নাঈম ইসলাম তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ইমু আক্তারকে নিয়ে যাবেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাগঞ্জ এলাকায়। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। কিন্তু কোনো বাস পাননি। পরে সকাল সাড়ে নয়টায় একটি মাইক্রোবাসে দুই হাজার টাকা দিয়ে দুজনে রওনা হন।
ইমু আক্তার আক্তার বলেন, তাঁরা গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি ও তাঁর স্বামী ছুটি পেয়েছেন। তাই কষ্ট ও বেশি খরচ হলেও বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজ রোববার সকাল থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে পিকআপ, মাইক্রোবাস আর মোটরসাইকেল। অতিরিক্ত ভাড়ায় এসব বাহনের চালকেরা যাত্রীদের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন।
কারখানা শ্রমিক নাইম আর ইমু আক্তারের মতো আরও বহু মানুষ আছেন, যাঁরা বাড়ি ফেরার জন্য মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানের চালকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষি করছেন। তবে কারখানার শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই হচ্ছে লকডাউনের সময় আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজ না থাকায় বাড়ি ফিরে যেতে চাইছেন তাঁরা। যাঁরাই ছোট ছোট পরিবহনে যাচ্ছেন, তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম ঢাকার দোহারে ফার্নিচারের দোকানে কাজ কাজ করেন। তিনি দোহার থেকে অটোরিকশায় এসেছেন নবাবগঞ্জ, এরপর নবাবগঞ্জ থেকে সিএনজিতে এসেছেন হেমায়েতপুর। এরপর হেমায়েতপুর থেকে লোকাল বাসে চন্দ্রা ত্রিমোড় এসেছেন। তিনি চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে সকাল সাড়ে আটটায় একটি পিকআপে উঠে রওনা দেন নাটোরের সিংড়া এলাকায়। পিকআপে ভাড়া নিয়েছে ৮০০ টাকা।
ঘোড়াশাল থেকে বিভিন্নভাবে চন্দ্রা এসেছেন মো. হালিম। যাবেন সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়া। কেন বাড়ি যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো কাম নাই, তাই বাইত (বাড়ি) যাব। হেনে (এখানে) থ্যাইকা কী করব। তার থ্যাইকা বাড়িত যাইগা।’ কীভাবে যাবেন, গাড়ি তো চলছে না—এর জবাবে তিনি বলেন, ‘দরকার অইলে হাঁইট্টা যামু, তাও বাড়িত যামু।’
চন্দ্রা ত্রিমোড়ে অর্ধশতাধিক মোটরবাইক দেখা গেছে, এগুলো যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। তবে মোটরবাইকগুলোর অধিকাংশই যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় পর্যন্ত। এর জন্য জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন।
মাইক্রোবাসের চালক রফিকুল ইসলামের বলেছেন, ‘চন্দ্রা মোড়ে কয়েক রকমের পুলিশ থাকে। সবাই আলাদা আলাদা ঘুষ চায়। তার মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ বেশি বিরক্ত করে। এখানে যাতে যাত্রী ওঠাতে পারি, তার জন্য হাইওয়ে পুলিশকে এক হাজার টাকা দিয়েছি। সকালে এখানে ২০ থেকে ২৫টি মাইক্রোবাস জমা হয়েছে। সবাইকে কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। যার কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’ প্রথম আলো
হে আল্লাহ! এই উম্মাহকে জাগ্রত করে দিন। জুলুমের বিরুদ্ধে শক্ত পায়ে দাঁড়াবার তাওফীক দিন।