সম্প্রতি ইউরোপের দেশ সুইডেন ও ডেনমার্কে বেশ কয়েকবার কুরআন অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। নেক্কারজনক এসব কাজের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব بيان بشأن الاعتداءات على القران ووجوب مبارزة أهل العدوان তথা “কুরআনের অবমাননা – সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধের ঘোষণা” শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতির শুরুতেই সূরাতুল কাহাফের প্রথম দুই আয়াত পেশ করে রাব্বুল আ’লামিন আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শান বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর আল্লাহর রাসুলকে ‘পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী জীবন্ত কুরআন’ হিসেবে অভিহিত করে তাঁর উপর দুরুদ পেশপূর্বক মূল বক্তব্যে প্রবেশ করা হয়।
সম্প্রতি কুরআনুল কারীমের অবমাননার ঘটনা মহামারী রূপে ছড়িয়ে পরার বিষয়টি উল্লেখ করে এসকল ঘটনাকে ইসলামের পবিত্র নির্দশনসমূহের প্রতি ক্রুসেডারদের চিরাচরিত হিংসাত্মক মনোভাব এবং জাতিগত বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর কারণ হিসেবে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, কুরআন পশ্চিমাদের উপর দলীল-প্রমাণ ও অলৌকিকতার তীর দিয়ে আঘাত হেনেছে এবং তাদের সন্তানেরা ‘নিকৃষ্ট মতাদর্শের’ অন্ধকার থেকে বের হয়ে দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের বিজয়ের ধারা অব্যহত থাকায় ইহুদী নীতিনির্ধারক ক্রুসেড-জায়নিস্ট নেতারা বুঝতে পেরেছে যে, ইসলাম ও মুসলমানদেরকে পরাজিত করতে তাদের সামরিক শক্তি যথেষ্ট নয়। তাই তারা মুসলিম জাতিকে মানসিকভাবে দুর্বল করে চাপে রাখতে এবং তাদের ঈমানী মর্যাদাবোধ ও জযবাকে দমিয়ে দিতে ইসলামের পবিত্র জিনিসগুলো অবমাননার অস্ত্র বার বার ব্যবহার করছে।
এরপর বিবৃতিতে সূরা হজ্জের ৪০ নং আয়াত এবং সূরা মুহাম্মাদের ৭ নং আয়াতের ভাষ্য তুলে ধরে ভয়ংকর এই ফিতনার সময়ে আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর কিতাবের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পুরো মুসলিম জাতির প্রতি কুরআনের আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। আরও বলা হয় যে, ক্রুসেডাররা যেহেতু মুসলিমদের সমালোচনা, কান্না-আহাজারি ও ঘৃণা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত, তাই শুধু বিক্ষোভ-মিছিল করে থেমে গেলে চলবে না। বরং প্রতিবাদ হিসেবে এসব পন্থার উপর সীমাবদ্ধ থাকলে তারা কুরআন অবমাননার ধারা অব্যাহত রাখবে। ধীরে ধীরে তারা মুসলমানদের ব্যাপারে আরও হিংস্র হয়ে উঠবে এবং মুসলিমদেরকে ঠাট্টা করতে থাকবে বলে বিবৃতিতে আশংকা প্রকাশ করা হয়।
তাছাড়া, ইউরোপের দুই ছোট দেশ সুইডেন ও ডেনমার্ক যে ২০০ কোটি মুসলিমকে মূল্যায়ন করছে না, এটিকে মুসলিম জাতির প্রতি অবমাননাকর বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা বার বার টিভিতে প্রচার করতে থাকাটাও তাদের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
এমন ঘৃণ্য অপরাধীদেরকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বারংবার হওয়া অবমাননাগুলো ইসলামী আইন শাস্ত্রের পরিভাষায়— আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে কঠিনতম যুদ্ধের একটি প্রকার। তাই অপরাধীদেরকে এবং এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও তাদের সহযোগীদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়ে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করা সকল মুসলমানের উপর ফরয। এটাই ইনসাফপূর্ণ আসমানী ফায়সালা। এটিই হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত ফাতাওয়া, যাতে কারও কোন দ্বিমত নেই।”
পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থানকারী মুসলিমদেরকে ইসলামের সাহসী সৈনিক ও অতন্দ্র প্রহরী সম্বোধন করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আপনারা আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন। আপনারাই এই পবিত্র জিহাদে মুসলিমদের পক্ষ থেকে অগ্রদূত। আপনারা এই উম্মতের অস্ত্র ও রণকৌশলের ভাণ্ডার। তাই এসকল অপরাধীকে শায়েস্তা করুন এবং পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে মুসলিমদের ক্ষত-বিক্ষত অন্তরগুলোকে প্রশান্ত করুন। … ‘নুসরাতান লিল কুরআন’ এর শ্লোগান নিয়ে কুরআনী হামলার জন্য এক বিশাল লংমার্চে সবাইকে বের হতে আমরা নিজেদেরকে এবং আপনাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন যুবকদের আহ্বান করছি, ছোট ছোট দল তৈরি করুন এবং এর মাধ্যমে কুরআনের সম্মান রক্ষায় পদক্ষেপ নিন। সেই সাথে আমরা আহ্বান করছি, যেন আপনিও পাহাড়ের গুহায় অবস্থান নেওয়া মর্দে মুজাহিদদের সংগ্রামে একজন প্রতিযোগী হোন। আসুন! আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য লাভজনক যে ব্যবসায়ের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাতে সবাই দ্রুত এবং দৃঢ়তার সাথে আত্মনিয়োগ করি। ইতিপূর্বে শার্লি এবদো’র দ্বারা ইউরোপকে দেওয়া আমাদের বার্তা তারা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেনি। তাই এখন সময় এসেছে পুনরায় তাদের মাথায় প্রবল আঘাত করে দ্বিখণ্ডিত করার।”
বিবৃতির শেষাংশে পশ্চিমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, মুসলিমদের এই লড়াই শুধু কুরআনের অবমাননাকারী প্রত্যক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধেই নয়, বরং সামরিক সাজে সজ্জিত সকল সেনার বিরুদ্ধে- যারা এদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি এই যুদ্ধকে ক্রুসেডার শাসক এবং তাদের সংবিধানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি মুসলিমদেরকে ‘রক্তপাত ও কষ্টবিহীন’যুদ্ধের আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে। যেমন- তাদেরকে আর্থিকভাবে বয়টক করার মাধ্যমে নীরব যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
এই ধারাবাহিকতায় বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আমাদেরকে স্থানীয় সরকারের বিরুদ্ধে কেবল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ — যেমন, দূতাবাসে স্মারক লিপি পাঠানোর মতো করুণা চাওয়ার উপর ভরসা করলে চলবে না। কারণ, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কারণে মুসলিমদের দুর্বলতা ও লাঞ্ছনা আরও প্রকটভাবে ফুটে উঠবে। ফলে শত্রুরা পবিত্র নিদর্শনগুলোর অবমাননা করতে আরও উৎসাহ পাবে। এই একই কারণে ভারতের কসাই নরেন্দ্র মোদি সরকার মুসলমানদেরকে হত্যা করেই যাচ্ছে। অন্যদিকে নামধারী মুসলিম প্রশাসনগুলো মূলত ইসলাম ও মুসলমানদেরই শত্রু। তারা দ্বীনের ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হওয়ারও উপযুক্ত নয়।”
এছাড়াও, বিবৃতিতে সুইডেন ও ডেনমার্কসহ পুরো ইউরোপে অবস্থানরত মুসলিমদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, এ প্রতিশোধ গ্রহণ করা প্রথমে তাদের উপরই ফরযে আইন; কারণ তারাই অন্যান্য মুসলমানের তুলনায় তাদের বেশি নিকটে অবস্থান করছেন। এরপর ফরযে আইন হবে পার্শ্ববর্তী দেশের উপর। এই পর্যায়ে, দুনিয়ার মায়া ভুলে আত্মত্যাগে উতসাহিত করতে তাদেরকে সূরা বাকারার ২০৭ নাম্বার আয়াত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন, “আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণির লোক রয়েছে; যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জান বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।”
এরপর বিভিন্ন ফ্রন্টের মুসলিম বীর মুজাহিদদেরকে এবং তানজিম আল-কায়েদার মুজাহিদদেরকে আহ্বান করে বলা হয়, তারা যেন কুরআনের জন্য কুরআনের পক্ষে যুদ্ধ করাকে নিজেদের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেয়; যাতে করে আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। পরিশেষে, আল্লাহ্ তা’আলার কাছে মুজাহিদদের জন্য দৃঢ়তা, সাহায্য ও হিম্মত প্রার্থনা করা হয়। পাশাপাশি, মুজাহিদদের উপর যেন মুসলিম জাতির আস্থা তৈরি হয় এবং এই মুজাহিদগণ যেন মুসলিমদের অন্তরের ক্ষতগুলো নিরাময় করতে সক্ষম হন সে প্রার্থনা করে বিবৃতি শেষ করা হয়।
তথ্যসূত্র:
১. কায়িদাতুল জিহাদ – কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব – কুরআনের অবমাননা – সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধের ঘোষণা
– https://tinyurl.com/24wj25ym