পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে আল-কায়েদার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মুখে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে, ইউরোপ ও পশ্চিমা শক্তিগুলি। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় নেতৃত্বাধীন ট্রাস্ক-ফোর্স ও ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন বোরখান ফোর্স মালি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এখন কুফ্ফার জাতিসংঘ ও G5 দেশগুলোর পালা। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন দেশগুলোও একে একে মালি ছাড়তে শুরু করেছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ক্রুসেডারদের গোলাম গাদ্দার (জান্তা) মালি সরকার।
আঞ্চলিক সংবাদ সংস্থা টিভি ফাইভ মোন্ড প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে মালি থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করতে পারে ইউরোপীয় ও পশ্চিমা শক্তিগুলি, সেই তালিকায় যুক্ত হবে আফ্রিকা ও নামধারী মুসলিম দেশগুলিও। যারা বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমাদের গোলামী করে আসছে।
সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৩টি দেশ মালি থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে, বৃটেন, জার্মানি ও আইভোরি কোস্ট।
এবিষয়ে জার্মানি রাষ্ট্রদূত জানায়, “জার্মানি সেনাদের অবশ্যই ২০২৩ এর মধ্যে মালিতে জাতিসংঘের MINUSMA মিশন থেকে নিজেদের সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে।”
২০১৩ সালে আল-কায়েদার অগ্রযাত্রা রোধ করতে এবং পশ্চিমা সমর্থিত পুতুল সরকারকে রক্ষায় মালিতে ১,১০০ সেনা মোতায়েন করে জার্মানি। এই লক্ষ্যে দখলদার এসব সেনার মালির পূর্বাঞ্চলীয় গাও প্রদেশে একাধিক সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। যেখানে দখলদার সেনারা বিমানবন্দরের “সুরক্ষায়” কাজ করে এবং পুতুল সরকারকে বিমান হামলা ও নজরদারি করে সাহায্য করে থাকে।
এদিকে যুদ্ধের ব্যয় এবং মুজাহিদদের শক্তি ক্রমশ বাড়তে থাকায় জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষী মিশন MINUSMA-তে অংশগ্রহণকারী দেশ আইভরি কোস্ট এবং ব্রিটেনও সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্রিটেনের সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ডিফেন্স, জেমস হেপেই পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় বলেছে, মালিতে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান দেশটিতে (কথিত) আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এই সরকার আমাদের সেনাদের নিরাপত্তা, দেশে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম। এরমধ্যেই মালির জান্তা প্রশাসন রাশিয়ান ভাড়াটে কোম্পানি ওয়াগনারের সাথে কাজ শুরু করছে, যা অঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই এই প্রেক্ষাপটে মালিতে ব্রিটিশ সৈন্যরা অবস্থান করতে পারে না।
একইভাবে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্রদের অনুসরণকারী, গোলাম আইভরি কোস্ট সরকারও মালিতে তার সামরিক উপস্থিতি শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যান্য দেশগুলোর মতো আইভোরি কোস্টও নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে জাতিসংঘে তার ব্রিফিংয়ে বলেছে যে, ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে মালি থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করবে দেশটি।
এদিকে মালিতে রাশিয়ান ভাড়াটে যোদ্ধা মোতায়েন করা এবং পুতুল সরকারের সাথে দরকষাকষি মনমতো হচ্ছে না দখলদার দেশগুলোর। ফলে ২০২৩ সালের মধ্যে আরও কয়েকটি দেশ মালি থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এই ধারা চলতে থাকলে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মালিতে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়বে কুফ্ফার জাতিসংঘের সামরিক আগ্রাসন।
উল্লেখ্য যে, এবছরের গ্রীষ্মে মালি থেকে ফ্রান্সের সেনা চলে যাবার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দখলদার বিদেশী সেনা প্রত্যাহার। এই ধারায় বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে একে একে সব দখলদার দেশ মালি থেকে বিদায় নিচ্ছে, যুদ্ধের ময়দানে একা ফেলে যাচ্ছে তাদের গোলাম ও গাদ্দার মালিয়ান জান্তা সরকারকে। একই সাথে দেশটির গাদ্দার সরকারের বহুকালের মনিব ফ্রান্সও সম্প্রতি জান্তা সরকারকে সব রকমের আর্থিক সাহায্য এবং অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে একাকী হয়ে পড়ছে ক্রুসেডারদের একযোগের পুতুল সরকার।
আশা করা যায়, মুজাহিদদের ধারাবাহিক এই হামলার মুখে অর্থের লোভে ঈমান বিক্রিকারী বাংলাদেশের সেনারাও অচিরেই মালি ছাড়তে বাধ্য হবে, যেখানে এদেশের প্রায় নয়শতাধিক সৈন্য কুফ্ফার জাতিসংঘের হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
যাইহোক, মালিতে কুফ্ফার জোট বাহিনীগুলোর অনৈক্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্রমশ শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিনের বীর মুজাহিদরা। যারা দুর্বার গতিতে নিজেদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলছেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা গোত্রীয় অঞ্চলগুলোতে সরকারের পদলেহী গাদ্দার গোত্রগুলোকে শায়েস্তা করার পর এখন টার্গেট করছেন সরকারি বাহিনী, ভাড়াটে ওয়াগনার ও কুফ্ফার জাতিসংঘের সেনাদের।
সেই সাথে রাজধানী বামাকোতেও সম্প্রতি তাদের তৎপরতা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছেই নিরাপত্তা-বেষ্টনী ভেদ করে সফল হামলাও চালাচ্ছেন, যা শত্রুদের হৃদপিণ্ডে আঘাত হানছে।
আঞ্চলিক সূত্র মতে, ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ এর অংশীদার মাকিনা ফ্রন্ট, সম্প্রতি মালির দক্ষিণ এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই ফ্রন্টের মুজাহিদগণ ২০২২ সালের মে এবং আগস্ট মাসে রাজধানী বামাকোর ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯টির বেশি, এবং জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৫টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে। যা ২০১৩ সালের পর রাজধানীর আশপাশে পরিচালিত অন্যান্য বছরগুলোর সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আল-কায়েদার এই আক্রমণাত্মক ধাক্কা দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় মালিতে বামাকো সরকারের দুর্বলতা তুলে ধরেছে।
আর মুজাহিদদের এই আঘাতগুলো ধীরে ধীরে রাজধানী বামাকো বিজয়ের পথকে প্রশস্ত করে দিচ্ছে। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, মালিও ইনশাআল্লাহ্ ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের সফল পরিণতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
লিখেছেন : আলী হাসনাত
আল্লাহু আকবার কাবিরা।
জিহাদের পথে আছে সম্মান আর মর্যাদা