ভারতের হায়দারাবাদে একজন মুসলিমকে গ্রেপ্তারের পর নির্মম নির্যাতন করে খুন করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। ৩৫ বছর বয়সী মুসলিম ব্যক্তি জনাব মুহম্মদ কাদির দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার কোন অপরাধ প্রমাণিত হয়নি, বরং তার মুখের আকৃতি এক চেইন-ছিনতাই মামলার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাথে মিলে ছিল। শুধু এই কারণেই তাকে আটক করা হয়।
জনাব কাদিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, কাদির সাহেবকে গত ২৭ জানুয়ারী হায়দরাবাদে তার বোনের বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। পরে তেলেঙ্গানার মেদক পুলিশের হেফাজতে মারধরের পরে গুরুতর আহত হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার তিনি মারা যান।
জনাব কাদিরের স্ত্রী আরো জানিয়েছেন, কাদির হায়দরাবাদের গান্ধী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। “পুলিশ সোনার অলঙ্কার চুরির অভিযোগে তাকে তুলে নিয়েছিল। তারা তার উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তাকে এতটাই মারধর করা হয়েছিল যে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে গেছে। তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতেও পারেননি এবং পুলিশের নির্যাতনে তার কিডনিও নষ্ট হয়ে গেছে।”
মোহাম্মদ কাদিরের জীবনের শেষ একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, মেদক পুলিশ আমাকে এতটাই অক্ষম বানিয়ে দিয়েছে যে স্বাক্ষরও করতে পারিনি এবং তার পক্ষে অন্য কেউ করে দিয়েছে।
মোহাম্মদ কাদিরের স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। তার মৃত্যুর পরপরই, মুসলিমরা তার গ্রামে জড়ো হয় এবং তার মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
কিন্তু অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ হলো, এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীদের কখনোই কোনো বিচার হয় না। কারণ এ ঘটনায় ভিক্টিম একজন মুসলিম ছিলেন। অন্যথায় ভিক্টিম হিন্দু হলে কখনোই কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া শুধু বাহ্যিক আকৃতির মিল থাকার কারণে এমন নির্মম নির্যাতন করা হতো না।
একইদিন গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখেই আসামে পুলিশ অপর একজন মুসলিম যুবককে গুলি করে খুন করেছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে অপহরণ ও হত্যা মামলার সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রমাণ উদ্ধার করতে পুলিশ ৩৩ বছর বয়সী শাহ আলম তালুকদারকে গুয়াহাটির বাতাহগুলি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে গুলি করে খুন করা হয়।
খুনের অপরাধ আড়াল করতে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) দিগন্ত কুমার চৌধুরী দাবি করেছে যে, তালুকদারকে ধরে থাকা পুলিশদের ধাক্কা দিয়ে একটি জঙ্গল এলাকার দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে গুলি করা হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন-পুলিশের এ দাবি বাস্তবতার পরিপন্হী। একটি বাহিনীর কাছ থেকে একজন হাতকড়া লাগানো সাধারণ ব্যক্তি পালিয়ে আর কতটুকুই বা যেতে পারে! আর যদি খুনের ইচ্ছে না থাকতো তাহলে তাকে পায়ে বা এমন জায়গায় গুলি করা যেতো, যেখানে গুলি লাগলেও মানুষ মারা যায় না। আর কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই কি তাকে গুলি করে খুন করা বৈধ হয়ে যায়?
বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ২০২১ সালের মে মাসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে হিন্দুত্ববাদী পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম। পুলিশের সহিংসতায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৪ জন। এছাড়াও মুসলিমদের উপর ধরপাকড় ও তাদের বসতিগুলোতে বুলডোজার চালানোকে নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার, যে অভিযানগুলোতে কোন আইনের তোয়াক্কাও করা হয় না।
তথ্যসূত্র:
———
1. Muslim man arrested ‘mistakenly’, killed due to brutal custodial torture in Hyderabad
– https://tinyurl.com/yckjmu4j
2. Muslim man killed in Assam police firing
– https://tinyurl.com/4x3kxmfa