মুসলিম যুবকদের প্রতি শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরির আহ্বান: যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করবেন

    ত্বহা আলী আদনান

    11
    3086

    অতিসম্প্রতি আল-কায়েদা মিডিয়া সেন্টার আস-সাহাব “আমরা কিভাবে ফিলিস্তিনকে সহায়তা করবো” শিরোনামে ৮:৩৮ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওটিতে বক্তব্য রাখেন বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী তানযিমুল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি। ক্রুসেডার মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গত বছরের ৩১ জুলাই ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি ভবনে শাইখকে শাহিদ করার দাবি করে। মার্কিনীদের এই দাবির পর এটি শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরির ৪র্থ ভিডিও বক্তব্য।

    মূল বক্তব্যের শুরুতে ভিডিওটিতে মসজিদুল আকসায় অভিশপ্ত ইহুদিদের অনুপ্রবেশ, নৃত্য পদর্শন ও উগ্র ইহুদী নেতার উদ্ধত বক্তব্যের চিত্র সহ ইহুদীপ্রেমি মুসলিম বিশ্বের কিছু গাদ্দার শাসকদের দেখানো হয়। এরপর শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরির বক্তব্য শুরু হয়।

    শাইখ তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) প্রতি দুরুদ ও সালামের পর, সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও বরকতের দোয়া করেন।

    এরপর তিনি বলেন, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের, জেরুজালেমের ভূমি, বিশেষ করে আল-আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে অপরাধ করেছে তা সমগ্র ইসলামী বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। তবে আমি এখানে ৭০ বছর ধরে চলে আসা এসব অপরাধের বিস্তারিত বিবরণে যেতে চাই না। যাতে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়ার পাশাপাশি তাদের মুসলিম মিত্রদের পরিপূর্ণ সমর্থন ছিল।

    এরপর শাইখ তাঁর মূল আলোচনাকে দুটি বিষয়ের উপর বিভক্ত করে বলেন: প্রথমত অধিকৃত ফিলিস্তিনে বসবাসরত আমাদের ভাইয়েরা ইহুদিদের নৃশংসতার শিকার বা সরাসরি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সম্মুখীন। এসময় তিনি মাহমুদ আব্বাসকে পুতুল সরকার, গুপ্তচর ও অত্যাচারী শাসক বলে অভিহিত করেন, যার শাসনের অধীনে বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার সহ্য করছেন মুসলিমরা। এছাড়াও জননিরাপত্তা ও শান্তি সহযোগিতার নামে ইসরায়েলের সাথে তার সম্পর্ক বারবার এটাই প্রমাণ করেছে যে, সে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ইহুদিদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

    শাইখ বলেন, গাজায় বসবাসরত আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা একদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং অন্যদিকে ইহুদিবাদী মিশরীয় সরকারী বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত। গাজার এই মুজাহিদ ভাইরা, (আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন, তাদের শহীদদের কবুল করুন, তাদের আহতদের আরোগ্য করুন এবং তাদের বিধবা ও এতিমদের রক্ষা করুন…) যখনই নিজেদেরকে, ইহুদিদের অভয়ারণ্য থেকে মুক্ত করতে বা আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের চালানো নৃশংসতার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই বারবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের উপর অবিরাম বোমাবর্ষণ করে এবং হাজার হাজার মুসলমানকে শহীদ করে, তাদের বাড়িঘর ও পাড়া-মহল্লা ধ্বংস করে।

    তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রকৃত সাহায্য তখনই সম্ভব, যখন সকল মুসলমান ফিলিস্তিনের উপর পরিচালিত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। এর মাধ্যমে আমরা অবরুদ্ধ এসব এলাকার উপর চাপ কমাতে পারবো, ক্রুসেডার ইহুদিবাদী আগ্রাসনকে মোকাবেলা করতে পারবো, যা ক্রমাগত ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপন, আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস এবং নীল নদ থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত “বৃহৎ ইসরায়েল” রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সমগ্র উম্মাহর ঘর থেকে বের হওয়া উচিত।

    মুসলমানদের তাদের দেশের উপর চাপিয়ে দেয়া সরকারের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়… এই সরকারগুলো কখনোই ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে পারবে না…

    এসময় তিনি ইসরায়েলি স্বার্থে আঘাত হানতে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ও বিশেষ করে যুবসমাজকে আহ্বান করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর রাস্তার মুজাহিদদের মেহনত ব্যতীত ফিলিস্তিনের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়িত হতে পারে না।

    শাইখ তাঁর বক্তব্যের দ্বিতীয় দফায় দাওয়াত ও উপদেশ এবং একটি আহ্বান করে বলেন: আমি আমার মুসলিম উম্মাহর জনগণকে বলতে চাই, যারা ফিলিস্তিন এবং বায়তুল মাকদিসের আশেপাশে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে বসবাস করছেন: আপনার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহ যে, তিনি আপনাকে ফিলিস্তিন দিয়েছেন এবং আল-আকসা মসজিদের পাহারাদার বানিয়েছেন, তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই আমানত রক্ষা করুন।

