মানবরচিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে যে পরিমাণ সহিংসতা হয়, তা সারা বছরে সংঘটিত মোট সহিংসতাকেও হার মানায়। এ যেন নির্বাচন নয়, রক্তের হুলিখোলা শুরু হয়।
কিছুদিন ধরে শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চলছে বিরতিহীনভাবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, আহত নিহত, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে দেশবাসী দ্বিবাস্বপ্ন দেখেছিল, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে হয়ত অপ্রীতিকর ঘটনা তেমন ঘটবে না। কিন্তু তা যে অসম্ভব সেটাই বাস্তবে লক্ষ করা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটছে।
গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চলে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক হামলা-সংঘর্ষ-গোলাগুলি হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত এবং এক মেম্বার প্রার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর করাসহ আগুন দেওয়া হয়।
নির্বাচনী সংঘাতে চারজন নিহতের একদিন না যেতেই আবারো সংঘর্ষ বাধে নরসিংদীর মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চর আলোকবালীতে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় উত্তরপাড়ায় এ সংঘর্ষ বাধে দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
এদিকে চারজনের মৃত্যুর একদিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলোকবালী ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন হাসান বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে আমরা আগেই টের পেয়েছিলাম। তাই পুলিশকে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের জন্য আজকে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে এই চারটি লোক মারা যেত না।
টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত প্রত্যক্ষদর্শী মমিন আলী বলেন, সকালে হঠাৎ গুলির শব্দ। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি কাইয়ুম ও রিপনের নেতৃত্বে শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে মানুষের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় আনেক বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
চরাঞ্চলে বিপুল অস্ত্রের মজুত থাকলেও কোনো অস্ত্র উদ্ধারের তথ্যও মিলেনি। এমনকি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার হয়নি। এদিকে গ্রামে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার জের ধরেই শুক্রবার সংঘর্ষ বাধে। আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার প্রার্থী মামুনের লোকজন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ আসাদের সমর্থক ইউপি মেম্বার প্রার্থী জব্বর মিয়ার লোকজনের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন আহত হন।
কয়েকদিন আগেও নরসিংদীরই রায়পুরায় দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছিল। নরসিংদী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক স্থানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ওদিকে মেহেরপুরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই জেলার একটি ইউনিয়নে একজনকে অস্ত্র হাতে নির্বাচনি সভা করতে দেখা গেছে।
চলমান সহিংসতাগুলোতে কিন্তু কোন বিরোধী দলের উপস্থিতি নেই। আওয়ামীলীগের নেতারাই তাদের নিজের ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করতে একজন আরেকজনের উপর ঝাঁপিড়ে পড়ছে। একদল আরেকদলের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। আর এটাই মানবরচিত গণতন্ত্রের মাকাল। যার বাহ্যিক কিছু স্লোগান সুন্দর মনে হলেও ভিতরটা কুৎসিত, নোংরা।
তথ্যসূত্র:
=======
১। ইউপি নির্বাচনে অব্যাহত সহিংসতা: সব অংশীজনকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে
https://bit.ly/3bRE2L3
২। ৪ জন নিহতের একদিন পর আবারো সংঘর্ষ
https://tinyurl.com/y559he3a
৩। আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ আরও একজনের মৃত্যু
https://tinyurl.com/bywzv96j