পরাজিত মানসিকতা:বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

    0
    1598
    পরাজিত মানসিকতা:বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

    জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা লাভের অন্যতম উপায় হলো, পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে উচ্চ মনোবলের অধিকারী হওয়া। বাস্তব ময়দানে ততক্ষণ পর্যন্ত বিজয় অর্জন করা সম্ভব হবে না যতক্ষণ না মনোজগতকে বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করা হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হাতেগোনা অল্প কয়েকজন সাহাবীদের (রাঃ) হাতে কাফের মুশরিকদের বিশাল বিশাল বাহিনীর পরাজিত হবার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীর বুকে। এজন্য ধাপে ধাপে তাঁদের মনোবলে শান দিতে হয়েছিল। যখনই সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) মাঝে হতাশা দানা বেঁধেছে তখনই তাঁদের মনোবলে শান দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো বিজয়ের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে।

    আমরা অতি সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি ।

    ১. তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি ছিলো দুটি দেশ; রোম ও পারস্য। রোমকরা ছিলো আহলে কিতাব তথা খ্রিষ্টান। আর পারসিকরা ছিলো মুশরিক তথা প্রতিমাপূজক। তাদের মাঝে সর্বদা যুদ্ধ লেগেই থাকত। এদিকে পারসিকদের বিজয়ে আনন্দিত হতো মক্কার মুশরিক গোষ্ঠী। আর রোমকদের বিজয় আনন্দ দিতো মক্কার মুসলিমদের! এরই মধ্যে এক যুদ্ধে রোমকদের উপর পারসিকরা বিজয়ী হলে মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় অনেক খুশী হয়। অপর দিকে মুসলিমরা হয় মর্মাহত। তখন মুসলিমদেরকে সান্ত্বনা দিতে আল্লাহ তা’আলা সূরা রূম অবতীর্ণ করেন! সেখানে তিনি বলেন:

    ﴿الۤمۤ, غُلِبَتِ ٱلرُّومُ ٢, فِیۤ أَدۡنَى ٱلۡأَرۡضِ وَهُم مِّنۢ بَعۡدِ غَلَبِهِمۡ سَیَغۡلِبُونَ ٣,،فِی بِضۡعِ سِنِینَۗ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡرُ مِن قَبۡلُ وَمِنۢ بَعۡدُۚ وَیَوۡمَىِٕذࣲ یَفۡرَحُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٤. بِنَصۡرِ ٱللَّهِۚ یَنصُرُ مَن یَشَاۤءُۖ وَهُوَ ٱلۡعَزِیزُ ٱلرَّحِیمُ ٥﴾ [الروم ١-٥]

    ‘রোমকরা তাদের নিকটবর্তী এলাকায় পরাজিত হয়েছে। তাদের এই পরাজয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তারা নিশ্চয়ই বিজয় লাভ করবে। অগ্র-পশ্চাতের সকল কাজ আল্লাহ তায়ালার হাতেই! আল্লাহর সাহায্য পেয়ে সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সাহায্য করেন। তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু! [সূরা রূম, ৩০:-১-৫]

    ২. যে আল্লাহ তায়ালা কাওমে লূতের মত বিশাল এক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের ৬০০ পাখার মধ্য থেকে শুধুমাত্র একটি পাখাকে ব্যবহার করেছেন, সেই আল্লাহ তায়ালাই বদরের যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) সাহায্য করতে আসমান থেকে পাঁচ হাজার ফেরেশতার এক বিশাল বাহিনী অবতীর্ণ করেছেন।

    নিঃসন্দেহে সাহাবায়ে কেরামের মনোবল বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যেই তিনি পাঁচ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে তা স্পষ্ট করে বলেও দিয়েছেন তিনি-

    وَمَا جَعَلَہُ اللّٰہُ اِلَّا بُشۡرٰی لَکُمۡ وَلِتَطۡمَئِنَّ قُلُوۡبُکُمۡ بِہٖ ؕ  وَمَا النَّصۡرُ اِلَّا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَکِیۡمِ ۙ

    ‘আর আল্লাহ তো তোমাদেরকে সুসংবাদ দান করলেন মাত্র,যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে!আর সাহায্য তো আসে কেবল পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে’। [সূরা আলে ইমরান,৩:১২৬]

