মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছে ভারতের হিন্দু ধর্মগুরুরা; নিশ্চুপ প্রশাসন

উসামা মাহমুদ

0
555

কালীচরণ মহারাজ – ভারতের এক হিন্দু ধর্মগুরু। একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী। গত ৯ ফেব্রুয়ারি, মহারাষ্ট্রে সাকাল হিন্দু সংগঠন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে সে।

মহারাষ্ট্রের অধিবাসী কালীচরণ মহারাজের আসল নাম অভিজিৎ ধনঞ্জয় সরাগ। সে নিজেকে হিন্দু ধর্মের দেবী কালীর পুত্র বলেও দাবি করে। এর আগেও আগেও একাধিকবার এমন বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছে সে।

হিন্দু জঙ্গার্জনা মোর্চা শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে কালীচরণ দাবি করেছে, মুসলিমরা সবাইকে ধর্মান্তরিত করতে চায়। কারণ যারা মুসলমান নয় তারা কাফির এবং কোরআনে বলা আছে কাফিরকে হত্যা কর। আমি কাফির যার অর্থ আমি (মুসলিমদের দ্বারা) হত্যার যোগ্য।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের উসকে দেয়ার জন্য সে আরও বলেছে, ‘কাফেরদের স্ত্রীরা লুটের মাল। তাই তাদের সম্পত্তি গ্রহণ করা এবং এক নারীকে ৫০ জনে মিলে ব্যবহার করাও বড় কথা নয়।’

একই মন্তব্য সে কাশ্মীরে হিন্দু মহিলাদের সম্পর্কেও করেছিল। সে তার ভক্তদের “কাশ্মীর ফাইলস” সিনেমাটি দেখতে বলেছে, যা কিনা ইতিহাসকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত করে বানানো হয়েছে।

কালীচরণের দাবি, এ সিনেমাতে যা দেখানো হয়েছে তা কাশ্মীরে যা ঘটেছে তার এক শতাংশও নয়। মুসলমানরা সংখ্যায় কম থাকা পর্যন্ত বলবে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই। সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথেই তারা [মুসলিমরা] এই ভাইদের হত্যা করবে। এমনটাই ঘটেছে কাশ্মীরে। মুসলিমরা গাজওয়া-এ-হিন্দ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং তারা অর্ধেক সফল হয়েছে কারণ তারা ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তানকে মুসলিম দেশে পরিণত করেছে এবং সেখানকার সমস্ত হিন্দুদের হত্যা করেছে।

এই অনুষ্ঠানের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কালীচরণের বক্তৃতার সময় উগ্র হিন্দুরা স্লোগান দিচ্ছে, ‘হার ঘর ভাগওয়া ছায়েগা, জাব রাম রাজ্য আয়েগা।’ (রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিটি বাড়ি জাফরান হয়ে যাবে)।

অথচ, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল যে, কেউ এখানে কোন ঘৃণাত্মক বক্তব্য দিবে না। যদি কেউ আইনের অমান্য করে বা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে CrPC এর 151 ধারার প্রয়োগ করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

কিন্তু হিন্দুত্ববাদী নেতারা বিশেষ করে কালীচরণ সেসকল নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করে নির্দ্বিধায় ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে ঘৃণাত্মক এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছে। আর মহারাষ্ট্র প্রশাসন ও পুলিশও নির্বিকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। এখন পর্যন্ত কোন শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভাল করেই জানে, এসব নির্দেশনা আসলে লোক দেখানো নির্দেশনা। এগুলো ভঙ্গ করলেও তাদের কিছুই হবে না। প্রকৃতপক্ষে, হিন্দুত্ববাদী আইনের এসব ধারা আর বেড়াজাল সবই মুসলিমদের জন্য।



তথ্যসূত্র:
——–
1. Kalicharan Maharaj allowed to deliver hate speech in Baramati ( Sabrang )
https://tinyurl.com/mhvzyzzm

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || ফেব্রুয়ারি ৩য় সপ্তাহ, ২০২৩ঈসায়ী
পরবর্তী নিবন্ধ‘কাবা’ সদৃশ নতুন স্থাপনা: কী চায় মুহাম্মাদ বিন সালমান?