মহারাষ্ট্রের পুনে শহর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পুসেসাভালি (Pusesavali) গ্রামে এক মুলসিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুসেসাভালি মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার অন্তর্গত একটি মুসলিমপ্রধান গ্রাম। এই গ্রামেই গত ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার দল বেধে আক্রমণ করে ১ মুসলিমকে খুন এবং অপর ১০ মুসলিমকে আহত করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
গ্রামবাসি জানায়, একটি ভুয়া ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতির ইন্ধনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এই অভিযোগে এমনকি একটি কেইসও ফাইল করা হয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে। এরপরেও হিন্দুত্ববাদীরা দল বেঁধে মুসলিমপ্রধান এলাকাটিতে ব্যাপক ভিত্তিতে হামলা চালায়। আর এই সকল ঘটনার পেছনেই রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিক্রম পাওয়াসকারকে দায়ী করেছেন স্থানীয় মুসলিম নেতারা।
নিহত মুসলিম যুবকের পরিবার লাশ বুঝে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মূল ইন্ধনদাতা বিক্রম পাওয়াসকার সহ নির্দিষ্ট ৫ জন হিন্দুত্ববাদী নেতার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাসিন্দা মাক্তুব মিডিয়াকে জানিয়েছেন, “সম্প্রতি কিছু মুসলিম যুবকের মোবাইল হ্যাক করে, সেগুলো থেকে হিন্দু-বিরোধী কিছু পোস্ট শেয়ার করা হয়।”
আর এর দায়ভার স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুত্ববাদী নেতাদের উপরে দিচ্ছেন মুসলিম নেতারা। ঘটনার পর হিন্দুত্ববাদীরাই ঐ যুবকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আর ইতিপূর্বেও অনেক হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মী মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাঁধাতে গিয়ে মুসলিম সেজে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট, এমনকি নিজেদের মন্দিরে মাংস নিক্ষেপের ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়েছে। ভারতজুড়ে এমন সব ঘটনার অসংখ্য নজির রয়েছে। গত মাসেও ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলায় মন্দিরে মাংস নিক্ষেপের ঘটনায় ৪ হিন্দুকে আটক করে পুলিশ। গত বছরের জুলাই মাসেও কর্ণাটক রাজ্যে মুসলিম সেজে হিন্দু যুবকের সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে আল-ফিরদাউস টিম।
আর পুসেসাভালি গ্রামের এই ঘটনাতেও মুসলিমনিধনের মঞ্চ সাজাতে মুসলিমদের মোবাইল হ্যাক করে আপত্তিকর পোস্টগুলো করা হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করছেন স্থানীয় মুসলিমরা।
তারা জানিয়েছেন যে, আক্রমণকারী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা গ্রামের একটি মসজিদেও আক্রমণ করেছে। সেখানে তারা পাশের শহর থেকে আগত একটি মুসলিম জামাতকেও মারধোর করেছে। সেখানে তাঁদের মারধোরের শিকার এক মুসলিম ছেলেকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
একজন নিহত আর দশজন আহতের বিচারের দাবিতে এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার দাবিতে সাতারা জেলা হাস্পাতালের সামনে বিক্ষোভ করছেন মুসলিমরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে সাতারা জেলা প্রশাসন এলাকার ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন মুসলিমদের উপরে আবারও কোন বর্বরতা চালানো হলে সেটা জানার পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র:
1. Satara: Muslim man killed after violence erupt over social media post, family, locals accuse BJP state VP’s involvement
– https://tinyurl.com/2vxrsucj
2. ভারতে মুসলিম পরিচয়ে ফেসবুকে হিন্দুত্ববাদী যুবকের আপত্তিকর পোস্ট
– https://tinyurl.com/4tzv4jcy
3. মন্দিরে মাংস নিক্ষেপ করে দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র, হিন্দু গ্রেফতার
– https://alfirdaws.org/2023/08/29/64272/
4. আরএসএস জঙ্গীরা বোরখা পরে মুসলিম সেজে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা বানচাল করলো তেলেঙ্গানা পুলিশ ।
– https://tinyurl.com/n29ftr6v
5. সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক পোস্ট, গ্রেপ্তার হিন্দু জাগরন মঞ্চের নেতা
– https://tinyurl.com/42dcyw67