। যখন ইসলাম নির্মূলের প্রয়াসে বসনিয়া জুড়ে ক্রুসেডার রাষ্ট্রদ্বয় কর্তৃক চালানো হয়েছিল নগ্ন আগ্রাসন।
বসনিয়া যুদ্ধ, ৬ এপ্রিল ১৯৯২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সাল। এবছরগুলোতে গ্রীস ও অন্যান্য ক্রুসেড রাষ্ট্রের মদদে সার্ব-ক্রোয়েশিয়ান সৈন্যরা বসনিয়ায় শতশত মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করে। সে যুদ্ধে ক্রুসেডাররা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়ার অন্তত ৬১৪ টি মসজিদ, ২১৮ টি নামাজ কক্ষ ও ৬৯ টি মাদ্রাসা ধ্বংস করে।
যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে গত ৭ই মে বসনিয়া জুড়ে পালিত হয় ঐতিহাসিক মসজিদ দিবস।
৯০ এর দশকে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বলকান অঞ্চলের দেশটি প্রতিবেশী ক্রুসেডার রাষ্ট্রের আক্রোশে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়। যুদ্ধে দুই লক্ষাধিক মুসলিম নিহত হয় আর শরণার্থী হয় প্রায় বিশ লাখ মুসলিম।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও এবং জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতিতেই সেব্রেনিৎসায় চালানো হয় নারকীয় গণহত্যা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংগঠিত এটিই বৃহত্তম গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। যেখানে ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে সেব্রেনিৎসা শহরে চালানো গণহত্যার মাধ্যমে প্রায় ৮৩৭২ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়।
দিবসটি ১৬শ শতকে উসমানী খেলাফতকালে নির্মিতব্য সার্বিয়ার বানিয়া লুকা শহরের বিখ্যাত ফরহাদিয়া মসজিদটি সার্বিয়ান সৈন্য কর্তৃক ধ্বংসের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইউরোপে মুসলিম স্থাপত্যকলার নিদর্শন ও দেশটির ইসলামী সংষ্কৃতির প্রতীক মসজিদটি ১৯৯৩ সালের মে মাসে ডিনামাইটের সাহায্যে ব্যপকভাবে ক্ষতিসাধন করা হয়।
বসনিয়ান ইসলামিক ইউনিয়ন মতে, দেশটির ইসলামী ঐতিহ্য মুছে দিতে ৬১৪ টি মসজিদ, ২১৮ টি নামাজ কক্ষ, ৬৯ টি মাদ্রাসা, ৪ টি দরবেশ লজ, ৩৭ টি কবরস্থান ও ইসলামী নিদর্শনের প্রতীক ৪০৫ টি মুসলিম স্থাপনা ধ্বংস করা হয়। যাদের মধ্যে সার্বিয়ান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সৈন্যদের দ্বারা ৫৩৪ টি মসজিদ ও ক্রোয়েশিয়ান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সৈন্যদের দ্বারা ৮০ টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়।
যুদ্ধকালীন সময়ের মুসলিম অধ্যুষিত সার্বিয়ার ৮০% মসজিদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শতশত ইমাম সার্বিয়ান ও ক্রোয়েশিয়ান বাহিনীর হাতে নিহত হন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বসনিয়ায় বর্তমানে ১৯১২ টি মসজিদ বিদ্যমান। ক্ষতিগ্রস্ত ৭৮৯ টি মসজিদ ও নামাজ কক্ষ মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের লক্ষে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। এবং সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ৮৯ টি ইবাদতখানা পুনঃনির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ধ্বংসের ১৫ বছর পর ২০১৬ সালের ৭ই মে বিখ্যাত ফরহাদিয়া মসজিদ মুসল্লীদের জন্য পুনরায় চালু করা হয়।
মসজিদটি উসমানীয় শাসক ও বসনিয়ার শেষ সুলতান ফরহাদ পাশা ১৫৭৯ সালে নির্মাণ করেন, যা ইউরোপ ভূখন্ডে উসমানী সাম্রাজ্যের ইসলামী স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন।
বসনিয়ান ইসলামিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০০১ সালে মসজিদগুলোর পুনঃনির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়, কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতায় দরুন প্রকল্পগুলো মাঝপথেই থমকে যায়।