    ৩. উহুদের যুদ্ধে মুসলিমগণ সাময়িকভাবে পরাজয় বরণ করেছিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তখনও আল্লাহ তায়ালা তাঁদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য আয়াত নাজিল করেছেন-

    وَلَا تَہِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ

    ‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে’। [সূরা আলে-ইমরান,৩:১৩৯]

    ৪. খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করতে করতে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) যখন ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন, ক্ষুধার তাড়নায় তারা পেটে পাথর বেঁধেছিলেন, তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি করলেন। তাঁদেরকে বিশ্বজয়ের সুসংবাদ শোনালেন-

    إنَّ اللَّهَ زَوى لي الأرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشارِقَها ومَغارِبَها، وإنَّ أُمَّتي سَيَبْلُغُ مُلْكُها ما زُوِيَ لي مِنْها

    ‘আল্লাহ তায়ালা গোটা পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করে আমার সামনে রেখে দিলেন। আমি এর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করলাম। পৃথিবীর যে অংশটুকু গুটিয়ে আমার সামনে রাখা হয়েছিল, সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌঁছে যাবে। [সহীহ মুসলিম-২৮৮৯]

    এভাবে প্রতিটি ধাপে ধাপে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ﷺ সাহাবায়ে কেরামের মনোজগতকে বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন। তাঁদের মন-মস্তিষ্ক থেকে পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে তাদেরকে উঁচু মনোবলের অধিকারী করেছেন। যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন রণাঙ্গনে, সাহাবায়ে কেরামের অবিশ্বাস্য বিজয় অর্জনের মাধ্যমে।

    আজকাল অনেক মুসলিম ভাইকেই বলতে শোনা যায়, বর্তমানে আমেরিকা,রাশিয়া,ফ্রান্স, ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া আত্মহত্যার শামিল। কারণ তারা হলো, বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি। তাদের আছে পারমাণবিক অস্ত্র। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কী দিয়ে যুদ্ধ করব?
    অনেক আলেমকেও এমন কথা বলতে শুনা যায় যে, বর্তমানে কাফেরদের বিরুদ্ধে সরাসরি ময়দানে যুদ্ধ করা মুসলমিদের উপর আবশ্যক নয়। কারণ, তাদের কাছে আধুনিক প্রযুক্তি আছে। আছে পারমাণবিক শক্তি। আরো আছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। এর মোকাবিলায় আমাদের কাছে কিছুই নেই। আর আল্লাহ তায়ালা তো কুরআনে বলেই দিয়েছেন-

    لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَہَا 

    ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার চাপিয়ে দেন না’। [সূরা আল বাকারা,২:২৮৬]
    সুতরাং, এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের উপর আবশ্যক নয়। বরং আমাদের দায়িত্ব হলো, শুধু দাওয়াত দেওয়া এবং দু’আ করা।

    প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে এ ধরণের পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে।এই বিশ্বাসকে আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে নিতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিজয়ের জন্যই প্রস্তুত করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-

    هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ

    ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে স্বীয় রাসূল প্রেরণ করেছেন। যেন এই দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে’। [সূরা আত তাওবাহ,৯:৩৩]

    এটাই রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য! দ্বীনে ইসলামকে অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা রাসূল পাঠিয়েছেন। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে রাসূল ﷺ মৌলিকভাবে দুটি পদ্ধতিতে মেহনত করেছেন।

    ১. তিনি নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। তাওহীদে উলূহিয়্যার প্রচার করেছেন। তাওহীদের প্রশ্নে আপোষহীন হয়েছেন। এটা ছিলো মাক্কী জীবনের আমল।

    ২. মদীনায় হিজরতের পর তিনি তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী তরবারি হাতে নিয়েছেন।
    তাওহীদের দাওয়াত এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী তরবারি, এই দুয়ের সমন্বয়ে অল্প সময়ের মাথায় জাযীরাতুল আরবের চিত্রে আমূল-পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

