কঠোর লকডাউনের কারণে প্রাণ হারানো উইঘুর মুসলিমদের মৃতদেহ জোর পূর্বক নিয়ে যাচ্ছে দখলদার চাইনিজ প্রশাসন। পূর্ব তুর্কীস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ঘুলজা শহরের স্থানীয়রা ও কিছু কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃতদেহগুলি কী করা হচ্ছে সে ব্যাপারে মৃতদের পরিবার পরিজনকে কিছু জানায়নি আগ্রাসী প্রশাসন।
কথিত লকডাউনের অজুহাতে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিমের শহর ঘুলজাকে আগস্টের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ করে রাখে দখলদার চীন। এতে অনাহার ও ঔষধের অভাবে প্রাণ হারায় অনেক মুসলিম।
এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছিলো, এই লকডাউনে ঘুলজাতে প্রায় ৯০ জন মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করেন অনেকে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দখলদার কর্তৃপক্ষ লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়। তবে “উইঘুর ভাষায় জরুরি সেবা” না থাকার কারণে মৃতের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞাত কিছু ব্যক্তি জানিয়েছেন, দখলদার কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ সংগ্রহ করতে কিছু বিশেষ কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু তারা ইসলামী রীতি অনুযায়ী মৃতদের কবরস্থ করেনি, আর মৃতদের পরিবারকেও তা করতে দেয়নি। এমনকি কবরস্থ করার আগে মৃতদেহগুলি গোসল করানোর অনুমতিও দেয়নি ইসলাম বিদ্বেষী চাইনিজ প্রশাসন।
বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান তুর্ঘুঞ্জন আলাউদুন বলেন, “কেউ মারা গেলে আমরা তার মৃতদেহ গোসল করাই এবং সঠিকভাবে তাকে কবরস্থ করি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর থেকে আমরা এই রীতিই অনুসরণ করে আসছি।”
তিনি আরও বলেন, ইসলামী রীতি অনুযায়ী মৃতদেহ কবরস্থ করার সুযোগ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করার দ্বারা “উইঘুরদের প্রতি চীনের গণহত্যা নীতির” বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।
সুইডেনে বসবাসরত উইঘুর নাবিজান আলা বলেন, পূর্ব ঘুলজায় বসবাসরত তার চাচা আবলিমিত জুনুন লকডাউনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কঠোর লকডাউনের কারণে হাসপাতালে যেতে না পারায় গত ১ অক্টোবর তিনি মারা যান।
“সেখানকার কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মৃতদেহগুলি সংগ্রহ করছে। কিন্তু তারা সেই মৃতদেহগুলি নিয়ে কী করছে তা এখনও প্রকাশ করেনি। এমনকি আমার চাচার মৃতদেহ সম্পর্কেও আমি এখনো কিছু জানতে পারিনি,” বলেন নাবিজান।
ঘুলজায় করোনা ভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে সহায়তাকারী দলের একজন সদস্য বলেন, শুধু স্থানীয় জননিরাপত্তা ব্যুরোর কাছেই সব তথ্য আছে। তারাই জানে যে মৃতদেহগুলি কী করা হয়েছে।
কাশগড় শহরের সহায়তাকারী দলের এক কর্মী রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানান, কিছু দিন আগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড শেষে মুক্তি পেয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী এক যুবক। তার নাম আলিমজান আব্দুরিশিত। লকডাউনের সময় অনাহার ও অসুস্থতার কারণে মুক্তি পাওয়ার মাত্র ৪০ দিনের মাথায় ঐ যুবক মারা যান। মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ পুলিশ নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার পরিবার জানে না যে আলিমজানের মৃতদেহ কী করা হয়েছে।
সার্বিক দৃষ্টিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দখলদার চাইনিজ প্রশাসন চায় উইঘুর মুসলিমদের জীবন থেকে সকল ধরনের ইসলামি রীতিনীতি একেবারে মুছে দিতে। উইঘুর মুসলিমদের কুরআন শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া, ডিটেনশন সেন্টারে অমানবিক নির্যাতন করা, লকডাউনের নামে অনাহারে ও বিনা চিকিৎসায় মুসলিমদের খুন করা, মুসলিম নারীদেরকে জোরপূর্বক হান পুরুষদের সাথে বিয়ে দেয়া, ধর্ষণ – আগ্রাসী চাইনিজ প্রশাসনের রোমহর্ষক অপরাধের ফিরিস্তি অনেক লম্বা।
এদিকে নামধারী মুসলিম দেশগুলো চাইনিজ প্রশাসনের সাথে ক্রমাগত ব্যবসায়িক ও কূটনীতিক সম্পর্ক জোরদার করে যাচ্ছে। অথচ, উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের দালাল জাতিসংঘও শুধু নিন্দা জানিয়েই দায়িত্ব পালন করছে। এমতাবস্থায় মুসলিম উম্মাহর জাগরণ অপরিহার্য। নচেত দখলদার চাইনিজ প্রশাসন তুর্কিস্তান থেকে ইসলাম ও মুসলিম দুটোই মুছে দিবে।
তথ্যসূত্রঃ
————————–
Authorities in Xinjiang collect bodies of Uyghurs who died during COVID lockdown – https://tinyurl.com/2p9ackrm