আফগানিস্তান ও সোমালিয়ার পর জিহাদের এক উর্বর ভূমি মালি। ইতিমধ্যে দেশটির রাজধানী অবরোধ করার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে হামলা বাড়িয়েছে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’। আর এতেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু অমুসলিম ও গাদ্দারদের বাহিনীগুলো। ফলে মালি ছাড়তে শুরু করেছে দখলদার পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
সেই সূত্র ধরেই মার্কিন দূতাবাস মালি থেকে তাদের কর্মীদের প্রত্যাহার করেছে, সেই সাথে দূতাবাসের অন্যান্য কর্মচারী ও নাগরিকরাও মালি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি (২৯/০৭/২২) ওয়াশিংটনের এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাসের কর্মচারী ও তাদের পরিবারকে মালি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে মালিতে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সমস্যাকে দায়ী করে ক্রুসেডার দেশটি।
বিবৃতিতে বলা হয় যে, মালিতে পশ্চিমাদের জীবনের নিরাপত্তার হুমকি এবং দেশটিতে পশ্চিমাদের লক্ষ্য করে ঘন ঘন “সন্ত্রাসী” হামলা বাড়ছে। আর এই ঝুঁকির কারণে নাগরিকদের অতি দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই অঞ্চলে পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতেও হামলার পরিকল্পনা করেছে আল-কায়েদা, দেশটির কাছে এমন তথ্য রয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
একই সাথে একটি পশ্চিমা গণমাধ্যম সূত্র দাবি করেছে যে, গত জুনে আল-কায়েদা যোদ্ধারা এই অঞ্চলে অন্তত ২৫টি হামলা চালিয়েছে। যা জুলাই মাসে আরও দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এসব হামলায় অসংখ্য পশ্চিমা, ইউরোপীয় ক্রুসেডারসহ বিভিন্ন নামধারী গাদ্দার মুসলিম দেশগুলোরও অসংখ্য সৈন্য নিহত এবং আহত হয়েছে। একই সাথে এসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নাগরিক ও কর্মকর্তাদেরও আটক করেছে আল-কায়েদা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এই সিদ্ধান্তটি এমন একটি সময় এসেছে, যখন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন দেশ জুড়ে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। দলটির একজন মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাদের বীর যোদ্ধারা রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হতে প্রস্তুত। তাঁরা অচিরেই রাজধানী অবরোধ করবেন। আর এই অবরোধের আগ পর্যন্ত বড় বড় হামলা সহ্য করতে হবে কুফ্ফার বাহিনীগুলোকে।
এদিকে গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে অপর ক্রুসেডার দেশ ফ্রান্সও মালির কেন্দ্রীয় পয়েন্টগুলি থেকে তার সামরিক (বুরখান) বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে শুরু করে। সাথে সাথে ইউরোপীয় ক্রুসেডার জোট “তাকুবা” এর সদস্য দেশগুলোও মালি ছেড়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সেই সাথে মালির গাদ্দার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে হামলাও জোরদার করেছে আল-কায়েদা। সবমিলিয়ে মালির যুদ্ধ এখন ক্রুসেডারদের জন্য জীবন মরণের লড়াই হয়ে দাড়িয়ে। ফলে যে যার মতো করে মালি ছাড়ছে।
সর্বশেষ মালিতে থেকে যাওয়া অপর ক্রুসেডার জোট জাতিসংঘের মধ্যেও বিরোধ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মিসর সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, জাতিসংঘের অধীনে মালিতে মিসরিয় সেনারা আর লড়াই করবে না। কেননা তারা এখানে থেকে তাদের সেনাদের একে একে হারাতে চায় না। এনিয়ে এই অমুসলিম সংঘটির ভিতরে মতভেদ যখন তুঙ্গে, তখন দখলদার জোটটি সদস্য দেশগুলোকে শান্ত করতে ঘোষণা করেছে যে, মালিতে নতুন করে জাতিসংঘের অধিনে সামরিক শক্তি ও সেনা সদস্য বাড়ানো হবে না।
“আল কায়েদা জনগণের পক্ষ হয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে”
এদিকে একে একে কুফ্ফার দেশগুলো যখন মুজাহিদদের হামলায় নাস্তানাবুদ হয়ে পালাচ্ছে, তখন মালির গাদ্দার সরকার নিজেদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে নতুন মিত্রের জন্য বেচেইন হয়ে পড়ে। ফলে দেশটিতে রুশ ভাড়াটে বাহিনী “ওয়্যাগনার” কে নিয়ে আসে সরকার। চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে দেশটিতে উপস্থিতি বাড়াতে থাকে “ওয়্যাগনার”। এরপর থেকে রুশ বাহিনী মালিতে নির্বিচারে শত শত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। এর ফলে আল-কায়েদার পশ্চিম আফ্রিকার (জেএনআইএম) প্রতিরোধ যোদ্ধারা প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এবং বেশ কিছু রুশ ভাড়াটিয়া সৈন্যাকে বন্দী করে। সেই সাথে রুশ বাহিনীকে টার্গেট করে এক ডজনেরও বেশি হামলা চালিয়ে অসংখ্য সৈন্যকে হত্যা ও আহতও করেছে আল-কায়েদা।
