ভারতের হাশিমপুর-মালিয়ানায় মালাউন পুলিশ কর্তৃক মুসলিম গণহত্যাঃ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম এক অধ্যায়

2
1804
ভারতের হাশিমপুর-মালিয়ানায় মালাউন পুলিশ কর্তৃক মুসলিম গণহত্যাঃ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম এক অধ্যায়

হিন্দুত্ববাদী ভারত পরিকল্পিতভাবে কতো মুসলিমকে হত্যা করেছে তার হিসাব ভারতীয় প্রশাসন কর্তৃক মুসলিম গণহত্যাগুলোর পর্যালোচনা করলে কিছুটা ধারণা করা যায়।

গত ২২, মে, উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত প্রাদেশিক পুলিশ কর্তৃক মিরাটের মালিয়ানা ও হাশিমপুর গণহত্যার ৩৪ বছর পূর্ণ হলো, যেখানে ১২০ এরও অধিক মুসলিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কমপক্ষে ১২ এর অধিক মুসলিমকে মীরাট ও ফতেহগড় জেলে বন্দী রেখে মালাউন পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছিল, গণহত্যার তিন দশক পরেও যার এখনো কোন বিচার হয়নি।

১৯৮৭ সালের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের যে ঘটনাগুলো ভয়াবহ মিরাট দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল, সেগুলো নিম্নরুপঃ

IMG-20210524-222422-071

১৯৮৭ সালের ১৪ই এপ্রিল যখন নওচন্ডি মেলা পুরোদমে জমে উঠেছিল, তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। আর সেই দাঙ্গা প্রশাসনিকভাবে মুসলিম গণহত্যার সুযোগ সৃষ্টি করে।

জানা যায়, কর্তব্যরত এক পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর একজন পটকাবাজের সাথে ধাক্কা খাওয়ায়, মাতাল অবস্থায় সে গুলি চালিয়ে দুইজন মুসলিমকে হত্যা করে।

একই দিনে আরো একটি ঘটনা ঘটে। মুসলিমরা রমজান মাসের শেষ জুমায় হাশিমপুর ক্রসিংয়ে একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছিল যা পূর্ব শাইখলালে হিন্দু পরিবার কর্তৃক আয়োজিত মুন্ডন অনুষ্ঠানের নিকটেই ছিল। হিন্দুদের উচ্চ শব্দে চলচ্চিত্রের গান বাজানোয় মুসলিমদের ওয়াজে বিঘ্ন ঘটে। ফলে কিছু মুসলিম গান বাজানোর আপত্তি করলে হিন্দুদের সাথে ঝগড়া লেগে যায়।

উগ্র হিন্দুরা ক্ষিপ্ত হয়ে মুসলিমদের উপর প্রথমে গুলি চালায়। প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মুসলিমরা কয়েকটি হিন্দু দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশাসন কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তখনো উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছিল, যার ফলে মিরাটে তিন মাসব্যাপী একযোগে দাঙ্গা শুরু হয়।

ভারতীয় সরকারি হিসাব অনুযায়ী মিরাট দাঙ্গায় ১৭৪ লোক মারা যায়। ১৭১ জন আহত হয়। আসলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি, ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক।
বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাসব্যাপী মিরাটের দাঙ্গায় প্রকৃতপক্ষে ৩৫০ জন লোক মারা যান এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়।

IMG-20210524-222356-418

১৯৮৭ সালের ১৭ ই মে দাঙ্গাটি নাটকীয়ভাবে হাশিমপুর ও মালিয়ানা গণহত্যায় মোড় নেয়। পরবর্তী দিনগুলোতে দাঙ্গাটি হাপুর রোড , পিলোখেরি ও অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ শে মে পুরো মিরাট শহরে কারফিউ জারি করা হয়। প্রায় ৬০ হাজার চৌকস পুলিশ ও ১১টি কোম্পানির সামরিক বাহিনী শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়।

IMG-20210524-222353-251

২২ মে, ১৯৮৭ আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত মালাউন সৈন্যরা মুসলিম হত্যার মিশন শুরু করে। এদিন ভারতীয় সামরিক বাহিনী হাশিমপুরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বড় আকারের ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং ২৩ শে মে মালিয়ানায় মুসলিমদের উপর নারকীয় গণহত্যায় অগ্রসর হয়।

IMG-20210524-222410-553

হাশিমপুর গণহত্যা সেক্যুলার ভারতের পুলিশি প্রহরায় ইতিহাসের অন্যতম ন্যাক্যারজনক মুসলিম গণহত্যা হিসেবে বিবেচ্য, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম লজ্জাজনক গণহত্যাও বটে!

২২, মে,১৯৮৭ হাশিমপুরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কড়া মোতায়েন ছিল। তারা প্রত্যেক মুসলিমদের বাড়ি কঠোরভাবে তল্লাশি চালায়। পুলিশ সকল মুসলিমদের জোড়পূর্বক বাড়ি থেকে বের করে এলাকার প্রধান সড়কে যেতে বাধ্য করে।

IMG-20210524-222406-005

মুসলিমদেরকে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে প্রায় ৫০ জন মুসলিমকে পুলিশের একটি ট্রাকে তোলা হয়। ৩২৪ জন মুসলিমকে পুলিশের আরেকটি গাড়িতে চাপানো হয়।
পুলিশ হাশিমপুরের বাসিন্দাদের সাথে যেরুপ আচরণ করেছে তা খুবই নির্মম ও ন্যাক্যারজনক। পুলিশ ৫০ বছরের অধিক বয়সী মুসলিম ও ১২ বছরের কমবয়সী শিশুদের প্রথমে আলাদা করে বাকিদের ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় ৪২ জন মুসলিমের মধ্যে মাত্র ৬ জনের সন্ধান জানা গেছে, বাকীদের পরিণতি কেউ জানে না।

IMG-20210524-222400-818

গ্রেফতারকৃতদের ট্রাকে করে মুরাদনগর নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাক যখন গঙ্গার খালে পৌছে তখন পুলিশ মুসলিমদের গুলি করে লাশগুলো খালে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে বিশের অধিক মুসলিমদের লাশ ভাসমান অবস্থায় খালে পাওয়া গিয়েছে।

IMG-20210524-222407-888

হাশিমপুর থেকে গ্রেফতারকৃত অন্যান্য মুসলিম যুবকদের মালাউন পুলিশ হত্যা করে লাশগুলো দিল্লী-উত্তর প্রদেশ সীমান্তবর্তী হিনদন নদীতে ফেলে দেয়।

IMG-20210524-222403-755
IMG-20210524-222417-709
IMG-20210524-222420-527
IMG-20210524-222358-463
IMG-20210524-222413-677
IMG-20210524-222415-866
IMG-20210524-222354-485
IMG-20210524-222411-882

2 মন্তব্যসমূহ

  1. আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।
    মালাউনরা তখন হয়তো শত শত মুসলিম দের নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।কিন্তু এখন তাদের কি অবস্তা।
    ন্যায় বিচারক মহান আল্লাহ তায়ালা সব কিছুরই পাই টু পাই হিসাব নিবেন আর তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবেন ইনশাল্লাহ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্পর্ক উন্নয়নে পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধআল-শাবাবের সাফল্য রুখতে সোমালিয়ায় বিশেষ বাহিনী পাঠাবে যুক্তরাজ্য