একমাত্র ইসলাম’ই পারে নারীকে প্রকৃত অধিকার এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিতে

    1
    1182
    একমাত্র ইসলাম’ই পারে নারীকে প্রকৃত অধিকার এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিতে

    সম্প্রতি তালিবানের ক্ষমতা গ্রহণকে কেন্দ্র করে নারীবাদ ইস্যুটি নতুন করে আলোচনার টেবিলে এসেছে। পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশী-বিদেশী একটি কুচক্রী মহল বেশ সরব হয়ে উঠেছে নারীবাদের মিষ্টি শ্লোগানে। বিশ্ব মঞ্চে তালিবানের সরকারকে কলুষিত করার অপচেষ্টায়, তারা বেছে নিয়েছে নারীবাদ ইস্যুটি। ইসলামে নারীর কোনো অধিকার নেই, ইসলাম নারীকে ঘরে বন্দি করেছে, পৈতৃক সম্পত্তির  ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে- এ জাতীয় ভূয়া কিছু দাবী নিয়ে চলছে তাদের মিছিল-মিটিং।

    তাই আজকে আমরা দেখার চেষ্টা করবো যে, ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে নারীদের অবস্থা কেমন ছিলো? এবং ইসলাম নারীকে কতটা সম্মানিত করেছে?

    প্রিয় পাঠক! মানবজাতি সহ প্রাণীকুলকে আল্লাহ তা’আলা দুটি’ শ্রেণীতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের পূর্ব সময়টাতে বিশ্বব্যাপী যখন জাহালাত ছড়িয়ে পড়েছিলো, তখন সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার ছিলো নারীজাতি।  তারা ছিলো নিতান্তই ভোগের বস্তু। জীবিত পুঁতে ফেলা হতো কন্যা সন্তানদের। স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি ছিলো না নারীদের। সংগ্রাম মুখর জীবনের অবশিষ্ট দিন গুলো তাকে একা একাই পার করতে হতো।  কারো কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার উপর নেমে আসতো তিরস্কার-ভর্ৎসনার ভয়াবহ ঝড়। প্রচণ্ড লজ্জায় তাদের মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করতো। নিন্দার ভয়ে আপন সম্প্রদায়ের লোকদের থেকে লুকিয়ে বেড়াতে হতো তাদের। সম্মান বাঁচাতে আপন জীবিত কন্যাসন্তানকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলাকেই শ্রেয়তর মনে করতো। নিজেদের জীবিত কন্যা সন্তানদের যারা মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে পারতো, তৎকালীন জাহেলী সমাজ তাদেরকেই সম্মানের চোখে দেখতো। আল্লাহ তা’আলা কত সুন্দর করেই না তুলে ধরেছেন এই বাস্তবতা!

    وَاِذَا بُشِّرَ اَحَدُہُمۡ بِالۡاُنۡثٰی ظَلَّ وَجۡہُہٗ مُسۡوَدًّا وَّہُوَ کَظِیۡمٌ ۚ یَتَوَارٰی مِنَ الۡقَوۡمِ مِنۡ سُوۡٓءِ مَا بُشِّرَ بِہٖ ؕ اَیُمۡسِکُہٗ عَلٰی ہُوۡنٍ اَمۡ یَدُسُّہٗ فِی التُّرَابِ ؕ اَلَا سَآءَ مَا یَحۡکُمُوۡنَ

    যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।

    তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবতে থাকে, অপমান সহ্য করে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে, না তাকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।

    (সূরা আন নাহল-৫৮-৫৯)

