ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন যেকোন সময় সামান্য অজুহাত দিয়েই শুরু হতে পারে মুসলিম গণহত্যার চূড়ান্ত পর্ব। হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মুসলিম বিদ্বেষী ভাষণ বক্তৃতা অবস্থাকে আরো চরম মাত্রা দিয়েছে। একটা হিন্দু নিহত হওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগ চাপিয়ে মুসলিম গণহত্যার সূচনা করতে চাচ্ছে উচ্চপদস্থ হিন্দুত্ববাদী মহল।
শুরু হয়েছে মুসলিমদের বাড়িঘর দোকানপাট লক্ষ্য করে অগ্নিসংযোগ ব্যাপক ধরপাকড়। এখন পর্যন্ত অনেক মুসলিমকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
গত ২০শে ফেব্রুয়ারাী হর্ষ জিঙ্গাদে নামে একজন বজরং দলের সদস্য শিবমোগা সিগেহাট্টিতে নিহত হয়। তারপর কোন ধরণের যাচাই বাচাই তদন্ত ছাড়াই হিন্দুত্ববাদী ঈশ্বরাপ্পা মুসলিদের দায়ী করে। পরপরই, প্রধানত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিমদের সহিংসতা শুরু হয়। অনেক মুসলিমদের বাড়িঘর, ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গচুর করে। মুসলিমদের অটোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের উগ্রতা এমন সীমায় পৌছে গেছে তারা যেকোন সময় মুসলিমদের গণহারে খুন করতে পারে। তাই ভয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে মুসলিমরা বাড়িঘর,ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সাথে পুলিশ থাকলেও হামলা করা থেকে বারণ করেনি। কর্ণাটকের হিন্দুত্ববাদী পুলিশ প্রশাসন বজরং দলকে মুসলিমদের উপর হামলা চালাতে সহায়তা করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুসলিম মহিলা মিডিয়াকে জানিয়েছেন,তিনি এবং তার পরিবার তাদের বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চলে এসেছেন। এলাকায় হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের দাঙ্গার ভয়ে। অনেক মুসলিম পরিবার সিগেহাট্টি, বিবি স্ট্রিট, ক্লার্কপেট এবং আজাদ নগর থেকে দূরে সরে গেছেন।
মুসলিমদের উপর হামলা, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি
বিবি স্ট্রিটে, সিগেহাট্টি থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে, স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ রাফি ২১ ফেব্রুয়ারি হিন্দুত্ববাদীদের হামলার শিকার হন। হিন্দুত্ববাদী মন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পা শিবমোগায় একটি সমাবেশে ভাষণ দিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ আরো উসকে দেয়। এই জনসভার কিছুক্ষণ পরেই বজরং দল একটি শবযাত্রা বের করে।
“রাফি বিবি স্ট্রিট থেকে ফিরছিলেন, উগ্র হিন্দু জনতা তাকে রাস্তায় দেখতে পায়। তখন তারা তাকে অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক আঘাত করেছে।
শিবমোগা পুলিশ আইপিসির ৩০৭ ধারায় (খুনের চেষ্টা) এফআইআর নথিভুক্ত করলেও এখন পর্যন্ত এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার করেনি।
বজরং দলের সন্ত্রাসীরা এক মুসলিম ট্রাক ডাইভারকে রাস্তায় পেয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। এমনকি যে মুসলিমকেই সামনে পেয়েছে তার উপরই হামলে পড়ছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী নিসার আহমেদ বলেন, “যেসব এলাকায় শবযাত্রা চলে গেছে, সেখানে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বাড়িতে ঢুকে সম্পত্তির ক্ষতি করেছে। অটোরিকশা ও বাইক পুড়িয়ে দিয়েছে। পাথর নিক্ষেপে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
“সিগেহাট্টির মুসলিম পরিবারগুলো এখনো তাদের বাড়িতে ফিরে যায়নি। আমাদের অনেক প্রতিবেশী এখনও তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান করছে। আমরা আশঙ্কা করছি যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে না।” এটিই আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখে আসছি।
নিসার আহমেদ আরো বলেন, আজাদ নগরে দুটি বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।“মিছিলটি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। সমাবেশ থেকে চলতে থাকে পাথর নিক্ষেপ। সেখানেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন,”আমার একটি ছোট স্টেশনারী স্টোর আছে যার নাম ছিল আরবি। সেখানেও হামলা করেছে উগ্র হিন্দুরা।”
কর্ণাটকের হিন্দুত্ববাদী সরকার ক্ষতিগ্রস্থ মুসলিম পরিবার বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি মুসলিমদের নিরাপত্তারও কোন ব্যবস্থা করে নি।
অতীত ও বর্তমানের ইতিহাস সাক্ষী হিন্দুত্ববাদী সরকারগুলো মুসলিমদের স্বার্থে কোন কাজ করেনি। তাই নিজেদের প্রতিরক্ষায় যা করার, ঐক্যবদ্ধভাবে তা মুসলিমদেরকেই করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষক উলামায়ে কেরাম।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র
1. Harsha Murder: Shivamogga Muslims Leave Homes, Businesses Behind for Safety
https://tinyurl.com/4r9x6eb8