    রাসূলের ﷺ পরিপূর্ণ অনুসরণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। তাওহীদের দাওয়াত এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী তরবারি নিয়ে পৃথিবীর দিকে দিকে ঘোড়া ছুটিয়েছেন। ফলে তৎকালীন বিশ্বের সকল পরাশক্তি তাঁদের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। রোম-পারস্যের শাহী মসনদ ভেঙে চুরমার হয়েছে।

     সুতরাং, আমরা যদি এই সত্য দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকি, এবং রাসূলের ﷺ প্রকৃত উম্মত হয়ে থাকি, দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলের ﷺ দেখানো পদ্ধতির পরিপূর্ণ অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের ভেঙে পড়ার কিছুই নেই! বাহ্যিকভাবে কুফর যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, তাদের কাছে যত পারমাণবিক অস্ত্রই থাকুক না কেনো, চূড়ান্ত বিজয় আমাদেরই হবে! সাহাবায়ে কেরামের কাছে যদি তৎকালীন পরাশক্তি রোম ও পারস্য পরাজিত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের হাতেও বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি আমেরিকা, ফ্রান্স, চীন, ভারত ও রাশিয়া পরাজিত হবে।
    এটাই আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা! আর তিনি কখনোই ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।

    আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, আমরা বহু আগ থেকেই কাফেরদের মানসিক দাসত্ব মেনে নিয়েছি। মানসিক দাসত্বের বেড়াজালে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে ফেলেছি। আমরা ভেবেছি, ওদের গোলামী করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। গোলামীর এ জিঞ্জির ভেঙে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হিম্মত আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দীর্ঘকাল যাবৎ মুসলিম উম্মাহর এই লাঞ্ছনার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী! এই দায় অন্য কারো নয়! পরাজিত মানসিকতার এই বিষ ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
    মুসলিম উম্মাহ যেদিন থেকে এই পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হবে সেদিন থেকেই কুফফার গোষ্ঠীর পরাজয়ের ধারা নতুন করে শুরু হবে। এই সত্য তারা অনেক আগ থেকেই বুঝতে পেরেছে। এবং তাদের কলঙ্কিত ইতিহাস থেকেও এই সত্য তারা অনুধাবন করেছে৷ আর এ জন্যই মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধির প্রতিটি পথ তারা রুদ্ধ করে রেখেছে৷

    ৯/১১ এর বরকতময় হামলার পর অনেক মুসলিমই বুঝে গিয়েছিলেন, আমেরিকা পরাশক্তি নয়! আমেরিকা অপরাজেয় নয়! আমেরিকার পতনও সম্ভব। তখন মুসলিমরা পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে দলে দলে ছুটেছিলেন জিহাদের ময়দানে।

    তাই কুফফার বিশ্ব তাদের আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে ৯/১১ এর আক্রমণ ও এর পেছনের মহান উদ্দেশ্যকে মুসলিমদের সামনে বিকৃত রূপে উপস্থাপন করেছে। মহান বিজয়ের এই নব সূচনাকে তারা উপস্থাপন করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধ আর সন্ত্রাস হিসেবে । তাদের শেখানো এই মন্ত্র আমাদের কিছু মুসলিম ভাইও আত্মস্থ করে নিয়ে এই হামলাকে ইহুদীদের পরিকল্পনার ফল মনে করা শুরু করেন এবং এতে অনেক শান্তিপ্রিয় মুসলিমও আবার সন্তুষ্ট হয়েছেন এই ভেবে যে, মুসলিমরা তাহলে সন্ত্রাসী নয়! অথচ এর পিছনে ওদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, মুসলমানদের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। তাদেরকে পরাজিত মানসিকতায় ডুবিয়ে রাখা।

    কুফফার গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে জিহাদী ময়দানের প্রকৃত অবস্থা আড়াল করছে। গুটি কয়েকজন মুজাহিদের কাছে তাদের আধুনিক অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও যে কচুকাটা হচ্ছে-এই সত্য তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রকৃত অবস্থাকে বিকৃত করে বিশ্বের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যাতে বিশ্বের বুকে তাদের মোড়লগিরী টিকে থাকে। এবং মুজাহিদদের ব্যপারে মুসলমানদের অন্তরে অনাস্থা সৃষ্টি হয়।