    শুধু যে আরবের চিত্রই এরকম ছিলো, তা না; বরং ঐতিহাসিকদের মতে রোম-পারস্যসহ তৎকালীন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নারীদের এ জাতীয় জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে জীবন-যাপন করতে হতো। নারীজাতিও তা নিজেদের জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলো। সারা বিশ্বের অবস্থাই যেহেতু অভিন্ন ছিলো তাই এর থেকে পরিত্রাণের চিন্তা করাটাও ছিলো বোকামী। যে সময় নারীদের লুণ্ঠিত অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার চিন্তাও কেউ করতো না, তাদের পক্ষে কোনো মিছিল-মিটিং হতো না, কোনো আন্দোলন হতো না, তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলা তো দূরে থাক, সমাজে নারীদের কোনো অধিকার থাকতে পারে তা স্বীকার করতেও কেউ প্রস্তুত ছিলো না, সে সময়েই আবির্ভাব ঘটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। যুগের সকল পরাশক্তিকে উপেক্ষা করে মানব রচিত এসকল মানবতা বিরোধী বৈষম্যমূলক নিয়ম-নীতির ভিত্তিমূলে আঘাত হানেন তিনি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা এসব বিধি-বিধান এক এক করে উপড়ে ফেলে, নারীজাতিকে ফিরিয়ে দেন তাদের আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণ অধিকার।

    কুরআন, হাদীস ও ইতিহাসের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত।

    আমরা সংক্ষেপে কয়েকটি তুলে ধরছি।

    ১. যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা জীবিত কন্যাসন্তান পুঁতে ফেলার এই অনৈতিক আইনের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়:

    وَاِذَا الۡمَوۡءٗدَۃُ سُئِلَتۡ ۪ۙ بِاَیِّ ذَنۡۢبٍ قُتِلَتۡ ۚ

    আর যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,

    কোন অপরাধে তাকে হত্য করা হল?(সূরা আত-তাকওয়ীর, ৮-৯)

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

     مَن كانَ لَهُ ثلاثُ بَناتٍ فصبَرَ عليهنَّ، وأطعمَهُنَّ، وسقاهنَّ، وَكَساهنَّ من جِدتِهِ كنَّ لَهُ حجابًا منَ النّارِ يومَ القيامةِ

    ، وأحمد (١٧٤٠٣)  •  شرح رواية أخرى

    কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করলে, যথাসাধ্য পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়ে লালন পালন করলে, এই কন্যাসন্তানরা-ই  কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম থেকে অন্তরায় হবে।

    (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৬৬৯/মুসনাদে আহমাদ-১৭৪০৩)

    এর মাধ্যমে জীবিত কন্যাসন্তান পুঁতে ফেলার এই ঘৃণ্য প্রথার অবসান ঘটে। এবং আরবের লোকেরা তাদের কন্যাদের উত্তম রূপে প্রতিপালন করতে থাকে।

    ২. নিজ দাসীদের দ্বারা পতিতাবৃত্তি করিয়ে টাকা উপার্জন করার প্রচলন ছিলো জাহেলী যুগে। অবলা নারীদের আর্তনাদ পাষাণ মনিবদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্রও দয়ার উদ্রেক করতো না।

    কুরআন এই বর্বর নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে।

    ইরশাদ হয়েছে:

     وَلَا تُکۡرِہُوۡا فَتَیٰتِکُمۡ عَلَی الۡبِغَآءِ اِنۡ اَرَدۡنَ تَحَصُّنًا لِّتَبۡتَغُوۡا عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَمَنۡ یُّکۡرِہۡہُّنَّ فَاِنَّ اللّٰہَ مِنۡۢ بَعۡدِ اِکۡرَاہِہِنَّ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

     তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের নশ্বর সম্পদের লালসায় তাদেরকে বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করো না। যদি কেউ তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করে, তাহলে  জোর-জবরদস্তির শিকার দাসীদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৩)

