২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০২-এ একটি মুসলিম বিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়েছিল। নরোদা পটিয়ার আহমেদাবাদ পাড়ায় হামলায় হিন্দুত্ববাদী একটি আধা-সামরিক বাহিনীও জড়িত ছিল তাতে। সেখানে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের বিল্ডিং ধ্বংস করার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারগুলিকে বিস্ফোরক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। হত্যার আগে মুসলিম নারী ও নাবালেগ মেয়েদের গণধর্ষণ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল যে, আক্রমণকারীরা একটি শিশুর মুখে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়, যাতে সে পুড়ে যায়।
নরোদা পটিয়াতে সহিংসতা থামানোর জন্য হিন্দুত্ববাদী পুলিশ কোন ধরণের চেষ্টাই করেনি তখন। নীরবতার আড়ালে তারা অন্যতম বৃহৎ এই মুসলিম গণহত্যা চালানোর সম্পূর্ণ সুযোগ তৈরী করে দিয়েছিল। সে সময় গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বিজেপির নরেন্দ্র মোদী, তার নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছিল।
দুঃখজনক বিষয় হল,দুই দশক পরে, ভারতীয় জনতা পার্টি, গণহত্যার সময় ক্ষমতাসীন দল, আসন্ন ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট সংগ্রহের জন্য সেই ভয়ঙ্কর মুসলিম গণহত্যার স্মৃতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। যেন হিন্দুদের মাঝে লুকায়িত মুসলিম বিদ্বেষ আবারো প্রকাশ্য হয়ে উঠছে; হয়ে উঠছে নির্বাচনে বিজয়ের হাতিয়ার।
এমন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড কীভাবে তার অধীনে ঘটতে পারে তা নিয়ে অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, গণহত্যার পক্ষেই সাফাই গাইছে।
উগ্র দলটি একটি বিধায়ক প্রার্থী হিসাবে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের এক গুণ্ডা মনোক কুকরানির মেয়েকে মনোনীত করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে কুকরানি সেই উগ্র হিন্দুদের একজন- যারা মুসলিম মহিলাদেরকে প্রথমে গণধর্ষণ করে, পরে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল।
এছাড়া বিজেপি তার বিধায়ক প্রার্থী সিকে রাউলজিকেও মনোনীত করেছে, যে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুর গণধর্ষণ ও তার পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে খুনকারীদের “ব্রাহ্মণ এবং ভালো মূল্যবোধসম্পন্ন” বলে আখ্যা দিয়ে সাজা ক্ষমা করে দিয়েছে। রাউলজি এমন একটি কমিটির লোক ছিল, যারা সাজাপ্রাপ্ত গণহত্যা এবং ধর্ষকদের সাজা শেষ করার আগেই কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে দেয়।
রাউলজির দ্বারা প্রশংসিত খুনিরা এক নিরপরাধ শিশুসহ ১৪ জন মুসলমানকে হত্যার জন্য দায়ী ছিল। যারা শিশুর মাথা থেঁতলে হত্যা করে। সেইসাথে ৬ মাসের গর্ভবতী বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করে। এই নৃশংস হামলায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের মধ্যে বিলকিস বানু ছিলেন। যিনি গণধর্ষণের লাঞ্চনা ও স্বজনদের হারানোর যন্ত্রণা এখনো বয়ে চলেছেন।
এটা স্পষ্ট যে বিজেপি আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে হিন্দু মুসলিম মেরুকরণের জন্য ২০০২ সালের ভয়াবহ সহিংসতার কথা সামনে আনছে। এটাকে তারা অপরাধ নয় বরং তাদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে। এটি তাদের নতুন কৌশল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০০২ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনগুলিও মূলত দাঙ্গার ইস্যু প্রধান হাতিয়ার ছিল। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে শাসক দলটির অধীনে গণহত্যা হয়েছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে, প্রায় ৫০% ভোট দিয়ে বিজেপির ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করেছিল। যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে।
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র
1. BJP signalling support for 2002 riots to win Gujarat polls is a dire sign for India ( Scroll )
– https://tinyurl.com/3hswjp44
2. Bilkis Bano Case: ‘ওরা ব্রাহ্মণ, মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ’, বিলকিসের ধর্ষকদের দরাজ সার্টিফিকেট বিজেপি বিধায়কের
– https://bit.ly/3KhG6MA
3. NewsClick : Bilkis Bano Case: 11 Convicts set Free by Gujarat Government Under its Remission Policy
– https://tinyurl.com/2p84kp5u
4. ‘There is fear’: Muslim families flee village, take shelter in relief colony
– https://tinyurl.com/4hu5ndm6