সোমালিয়াতেও ক্রুসেডাররা আফগানিস্তানের মতো একই ভাগ্যবরণ করবে: আল-কায়েদা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

    ত্বহা আলী আদনান

    1
    1889

    বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী জামা’আতুল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গত ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ২ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি জারি করেছেন।

    আল-কায়েদার অফিসিয়াল মিডিয়া আস-সাহাব ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিবৃতিটি “সোমালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড যুদ্ধ” শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিটিতে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ইসলামি প্রদেশগুলোতে ক্রুসেডারদের সাম্প্রতিক হামলা ও দেশ জুড়ে তীব্রতর সংঘাতের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।

    গত বছরের মে মাস থেকে সোমালিয়ায় সংঘাত তীব্রতর হয়েছে। কেননা সে সময় সোমালি নতুন সরকার হারাকাতুশ শাবাবের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ও ইসলামি শরিয়াহ্ ব্যবস্থা উৎখাত করতে নতুন এক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। আর এই লক্ষ্যে সোমালি সরকারকে সমর্থন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর নেতৃত্বে জোটবদ্ধ আন্তর্জাতিক কুফফার শক্তি এবং আফ্রিকার ৯টি দেশের পাশাপাশি তুরস্ক, আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতারের ক্ষমতাসীনরা।

    বিবৃতিতে বলা হয়, “সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডে ইসলাম এবং এর বীর মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে এখনো শত্রুদের নোংরা পরিকল্পনা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমালি মুসলমানরা মুজাহিদদের সাথে শত্রুদের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা নিজ ধর্ম, ভূমি, সম্পদ এবং সম্মানকে আঁকড়ে ধরে আছেন।”

    “কুফ্ফারা এই ভূমি থেকে ইসলামকে উপড়ে ফেলতে এবং এই ভূমিকে খণ্ড-বিখণ্ড করতে যুগ যুগ ধরে চেষ্টা করেছে। কিন্তু দিন-মাস এবং কয়েক যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরেও, আগ্রাসী ক্রুসেডার এবং তাদের মুরতাদ মিত্ররা আজও আল্লাহর রহমতে এই লক্ষ্যে সফল হতে পারে নি।”

    “তাছাড়া যুগের হুবাল আমেরিকা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে নির্মূল করতে তাদের গোলাম মুরতাদ বাহিনীকে ধোঁকা দিয়ে আসছে। এই লক্ষ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে হাজার হাজার পদাতিক ব্যাটালিয়ন, শত শত নৌবাহিনীর সদস্য এবং কয়েক ডজন নিরাপত্তা সংস্থাকে আফগানিস্তান ও সোমালিয়ায় একত্রিত করেছিল। কিন্তু তাদের এতো কিছুর সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে ইসলাম ও সম্মানিত মুসলিম জনগণের বিজয়। কারণ এটি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআ’লার প্রতিশ্রুতি। আর আল্লাহর চেয়ে কে আছে অধিক সত্যবাদী, যিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।”

    বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে যে, দুঃখজনক বিষয় হলো- আমাদের নিজেদেরই রঙের তথা ইসলামী বিশ্বের মধ্য থেকে কিছু লোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত এই আগ্রাসী হামলার সমর্থনে ক্রুসেডারদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

    “আর এই জঘন্য কাজের তেমনই এক অংশীদার হচ্ছে বর্তমান ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) সোমালি সরকার ও এর প্রশাসন। যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে এবং কথিত ইসলামিক বলে দাবি করা কিছু আন্দোলনের সাথে জড়িত। অথচ এই ব্যক্তিই আবার ক্রুসেডার এবং নিপীড়কদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের এই ভূমিতে নিয়ে এসেছে, ঠিক যেমনটি তাদের পূর্বসূরিরা ইরাক এবং আফগানিস্তান করেছে।…”

    বিবৃতিতে, এটি জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, “ইহুদিবাদী তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার এই ক্রুসেড যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মোগাদিশু প্রশাসনকে সমর্থন করছে। এই যুদ্ধে তাদের বিমানগুলো বছর পর বছর ধরে মুসলমানদের বাড়িঘরে বোমাবর্ষণ করছে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানছে এবং স্থল পথের আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে।”

    ইসলাম বিরোধী শক্তি এতগুলো দেশ, এতসব সংগঠন ও ঐক্যের পরও এই জোট তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। বরং এই জোটের সহযোগীরা এখানে নিজেদের আশ্রয়ের জন্য নিরাপদ কোনো জায়গাও খুঁজে পায় নি, যেখানে তারা একটু উপভোগ করবে।

    বিবৃতিতে সোমালিয়ায় যুদ্ধরত দেশগুলোকেও সতর্ক করেছে আল কায়েদা। এসময় সম্প্রতি রাজধানী মোগাদিশুর “সোমালি-বেলি” তে আয়োজিত সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, (যেখানে সম্মেলন চলাকালে “সোমালি-বেলি” ও বিমানবন্দরে পরপর ১৫টির বেশি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন মুজাহিদগণ) “আমরা ঐসমস্ত নিষ্ঠুর দেশগুলোকেও সতর্ক করছি যারা এক নিষ্ফল সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। তারা আফগানিস্তানে যে ব্যর্থ পথ অবলম্বন করেছে, সেই একই পথ এখানে অনুসরণ করছে।”

    এরপর বিবৃতিতে শত্রুদের লক্ষ্য করে বলা হয়, “সোমালি জনগণ ও মুজাহিদদের কাছে মাথা নত করা ছাড়া শত্রুরা এই চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ খুঁজে পাবে না। আত্মসমর্পণ ব্যতীত তাদের বাঁচার আর কোন পথ নাই, তাই বিপর্যয় আবির্ভূত হওয়ার শুরুতেই আত্মসমর্পণ তাদের জন্য পরিত্রাণের সর্বশেষ আহ্বান।”

    এসময় বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা শত্রুদেরকে সোমালিয়ার এই জঙ্গলে (যুদ্ধের ময়দান) প্রবেশ করা থেকে সতর্ক করছি৷ কারণ কত লোক এই বনে প্রবেশ করে তার নামনিশানা সহ হারিয়ে গেছে তার কোনো হিসেব নাই। তাই শত্রুদের উচিৎ এই যুদ্ধে জড়ানোর আগে, এখানকার পুরুষদের বীরত্বের ইতিহাস এবং আক্রমণকারীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা পড়ে নেওয়া।”

    বিবৃতিতে উপরোক্ত দেশগুলোকে লক্ষ্য করে বলা হয়, “এই দেশগুলো সোমালিয়ায় দারিদ্র্যতা ও দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায মানবিক সাহায্য ও খাদ্য পাঠানোর পরিবর্তে, এখানকার জনগণ, শিশু, বয়স্ক এবং মহিলাদের হত্যা করতে অস্ত্র ও বোমা পাঠিয়েছে।”

    বিবৃতির শেষে, সোমালি জনগণ ও গোত্রগুলোকে তাদের গর্বিত মুজাহিদ সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এসময় জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, “সোমালিয়ায় দখলদারিত্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত এবং ইসলামের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।”

    ১টি মন্তব্য

    Leave a Reply to withguraba প্রতিউত্তর বাতিল করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারও ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী হামলা: নিহত ১১, আহত শতাধিক
    পরবর্তী নিবন্ধরাজধানীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রস্তুত আশ-শাবাব: টার্গেট ড্রাগ মাফিয়া ও অপরাধী চক্র