    তিনি আরও বলেন, আমাদেরই নিজস্ব বর্ণ ও বর্ণের ঐসমস্ত বিশ্বাসঘাতকদের দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করুন, যারা বিভিন্ন অজুহাতে ইসলাম ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে দর কষাকষিতে লিপ্ত। এরা কখনও আঞ্চলিক বিভাজন, আন্তর্জাতিক রেজোলিউশন এবং কখনও কখনও চুক্তির নামে বিশ্বাসঘাতকতার সমাধান আপনাদের সামনে পেশ করছে।

    তাই এদের এড়িয়ে চলুন এবং এদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ান। কেননা এই বরকতময় ভূমির প্রতি ইঞ্চি মাটি ও প্রতিটি বালি-কনার উপর অধিকার আপনারই রয়েছে। আল্লাহ আপনাকে এই ভুমি রক্ষা করার জন্য দাঁড়ানোর সম্মান দিয়েছেন।

    আপনারা ফিলিস্তিনের মুফতি আলহাজ্ব আমিন আল-হুসাইনির নেতৃত্বে আপনার মহান পূর্বসূরিদের দ্বারা জারি করা ঐতিহাসিক ফতোয়ার ভিত্তিতে এই বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, যা ফিলিস্তিনি আলেমগণ ১৩৫৩ হিজরির শাওয়াল মাসে আল-আকসা থেকে জারি করা হয়েছিল। যেই ফতোয়ায় ফিলিস্তিনের কোনো জমি ইহুদিদের কাছে বিক্রি করা বা এ ব্যাপারে অবহেলা বা নমনীয়তা দেখানো সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তাতে এও লেখা ছিল যে, এ বিষয়টি প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তা স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই যে কেউ ফিলিস্তিনের জমি ইহুদিদের কাছে বিক্রি করাকে বৈধ মনে করবে তার উপর অবশ্যই কুফরের হুকুম করা হবে।

    সুতরাং, পবিত্র আল-আকসা মসজিদ থেকে আপনাদের মহান পূর্বসূরিদের দ্বারা জারি করা ফতোয়ার উপর দৃঢ়ভাবে লেগে থাকুন। নতুন প্রজন্মকে এটি শেখান এবং এর ভিত্তিতে প্রতিটি প্রতারক, কাপুরুষ এবং দরকষাকষির সাথে লড়াই করুন।

    আমি আপনাদেরকে আল্লাহর আমানতের উপর সোপর্দ করছি, যিনি আমানত নষ্ট করেন না। আর আপনার নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না।

    পরিশেষে, আমি প্রত্যেক সম্মানিত এবং প্রিয় ব্যক্তির কাছে একটি অনুরোধ করছি, যদি আপনি এই বক্তব্যটি দরকারী মনে করেন, তাহলে এটি অনুবাদ করার চেষ্টা করুন এবং যতটা সম্ভব প্রচার করুন। আর যদি এতে কোনো ফায়দা নেই মনে হয়, তবে আমাদের পরামর্শ দিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

    এদিকে ভিডিওর শেষ দু’মিনিটে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনি যুবকদের দ্বারা পরিচালিত হৃদয় জুড়ানো কিছু হামলার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে। এই হামলাগুলোর ফলে গত বছর ফিলিস্তিন জুড়ে শতাধিক ইহুদি নিহত এবং হাজারোর্ধ ইহুদি আহত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

    11 মন্তব্যসমূহ

      • আমার মনে শাইখ শহীদ হয়ে গেছেন।এগুলো হয়ত শাইখের জীবিত থাকা অবস্থায় ভিডিও করা হয়েছে। শায়খের শাহাদাতের(ইনশাআল্লাহ) অনেক করীনা বা ইঙ্গিত আছে। আস সাহাব মিডিয়ায় ৩১শে জুলাই এর পূর্বের ভিডিও গুলোতে শায়খের নামের সাথে (হাফিজাহুল্লাহ)লিখা থাকতো। এখন কোনো কিছু লেখা থাকে না।আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য যে তাহরিকে তালেবানের একটি পত্রিকায় শায়খের শাহাদাতের কথা উল্লেখ আছে।

    1. আমেরিকা একজন ওসামা রহিঃ কে শহীদ করেছিল আল্লাহ আরও ওসামাকে তৈরি করে দিছেন।একজন শায়খ আয়মান আয যাওয়াহিরী কে শহীদ করবে এরকম হাজারো তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।শায়েখের শাহাদাত এর খবরটা শুনে মনের ভেতরে কেমন একটা হাহাকার তৈরি হয়েছিল।কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত্বনা দিয়ে বললাম,শায়েখ তো শহীদ হওয়ার অপেক্ষাতেই থাকতেন।আল্লাহ কাছে টেনে নিলেন তাকে হয়তো।এখনো কেন জানি মনে হয় শায়েখ জীবিত আছেন।যদি এমন একটা সংবাদ শুনতাম…

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তান জুড়ে টিটিপির জোরদার হামলায় ১০৭ পাকিস্তানি সেনা হতাহত
    পরবর্তী নিবন্ধহান চাইনিজদের বিয়ে করতে উইঘুর নারীদের প্রলোভন দেখাচ্ছে চীন