নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবই: মুসলিমরাও ‘ঈশ্বরের সন্তান’-শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে?

    0
    1139

    নবম- দশম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে ‘People who stand out’ বা ‘যারা খ্যাতিমান’ শিরোনামে ইউনিট সেভেন এর লেসন ফোর, ফাইভ এবং সিক্স অনুচ্ছেদে কথিত মাদার তেরেসাকে উপস্থাপন করা হয়েছে এক মহান ত্রাতা, মানবতার মা ও মুক্তিদূত হিসেবে।

    লেসন সিক্স এ ‘Love for humanity’ বা ‘মানবতার জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “… Who could imangine at that time that this little girl would one day become the mother of humanity?’ অর্থাৎ ‘কে জানত যে এই ছোট্ট মেয়ে (তেরেশা) একদিন মানবতার মা হবে?’

    লেসন ৭ এর অনুচ্ছেদে বিভিন্ন স্তরের নারী, পুরুষ ও শিশুদেরকে তেরেসার ক্যাথলিক আশ্রম ‘নির্মল হৃদয়’ এ আনার ব্যাপারে বলা হয়েছে, “These unloved and uncared for people get an opportunity to die in an environment of kindness and love.In their last hours they get human and divine love, and feel they are also children of God.” অর্থাৎ এই ভালোবাসা এবং যত্ন বঞ্চিত মানুষগুলো দয়া আর ভালোবাসার এক পরিবেশে মৃত্যুবরণ করার সুযোগ পেল। তাদের জীবনের শেষ মুহুর্তে তারা মানবীয় এবং স্বর্গীয় ভালোবাসা পায়, এবং তারা অনুভব করতে পারে যে তারাও ঈশ্বরের সন্তান।’

    খেয়াল করুন শেষের অংশটুকু, ‘…এবং তারা অনুভব করতে পারে যে তারাও ঈশ্বরের সন্তান!’

    “মানুষ ইশ্বরের সন্তান” সুকৌশলে এমন ভয়ানক এক খ্রিষ্টবাদী শিরকি বিশ্বাসের বীজ বপন করা হচ্ছে আমাদের মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝে!

    তেরেসার প্রকৃত পরিচয় কি?

    মেসিডোনিয়ার স্কোপজে শহরে এক  ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম নেয়া আগনেস গঞ্জা বোজাজিও সবার কাছে পরিচিত মাদার তেরেসা নামে। মাত্র ১২ বছর বয়সেই খ্রিস্টবাদ প্রচারে আগ্রহী হয়ে উঠে তেরেসা, সিদ্ধান্ত নেয় একজন মিশনারী হওয়ার। সে উদ্দেশ্যে ১৮ বছর বয়সে পিত্রালয় ত্যাগ করে ভারত উপমহাদেশে খ্রিষ্ট্রবাদ প্রচারে নিয়োজিত ‘সিস্টার্স অভ লরেটো’ নামে আইরিশদের একটি সন্যাসী দলে যোগ দেয়। এরপর ১৯৩১ সালের ২৪মে, মিশনারী হিসেবে প্রাথমিক শপথ গ্রহণ করে।

    আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে অবস্থিত ‘ইনস্টিটিউট অব দ্যা ব্লেসড ভার্জিন মেরি’তে কয়েক মাস খ্রিস্টবাদ প্রচারের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তেরেসা ভারতে আসে।

    দীর্ঘকাল যাবৎ ক্রুসেডার ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব আরর লুটপাটে উপমহাদেশে দেখা দিয়েছিল ব্যাপক দারিদ্রতা আর দুর্ভিক্ষ। বিস্তৃত দারিদ্র্যতা আর মহামারির সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টবাদ প্রচারের লক্ষ্যে তেরেসা প্রতিষ্ঠা করে ‘নির্মল হৃদয়’ নামে এক ক্যাথলিক আশ্রম। ঔপনিবেশিক সাশনের জাঁতাকলে পিষ্ট উপমহাদেশের মানুষের অসহায়ত্ব ও দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য মানুষকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে সে, সেবার নামে অনেক দুর্বল মুসলমানকেও করেছে পথভ্রষ্ট।

    এছাড়াও ১৩ জন সন্যাসী নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে মিশনারী অব চ্যারিটি। বর্তমানে এটির অধীনে প্রায় ৪ হাজার সদস্য মানবসেবার ছদ্মনামে বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টবাদ প্রচারে নিয়োজিত।

    খ্রিস্টবাদের প্রচারক মিশনারী সন্যাসী এই তেরেসাকে আমাদের মুসলিম শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে এক মহান ত্রাতা, মানবতার মা ও মুক্তিদূত হিসেবে।

    পশ্চিমা সন্ত্রাসী এবং তাদের আঞ্চলিক দোসররা দীর্ঘকাল যাবৎ এভাবেই মুসলিম জাতি এবং বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করে আসছে মানবতা, মুক্তি, গণতন্ত্র, নারীউন্নয়ন ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে। এই লেসনে আমাদের শিক্ষার্থীদের যেভাবে ধোকা দেয়া হচ্ছে, এর মূল বিষয়টি হচ্ছে ‘মানবতা’। আর এই মানবতা ও মানবসেবার অযুহাতেই তৎকালীন তেরেসা ভারতে খ্রিষ্টবাদ প্রচার করেছিল। আর বর্তমানে পশ্চিমাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী মুসলিমদের মাঝে এই তেরেসাকে মুসলিমদের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরছে। এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে এই ধারণা বধ্যমূল করে দেয়া হচ্ছে যে খ্রিস্টানদের মতো আমারা মুসলিমরাও ইশ্বরের সন্তান, নাউযুবিল্লাহ্।

    এ অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রতিটি মুসলিম দেশের গাদ্দার শাসকগোষ্ঠীই এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে রেখেছে। এরা সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা হিসেবে তুলে ধরছে আমাদের মাঝে। বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের উপস্থাপন করছে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীরূপে, আর বিশ্বে শান্তি স্থাপনকারীদের তুলে ধরা হচ্ছে সন্ত্রাসী হিসেবে। উদাহরণ স্বরূপ উসমানি খিলাফাহ ধ্বংস করে সেক্যুলারিজম ও মানবরচিত আইন প্রতিষ্ঠাকারী কামাল আতার্তুর্ককে বলা হচ্ছে তুর্কিদের মুক্তিদাতা। নারীদের সম্মান এবং নিরাপত্তা বলয় হিজাব ও পর্দা ধ্বংসকারী মালালা ইউসুফজাইকে বলা হচ্ছে নারীদের শান্তির দূত, মানুষকে ধোঁকা দিয়ে খ্রিষ্টবাদে দিক্ষিত করা তেরেসাকে বলা হচ্ছে মানবতাবাদী।

    এই দালাল শাসকগোষ্ঠী মুসলিম দানবীরদের কথা কখনো প্রচারমাধ্যম কিংবা শিক্ষাক্রমে তুলে ধরে না। এরা কখনো ড.আব্দুর রাহমান সুমাইতের ইতিহাস পাঠ্যক্রমে তুলে ধরতে না- যিনি আফ্রিকাজুড়ে ব্যাপক ত্রান, মেডিকেল সেবা, শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে গেছেন দীর্ঘকাল। এরা আমাদের কখনো বলবে না আলী বানাতের ব্যাপারে, যিনি তার সমস্ত সম্পত্তি ইউরোপীয় নিপীড়নের শিকার আফ্রিকার বঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য দান করেছেন।

    আফগানিস্তান থেকে দখলদার রাশিয়া এবং আমেরিকানদের বিতাড়িত করে সেখানে নারীদের সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, সেই মহান মুজাহিদদেরকে এরা বলবে না মানবতাবাধী, নারীর নিরাপত্তা রক্ষাকারী। বরং নারী, শিশু এবং সাধারণ জনতার উপর দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ বোমা নিক্ষেপকারী আমেরিকা এবং এর পশ্চিমা দালালদের তুলে ধরবে নিরাপত্তা, নারী উন্নয়ন এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসেবে।



    লিখেছেন :  মুহাম্মাদ ইব্রাহীম



     

    তথ্যসূত্র :

    1. Mother Teresa
    https://tinyurl.com/2p9ar42d

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধসামরিক ঘাঁটি বিজয় আশ-শাবাবের: হতাহত ৬০ গাদ্দার ও কুফ্ফার সেনা
    পরবর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || অক্টোবর ১ম সপ্তাহ, ২০২২ঈসায়ী