৪৯ বছর বয়সী উইঘুর মুসলিম শরণার্থী আজিজ আব্দুল্লাহ। দীর্ঘ ৯ বছর ব্যাংককের অভিবাসী বন্দী শিবিরে বন্দী থাকার পর মারা গেছেন তিনি। শরণার্থী হিসেবে ন্যুনতম মানবিকতাবোধও তাঁর প্রতি দেখায়নি থাইল্যান্ড। তাঁর মৃত্যুর পর মানবাধিকার গ্রুপগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা ৯ বছর ধরে থাইল্যান্ডের বন্দী শিবিরে থাকা প্রায় ৫০ শরণার্থীর দুর্দশার মানবিক সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ দক্ষিণ-পশ্চিম জিনজিয়াংয়ের (পূর্ব-তুর্কিস্তানের) একজন কৃষক ছিলেন। ২০১৩ সালের শেষদিকে তিনি থাইল্যান্ডে এসে পৌঁছান। সাথে ছিল তাঁর সাত সন্তান, তাঁর স্ত্রী এবং ভাই। তাঁর স্ত্রী তখন গর্ভবতী ছিলেন। ছোট এই কাফেলা মালয়েশিয়া হয়ে তুর্কির পথে যাচ্ছিলেন। তবে তাদের থামিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ থাইল্যান্ডে। বন্দী করে রাখা হয় অভিবাসী বন্দী শিবিরে।
বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের শরণার্থী সেন্টারের ডিরেক্টরের দাবি, থাই কর্তৃপক্ষ আব্দুল্লাহকে হাসপাতালে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অথচ আব্দুল্লাহ প্রায় এক মাস ধরেই খুব অসুস্থ।
“তিনি কাশি দিচ্ছিলেন এবং রক্ত-বমি করছিলেন। খেতে পারতেন না। একজন ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে বলে যে, তাঁর অবস্থা না-কি সাধারণ (Normal) আছে!”
অবশেষে তাঁর অবস্থা যখন প্রায় মরণাপন্ন, তখন নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। মৃত্যু সনদে বলা হয়, তিনি ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গেছেন।
চীনের কমিউনিস্ট সরকার উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালাচ্ছে। চীনের সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে মুক্তি পেতে মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বহু উইঘুর শরণার্থী। কিন্তু বিশ্ববাসী উইঘুর মুসলিমদের প্রতি সুবিচার করেনি। অনেকে উইঘুর মুসলিমদের আবারো চীনের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে।
থাইল্যান্ড ২০১৫ সালে ১০৯জন উইঘুর মুসলিমকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে চীনে ফেরত পাঠ। আজিজ আব্দুল্লাহর ভাইও তাঁদের একজন। এই উইঘুর মুসলিমদেরকে রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা মিডিয়া সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে যুক্ত বলে অভিহিত করে। চীনে ফেরত যেতে বাধ্য হওয়ার পর এই মুসলিমদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জানা যায়নি।
গত বছর পর্যন্ত আরও অন্তত ৫০জন উইঘুর মুসলিম থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন। তাঁদের অবস্থা খুবই খারাপ বলে জানিয়েছেন তাঁদের সাহায্যের চেষ্টাকারী কর্মীরা। উইঘুর মুসলিমদের একজন থেকে অপরকে পৃথক রাখা হয়েছে, বাহিরের বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। এ যেন চীনেরই আরেক ডিটেনশন সেন্টার!
দ্য পিপল’স অ্যামপাওয়ারম্যান্ট ফাউন্ডেশনের ছালিদা তাছারুয়েনসুক বলেছেন, “সাধারণ থাই কারাগারগুলো থেকে এগুলো আরও অনেক বেশি খারাপ, খুব বেশি জনাকীর্ণ, খাবারের অভাব আছে। যে খাবার দেওয়া হয়, তাও স্বাস্থ্যকর নয়। মুসলিম বন্দীদের জন্য হালাল খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। পানীয়গুলোও পরিষ্কার নয়; ট্যাপের পানি পান করতে হয়। স্বাস্থ্যযত্নের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাদেরকে কেবল পেইন-কিলার অথবা এই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।”
আজিজ আব্দুল্লাহর মৃত্যু- কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উইঘুর মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি কেমন অবিচার করেছে, তার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Uyghur asylum seeker dies after 9 years in detention – https://tinyurl.com/ywvxeued
2. Aziz Abdullah: Uyghur asylum-seeker death heaps pressure on Thailand
– https://tinyurl.com/yeytksu5