ভারতে মুসলিম নির্যাতন ও হিন্দুদের মুসলিমদের উপর ক্ষেপিয়ে তুলতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে হিন্দুত্ববাদীদের পা-চাটা মিডিয়াগুলো। সত্যকে মিথ্যা, তিলকে তাল বানিয়ে আর নানান বানোয়াট প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। যার জ্বলন্ত একটি প্রমাণ পাওয়া যায় কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ত্রিপুরার ঘটনায়।
মুসলিম সংগঠনগুলি ত্রিপুরায় মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে একটি বন্ধের ডাক দেয়। কথিত গণতান্ত্রিক নিয়মের ভিতরে থেকে প্রতিবাদ করাটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
হিন্দু সন্ত্রাসীরা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে মুসলিমদের বাড়িঘর দোকানে আগুল লাগিয়ে দেয়।
আর হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া ‘দ্য হিন্দু’ রিপোর্ট করেছে, মুসলিমরা ১৫ই নভেম্বর মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ব্যক্তিগত এবং সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে সহিংসতা করেছে।
মুসলিমদের দোকান জ্বলতে থাকার ছবিকে ক্রুপ করে হিন্দুদের দোকান বলে ছবির নিচে ক্যাপশন দেয়।
এমনিভাবে, হিন্দুত্ববাদী আরেক মিডিয়া ওপি ইন্ডিয়া (OpIndia)একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বিজেপির তুষার ভারতীর কথা উল্লেখ্য করে বলেছে যে, মুসলিম জনতা হিন্দুদের দোকানে হামলা করেছে। বিজেপি-পন্থী প্রোপাগান্ডায় একটি ছবি ব্যবহার করে, যাতে দেখা যায় একজন পুলিশ একটি দোকানের আগুনে কি যেন ঢেলে দিচ্ছে।
ছবিতে একটি দোকান দেখা যাচ্ছে,প্রচার করা হয়েছে এটি হিন্দুদের দোকান।
ওপি ইন্ডিয়া (OpIndia)তে দেখানো পোড়া দোকানটির নাম “খান ইলেক্ট্রিক্যালস”। ক্রপ করে তারা নামের অংশ বাদ দিয়ে ছবি দিয়েছে, যেন মুসলিম বিদ্বেষের আগুনে ঘি দেওয়া যায়। হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধ ঢেকে উল্টো মুসলিমদেরকেই অপরাধী সাজানো যায়।
আসল ছবিটি একটি পিটিআই রিপোর্টে এসেছিল।
মুসলিম ব্যক্তির দোকানটি “চৌবের নুক্কাদ কাচোরি” এর ঠিক পাশেই ছিল, রাজকমল চক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে, যেখানে শনিবার বিজেপি, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা একটি সমাবেশ করে৷
‘দ্য ওয়্যার’ মুসলিম ব্যবসায়ী খানের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেছেন “শনিবার সকালে তার মামা তাকে ফোন করে জানায় যে হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা তার দোকানের তালা ভেঙে দিয়েছে। পথে পুলিশ তাকে থামানোর কারণে খানের দোকানে যাওয়ার চেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দাঙ্গাকারীরা তার দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরও জানিয়েছে যে দুটি দোকানে আগুন লেগে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, যেগুলোর মালিক মুসলিম।
ফিরোজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির গাড়ি মেরামতের দোকানও পুড়ে গেছে।
অথচ, পুলিশ এখন পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি মুসলিমকেই গ্রেপ্তার করেছে। ১২ এবং ১৩ নভেম্বর হওয়া সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনায় অমরাবতীর চারটি থানায় ২৫ টিরও বেশি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়, এগুলো দিয়ে মুলত মুসলিমদেরকেই হয়রানি করা হচ্ছে।
পক্ষান্তরে, অমরাবতী জেলা বিজেপির সভাপতি নিবেদিতা চৌধুরী, সিটি মেয়র চেতন গাওয়ান্দে ও রাজ্য মুখপাত্র শিবরাই কুলকার্নিকে লোক দেখানো সাময়িক গ্রেপ্তার করা হলেও, দিনকয়েক পরেই আদালত তাদের জামিন দিয়ে দেয়। আর নির্যাতিত মুসলিমরা এখনো পড়ে আছে জেলে।
সচেতন মুসলিমরা অবশ্যই দেখে থাকবেন যে মুসলিম নিধনযজ্ঞের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হিন্দুত্তবাদী ভারতের রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, নানা উগ্র সংগঠন, মিডিয়া – এরা সকলেই এখন একযোগে কাজ করছে। আমজনতাকেও তারা অনেকটাই প্রস্তুত করে নিচ্ছে মুসলিমমুক্ত অখণ্ড ভারত বাস্তবায়নে।
আর কথিত স্যেকুলার পোশাকধারী হিন্দুরাও হিন্দু্ত্ববাদীদের চোখ রাঙানিতে অতি নরম ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে অথবা চুপ করে গেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র:
—–
১। মুসলিমদের দোকান জ্বলতে থাকার ভিডিও
https://twitter.com/i/status/1459442222672203779
২। Image of Muslim-owned shop gutted in Amravati violence shared as “violence against Hindus”
https://tinyurl.com/ts95usu9
Vai ami…..