আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলমান জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধের কার্যত কোন লক্ষণ বিদ্যমান নেই। যতই দিন যাচ্ছে মৃত্যুহার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক রোহিঙ্গা অধিকার সংরক্ষণকারী সংস্থা “বার্মিজ রোহিঙ্গা অরগানাইজেশন ইউকে” কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন জানায়,জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত মায়ানমার প্রশাসনকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপত্তা দানের আদেশ করার পরও মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন বন্ধের কার্যত কোনো লক্ষণই নেই।”
গত ২৪ মে সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের শুরু থেকে ৯ জন দুগ্ধপানকারী ও অবুজ শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ রোহিঙ্গা মুসলিম মায়ানমারের কঠোর দমন নিপীড়ন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা গেছে।
কীভাবে মায়ানমার তার দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রতিরোধ করছে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মায়ানমারের দাখিল করা কাকতালীয় রিপোর্টও প্রতিবেদনে তুলে ধারা হয়।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতে করা গাম্বিয়ার রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক আদালত একটি আদেশ জারি করে, যার কারণে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমার প্রশাসনকে রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রতিরোধে তার দেশের গৃহীত সমসাময়িক প্রতিবেদনটি গত ২৩ শে মে’র মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জমা দেয়ার কথা ছিল।
কানাডা ভিত্তিক অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সীর মতে,”২০১৭ সালের ২৫ শে আগষ্ট থেকে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর দ্বারা প্রায় ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে, যেখানে ৩৪ হাজারেরও অধিক মুসলিমকে হত্যা করতে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল; ১ লক্ষ ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে, ১৮ হাজার নারী ও কন্যা শিশুকে বর্বরভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে আর কমপক্ষে ১ লক্ষ ১৫ হাজার মুসলিম ঘরবাড়ি আগুনে বিনষ্ট করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মামলায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি অং সান সুচিকে সামরিক শাসকরা গৃহবন্দী করে বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
বেসামরিক ও মিলিটারি শাসকদের অধীনে রোহিঙ্গাদের প্রতি দীর্ঘদিন অবহেলার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শাসকদের আইন ও নীতিগুলি রোহিঙ্গাদের আরাকান রাজ্যে একটি উন্মুক্ত কারাগারে বন্দী করে রেখেছিল, যেখানে তাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান ও রাষ্ট্রের অন্যত্র চলাচলের স্বাধীনতা বঞ্চিত করে রাখা হয়।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, মায়ানমারের বর্তমান সামরিক অভ্যুত্থানের পূর্বেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলমান জাতিগত নির্মূল বন্ধে তেমন কোন অর্থবহ পদক্ষেপ প্রশাসন নেয়নি।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অবশ্যই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন প্রতিশ্রুতিগুলো কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। বর্হিঃবিশ্বের সম্প্রদায়গুলোকে নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি পূরণে আন্তর্জাতিক আদালতকে রাজনৈতিক ও বাস্তবিকভাবে পরিপূর্ণ সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।