    ৩. জাহেলী যুগে একজন পুরুষ যতজনকে খুশী বিবাহ করতে পারতো। এবং যতবার ইচ্ছা তালাকও দিতে পারতো। এ ক্ষেত্রে পুরুষ পূর্ণ স্বাধীন ছিলো।  অনেকেই নারীদেরকে সাংসারিক কলহের জের ধরে অনৈতিক শাস্তি প্রদানের হীন মানসে তালাক দিতো, কিন্তু পূর্ণরূপে ছেড়েও দিতো না। আবার স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তার সাথে সংসারও করতো না। বরং তালাক দিতো এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে আবার ফিরিয়ে নিতো৷ এভাবেই চলতো বছরের পর বছর।

    এর বিপরীতে ইসলাম চারটা বিবাহ এবং তিনবারের তালাক বিধিবদ্ধ করে দেয়।

    পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

    وَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تُقۡسِطُوۡا فِی الۡیَتٰمٰی فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَثُلٰثَ وَرُبٰعَ ۚ

    আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। (সূরা আন নিসা-৩)

    তালাকের বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে:

    اَلطَّلَاقُ مَرَّتٰنِ ۪ فَاِمۡسَاکٌۢ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ تَسۡرِیۡحٌۢ بِاِحۡسَانٍ ؕ

    তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত। তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় ন্যায়সঙ্গতভাবে ছেড়ে দিবে।(সূরা আল বাকারা-২২৯),

    এরপরের আয়াতেই আল্লাহ তা’আলা সর্বোচ্চ তালাকের সংখ্যা বলে দিয়েছেন:

    فَاِنۡ طَلَّقَہَا فَلَا تَحِلُّ لَہٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡکِحَ زَوۡجًا غَیۡرَہٗ ؕ

    অতপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী অন্য কোন স্বামীর সঙ্গে বিয়ে না করা পর্যন্ত, প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। (সূরা আল বাকারা-২৩০)

    এমন চূড়ান্ত জাহেলি যুগে ইসলাম এসে নারীদের পূর্ণ অধিকার প্রদান করেছে। সমাজে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

    ৪. জাহেলী যুগে পিতার সম্পত্তিতে মেয়েদের কোনো অংশ ছিলো না। কিন্তু ইসলাম ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদেরকেও পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিযুক্ত করেছে। মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্বভার পর্যায়ক্রমে স্বামী এবং সন্তানদের যিম্মায় থাকা সত্ত্বেও মৃতের ছেলে থাকলে পিতার সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ মেয়েরা পাবে। আর ছেলে না থেকে মেয়ে একজন থাকলে পুরো সম্পত্তির অর্ধেকই পাবে মেয়ে৷ আর মেয়ে একাধিক থাকলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ। এটাই শরীয়তের বিধান।

    কুরআন বর্ণনা করছে:

    یُوۡصِیۡکُمُ اللّٰہُ فِیۡۤ اَوۡلَادِکُمۡ ٭ لِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ۚ فَاِنۡ کُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَہُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَکَ ۚ وَاِنۡ کَانَتۡ وَاحِدَۃً فَلَہَا النِّصۡفُ ؕ

    আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’ এর অধিক, তবে তাদের জন্য পরিত্যক্ত মালের তিন ভাগের দুই ভাগ,  আর যদি নারী একজনই হয়, তবে তার জন্য পূর্ণ সম্পত্তির অর্ধেক। (সূরা আন নিসা-১১)

    সুবহানাল্লাহ! এরচেয়ে সুষম বণ্টননীতি আর কী হতে পারে? কিন্তু বর্তমানের তাগুতী রাষ্ট্রব্যবস্থা এই কুরআনী বণ্টননীতি অগ্রাহ্য করে পিতার সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের সমান ভাগ দিয়েছে।

     وَمَنۡ اَحۡسَنُ مِنَ اللّٰہِ حُکۡمًا لِّقَوۡمٍ یُّوۡقِنُوۡنَ .

