হিন্দুত্ববাদীদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন অখণ্ড ভারতকে মুসলিম মুক্ত করে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের। সে লক্ষ্যে তারা নানাভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের ধ্বংস করতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান ভারতে মুসলিমদের অবস্থা দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়, এ চক্রান্তে হিন্দুত্ববাদীরা কতটা সফল হয়েছে। মুসলিমদের নীরবতা আর দূর্বলতার সুযোগে তারা এতটাই আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে যে, এখন মুসলিমদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ নতুন ‘সংবিধান’ পর্যন্ত তৈরী কর ফেলেছে তারা।
হিন্দুত্ববাদী উগ্র সাধুদের একাংশ ভারতের নতুন সংবিধান-এর একটি খসড়া তৈরি করছে। বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে মাঘ মেলায় অনুষ্ঠেয় ‘ধর্ম সংসদ’-এ খসড়াটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মাঘ মেলার ধর্ম সংসদে নিজস্ব ‘সংবিধান’ তৈরি করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করার প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। সেই মতো খসড়া তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
সংবিধানটি হবে মোট ৭৫০ পৃষ্ঠার। বারাণসী-ভিত্তিক শঙ্করাচার্য পরিষদের হিন্দুত্ববাদী সভাপতি স্বামী আনন্দ স্বরূপ জানায়, শাম্ভবী পীঠধীশ্বরের পৃষ্ঠপোষকতায় দার্শনিক ও পণ্ডিতের ৩০ জনের একটি দল এই ‘সংবিধান’-এর খসড়া তৈরি করছে। সংবিধানটি হবে ৭৫০ পৃষ্ঠার। এটি নিয়ে ধর্মীয় গুরু ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এর ভিত্তিতে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত হতে চলা মাঘ মেলায় অর্ধেক সংবিধান (প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠা) প্রকাশিত হবে।
হিন্দুত্ববাদী আনন্দ স্বরূপ জানায়, এই হিন্দু রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী দিল্লির পরিবর্তে বারাণসীই হবে ভারতের রাজধানী। এছাড়া কাশীতে একটি ‘ধর্ম সংসদ’ গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণ সমিতির প্রধান কমলেশ্বর উপাধ্যায়, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বিএন রেড্ডি, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ আনন্দ বর্ধন, সনাতন ধর্মের পণ্ডিত চন্দ্রমণি মিশ্র এবং বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের সভাপতি অজয় সিংয়ের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এই সংবিধান রচনার দায়িত্বে রয়েছে।
স্বরূপ আরো জানায়, সংবিধানের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র থাকবে। তাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারের মতো ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন দেশগুলোকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হবে। হিন্দু রাষ্ট্রের সংবিধানের খসড়া অনুসারে, অহিন্দুরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত ধর্ম সংসদে এটি প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার ও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ধর্ম সংসদে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়টি স্থিমিত না হওয়ার মধ্যেই এবার প্রস্তাবিত হিন্দু রাষ্ট্রের সংবিধানের খসড়া প্রকাশ্যে এলো।
হিন্দুত্ববাদীরা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের শহর ও ঐতিহাসিক স্থানের যেসব নাম মুসলিম-সম্পর্কিত ছিল, সেগুলো পরিবর্তন করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল তারা কোন পথে এগোচ্ছে। সেই বৃত্তটি সম্পূর্ণ করার জন্যই সংবিধান পাল্টানোর ছক কষা হচ্ছে। হরিদ্বার ধর্ম সংসদের সাধু আনন্দ স্বরূপ যে খসড়া সংবিধান তৈরি করেছে তা বাস্তবায়িত হলে ভারতে মুসলিমদের আর কোনও বাঁচার অধিকার থাকবে না।
হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুসলিম নিধনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। অন্যদিকে মুসলিরা এখনো নিজেদের মাঝে ছোটখাট বিষয়ে মতানৈক্যে পড়ে আছে। তাই ইসলামি চিন্তাবীদগণ মুসলিমদের অবচেতনার ঘুম ভেঙ্গে আসন্ন হিন্দুত্ববাদী ঝড়ের কবলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র:
——
1. TimesofIndia : Won’t let minorities vote: ‘Hindu Rashtra statute draft’
– https://tinyurl.com/2t75dnax