সম্প্রতি ‘জেএনআইএম’ কর্তৃক রাজধানী বামাকোতে সেনাবাহিনীর সামরিক কেন্দ্রস্থলে হামলাটি এই প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যেই চালানো হয়েছিল।
ওয়াসিম নাসর (পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন ঘটনার উপর বিশ্লেষণের জন্য পরিচিত) তার এক বিবৃতি রাজধানীতে আল-কায়েদার হামলটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন –
রুশ বাহিনী কর্তৃক মালির “ডগোফ্রি, নামপালা এবং মৌরাতে গণহত্যার পর জেএনআইএম-এর মধ্যে জোরদার প্রস্তুতি এবং আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে দলটির “কাতিবা আল-মাসিনা” ইউনিট প্রতিশোধের জন্য হামলার লক্ষ্যগুলি বেছে নেয়। এতে দলটি প্রশাসনিক ভবন, পশ্চিমা দূতাবাস এবং সামরিক স্থাপনাগুলো টার্গেট করে। একই সাথে আরও চ্যালেঞ্জিং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্যও মনোনিবেশ করে।
নাসরের মতে, জেএনআইএমের এই প্রস্তুতির পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলো সতর্ক অবস্থায় চলে গেছে। এক্ষেত্রে জেএনআইএম আরও চ্যালেঞ্জিং সামরিক লক্ষ্যগুলোকে ফোকাস করছে। গবেষক ইব্রাহিমা মাইগা জানান, এক্ষেত্রে বামাকোতে জেএনআইএম এর সম্প্রতি নির্বাচিত লক্ষ্যটি বেশ উল্লেখযোগ্য –
যেখানে আল-কায়েদার “টার্গেট ছিল মালির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এটা শুধু সামরিক শক্তির কথা নয়, এটা রাজনৈতিক ক্ষমতারও বিষয়। কারণ টার্গেট করা ‘কাটি’ শহর ছিলো সরকারের সামরিক শক্তির প্রতীক। তাছাড়া শহরটি ছিলো আবাসিক এলাকা, যার চতুর্দিকে ছিলো একাধিক সামরিক ব্যারাক। যেখানে অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা বসবাস করেন। একই সাথে রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও এখানে থাকেন। এই কারণে, এটি রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুও।” কিন্তু এমন একটি সামরিক কেন্দ্রবিন্দুতেও হামলা চালিয়েছে আল-কায়েদা।
ওয়াসিম নাসর বলেন যে, আল-কায়েদা কর্তৃক কাটিতে পরিচালিত এই আক্রমণটি মালিয়ান জান্তার জন্য একটি বার্তা ছিল। যার মাধ্যমে আল-কায়েদা জান্তা প্রশাসনকে দেখিয়েছে যে, মালির হৃদপিণ্ড ও হৃদয়কেও লক্ষ্যবস্তু করতে যথেষ্ট শক্তিশালী তাঁরা।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জুয়ান দিয়েগো ক্যারিলো বলেছিল, কাটিতে হামলার অর্থ রাজধানী বামাকোর চারপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ধীরে ধীরে ভেঙে যাওয়া। এবং এখানে আল-কায়েদার শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আল-কায়েদা কাটির মতো শহরগুলোতে হামলা মাত্র শুরু করেছে। যা সামনে আরও ঘন ঘন ঘটতে থাকবে। কেননা জেএনআইএম মালির বেসামরিক নাগরিকদেরকে জান্তা-প্রশানের কেন্দ্রগুলি থেকে নিরাপদ দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করেছে। এর অর্থ একটাই, সামনের দিনগুলো জান্তা সরকারের জন্য বড়ই চ্যালেঞ্জিং হবে। এই সময়গুলোতে বামাকো প্রশাসনের প্রতি অনুগত বাহিনী এবং রাশিয়ান সৈন্যদের ক্রমবর্ধমান লক্ষ্যবস্তু করবে আল-কায়েদা।
মালি ও পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশ মিলিয়ে ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠিত হলে তা মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করতে খুবই সহায়ক হবে। সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা উম্মাহ এই অঞ্চলের বিপুল খনিজ সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে, যে সম্পদ এতদিন ধরে পশ্চিমা দখলদাররা জোর খাটিয়ে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ভোগ ও পাচার করে আসছিল। আফ্রিকার সম্পদের উপরে ভিত্তি করেই তারা মূলত একেকটা উন্নত দেশ বা কথিত ‘পরাশক্তি’ সেজে বসেছিল। আর এখন এটা তাদের হাতছাড়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা তাই আশা প্রকাশ করছে যে, এর সুফল তাই অদূর ভবিষ্যতে উম্মাহই ভোগ করতে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
Alhamdulillah
alhamdulillah
অচিরেই আমরা বিজয়ের মুখ দেখবো ইনশাআল্লাহ।
কুফফারদের জন্য রয়েছে অপমানজনক পরাজয় ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। এভাবে ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীতে মুসলিমরা তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে ইনশা আল্লাহ্।
Alhamdulillah