     বিশ্বাসীদের জন্য বিধান দানে আল্লাহ অপেক্ষা আর কে শ্রেষ্ঠতর? (সূরা মায়িদাহ-৫০)

    ৫. জাহেলী যুগে স্ত্রীর উপর চালানো হতো অকথ্য জুলুম-নির্যাতন। স্বামীর সংসার করতো ঠিক, কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা খুব নারীদের ভাগ্যেই জুটতো।

    ইসলাম এই বিষয়টির প্রতিও অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছে। স্ত্রীর সাথে অমানবিক আচরণ না করতে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্যবার স্বামীকে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে৷

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা নিজেই বলেছেন:

    وَعَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۚ فَاِنۡ کَرِہۡتُمُوۡہُنَّ فَعَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَہُوۡا شَیۡئًا وَّیَجۡعَلَ اللّٰہُ فِیۡہِ خَیۡرًا کَثِیۡرًا

     নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তা’আলা প্রভূত কল্যাণ রেখে দিয়েছেন। (সূরা আন নিসা-১৯)

    ৬. বিধবা মহিলাকে বিবাহ না করার যে কুপ্রথা প্রচলিত ছিলো জাহেলী যুগে, তা ভেঙে দিতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই দশজন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেছেন। এবং কুরআনের সূরা বাকারার ২৩৪ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

    وَالَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَیَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِہِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡہُرٍ وَّعَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِہِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

     আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। তারপর যখন ইদ্দত শেষ হবে, তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে ন্যায় সঙ্গত কোনো ব্যবস্থা নিলে (অর্থাৎ, কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে, তোমাদের)কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহ তা’আলা সম্যক অবগত।

    এছাড়াও সবসময় নারীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

     «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»

     তোমরা নারীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ গ্রহণ করো! কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে, আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ গ্রহণ করো!  (সহিহ বুখারী-৩৩৩১)

    নারীজাতিকে ইসলাম দিয়েছে মাতৃত্বের মর্যাদা। পৃথিবীতে উত্তম আচরণের সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত হলো, মা। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:

    جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ ‏”‏ أُمُّكَ ‏”‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏”‏ أُمُّكَ ‏”‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏”‏ أُمُّكَ ‏”‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏”‏ ثُمَّ أَبُوكَ ‏”‏‏.‏

    এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার অধিক হকদার কে?

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

    তোমার মা, লোকটি বললো, তারপর কে?

    রাসূল বললেন, তোমার মা।

    লোকটি বললো, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করলো, এরপর কে? তিনি বললেন: তোমার বাবা।

    (সহীহ বুখারী- ৫৯৭১, সহীহ মুসলিম-২৫৪৮)

    পৃথিবীতে যতদিন পর্যন্ত ইসলামী শাসনের বাস্তবায়ন ছিল, ততদিন পর্যন্ত উম্মাহর নারীরা ইসলাম প্রদত্ত এই সম্মান-মর্যাদা নিয়েই বেঁচে ছিলেন। সমগ্র বিশ্বের কোথাও কোনো মুসলিম নারী ধর্ষণের শিকার হবে বা কাফেরদের হাতে বন্দী হবে- তা ছিলো সহ্যের বাইরে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মত পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী একজন শাসকও হিন্দুস্তানে বন্দী এক আরব নারীর আর্তনাদে সাড়া দিয়ে তিন তিনবার বাহিনী প্রেরণ করেছেন হিন্দুস্তানে। অবশেষে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের মাধ্যমে হিন্দুস্তান জয় করে সেই মুসলিম নারীকে মুক্ত করেছেন।

    আব্বাসীয় খলিফাহ মু’আতাসিম বিল্লাহ একজন মাত্র মুসলিম বন্দীনির আর্তনাদে সাড়া দিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত অজেয়-খ্যাত আমুরিয়া দুর্গ বিজয় করেছেন। একজন মুসলিম নারীর আর্তনাদের দাম কত বেশি তা দেখিয়ে দিয়েছেন মু’আতাসিম বিল্লাহ।