    এ কাজটিও তারা এ জন্যই করছে যেন, মুজাহিদদের বিজয়াভিযান দেখে মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধি না পায়। তারা চায় মুসলিমরা এভাবেই তাদের মানসিক দাসত্ব করতে থাকুক! এবং তাদের মোড়লগিরী টিকে থাকুক! কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সত্য প্রকাশিত করেছেন। শত চেষ্টার পরও তারা আফগানের বিজয়কে বিশ্বের সামনে থেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। আফগানের বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপকারগুলির একটি হবে এই যে- তারা পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে উচ্চ মনোবলের অধিকারী হতে পারবে, ইনশা আল্লাহ।

    মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিলো, মুসলিম বীরদের ইতিহাস অধ্যয়ন করা। আমাদের সোনালী ইতিহাস থেকে আমাদের অস্তিত্বকে খুঁজে বের করা। বিশ্বের বুকে আমরা পরাশক্তি ছিলাম। আমাদের বিজয়াভিযান ছিলো অপ্রতিরোধ্য। আমাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এমন কোনো শক্তি ছিলো না পৃথিবীর বুকে। আমাদের এই গর্বিত ইতিহাস অধ্যয়ন করে কেউ যেন উচ্চ মনোবলের অধিকারী না হতে পারে সে উদ্দেশ্যে আমাদের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টাও তারা করেছে। মুসান্না ইবনে হারেসা,মূসা ইবনে নুসাইর,রুকনোদ্দীন বাইবার্স, ইউসুফ বিন তাশফীন এবং ইমাম শামেলির মত বীরদের, ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেছে।

    কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য। তিনি এই সত্য দ্বীনকে পৃথিবীর প্রতিটি কাঁচাপাকা ঘরে পৌঁছে দিবেন। তাঁর প্রিয় হাবীবের জবান দিয়ে তিনি উচ্চারণ করিয়েছেন-

    لَيَبْلُغَنَّ هذا الأمرُ ما بلَغَ اللَّيلُ والنَّهارُ، ولا يَترُكُ اللهُ بَيتَ مَدَرٍ ولا وَبَرٍ إلّا أَدخَلَه اللهُ هذا الدِّينَ.

    ‘পৃথিবীর যেখানেই দিন ও রাত আসে সেখানেই ইসলাম পৌঁছে যাবে। প্রতিটি কাঁচাপাকা ঘরেই আল্লাহ তায়ালা এই সত্য দ্বীনকে পৌঁছে দিবেন।[১]

    আর এ জন্যই কাফের মুশরিকদের শত চেষ্টার পরও উম্মাহর সিংহরা ঠিকই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে!
    পরাজিত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে হারানো নেতৃত্ব, সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পৃথিবীর বুক চষে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে আত্মবিস্মৃত এই উম্মাহকে অনবরত ডেকে যাচ্ছে বিজয় ও সফলতার পথে। আফগান-সোমালিয়া,ইয়েমেন-সিরিয়া,কাশ্মীর ও মালিসহ পৃথিবীর দিকে দিকে সিংহরা জেগে ওঠেছে। শতাব্দীকালব্যাপী সয়ে যাওয়া জুলুম নির্যাতনের হিসেব চুকিয়ে, তারা এগিয়ে চলেছে বিশ্বজয়ের পথে। ইনশাআল্লাহ, আগামী বিশ্ব হবে ইসলামী বিশ্ব। আগামী দিনের শাসন হবে কুরআনের শাসন! ইনশা আল্লাহ!

    রেফারেন্স:
    [১] মুসনাদে আহমাদ। হাদীস নং-১৬৯৫৭/মুসতাদরাকে হাকিম. হাদীস নং-৮৩২৬। হাদীসের সনদটি মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।


    লেখক: মাওলানা আব্দুল্লাহ মুনতাসির হাফিজাহুল্লাহ

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধসেনা-গেরিলা ভয়াবহ সংঘর্ষ; মিয়ানমারের থান্টলাং শহর ছেড়ে পালিয়েছে হাজারো মানুষ
    পরবর্তী নিবন্ধবাদগিস প্রদেশে তালেবানের সমর্থনে বোরকা পরে মিছিল করলেন আফগান নারীরা