    প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

    সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত নারীজাতিকে ইসলাম সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে স্থান দিয়েছে। মনুষ্য জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিলো না যে জাতির, ইসলাম তাকে দিয়েছে স্ত্রীর মর্যাদা। বসিয়েছে মাতৃত্বের গৌরবান্বিত আসনে। সর্বোপরি জাহেলিয়াতের নির্মম হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষা করে তাদের বেঁচে থাকার নিরাপত্তাও দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বের সেই জাহেলিয়াত আধুনিকতার রূপ নিয়ে ফিরে এসেছে বর্তমান বিশ্বে। নব্য জাহিলিয়্যাতের এ যুগে, যুগের আবু জাহেল, উতবা, শাইবারা ইসলাম প্রদত্ত নারী জাতির আকাশচুম্বী এ সম্মান সহ্য করতে পারেনি। তারা চায় জাহেলী যুগে নারীরা যেমন শুধু ভোগ-বিলাসের বস্তু ছিলো এখনো নারীরা তাই থাকুক। এই নব্য জাহেলরা নারীকে তার নিরাপদ আশ্রয় থেকে টেনে-হেঁচড়ে রাস্তায় নামিয়েছে। সম অধিকারের প্রলোভন দেখিয়ে অফিস-আদালতের কর্মী বানিয়েছে। দেহ সর্বস্ব করে রিসিপশনের চেয়ারে বসিয়েছে। বিজ্ঞাপনের মডেল বানিয়েছে। ফলে জাহেলী যুগের মতই নারীরা অনবরত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ভোগের পণ্য হচ্ছে। এই ধিক্কৃত জীবন ব্যাবস্থাকেই সে আধুনিকতা মনে করছে।

    প্রিয় বোনেরা আমার!

    ইসলাম আপনাকে কতটা সম্মানিত করেছে তা একবার ভেবে দেখুন! পরিবারে বাবা, ভাইয়ের নিরাপত্তায় থাকবেন, এরপরে স্বামীর চোখের প্রশান্তি হয়ে বার্ধক্যে যাবেন এবং ছেলে-মেয়েদের মমতার আধার, মা হয়ে মৃত্যু বরণ করবেন- এরচেয়ে বেশি সম্মান আর কী হতে পারে?

    অফিস-আদালতে চাকরী করা, রাস্তাঘাটে কাজ করা এবং গাড়ী ড্রাইভিং করার চেয়ে ঘরের চার দেওয়ালের ভেতরে জীবন-যাপন করা কি আপনার জন্য বেশি সম্মানের নয়?

    যে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে আপনারা সম অধিকার মনে করছেন তাদের দেশের নারীদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন তো! যে ইউরোপ অ্যামেরিকা আপনাদের সম অধিকারের প্রলোভন দেখাচ্ছে তাদের দেশেই নারীরা প্রতি মিনিটে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। পারিবারিক জীবনের স্বাদ হারিয়ে ফেলেছে। শারীরিক গঠনে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করতে হচ্ছে। গর্ভধারণ করেও অফিস করতে হচ্ছে। যৌবনের দিনগুলোতে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলো কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।

    এই কি তাহলে সমান অধিকার? ধিক, শত ধিক, মানব রচিত এসকল অনৈতিক নারী-অধিকারের প্রতি! ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার আবারো ফিরে আসবে ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আর সেই মহৎ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে তালিবান। অনাগত দিন গুলোতে একজন মুসলিম নারীর আর্তনাদেও জেগে উঠবে বিশ্বের সকল মুসলিম, ইনশাআল্লাহ!


    লেখক: মাওলানা আব্দুল্লাহ মুনতাসির হাফিজাহুল্লাহ

    ১টি মন্তব্য

    Leave a Reply to আকিল প্রতিউত্তর বাতিল করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধপশ্চিম তীরে অবৈধভাবে বস্তি স্থাপনের চেষ্টা ইসরায়েলের, ফিলিস্তিনিদের বাধা
    পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের উখিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত