আফগানিস্তান ইসলামি ইমারত সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করায় ক্রমাগত চাপের মুখে অবশেষে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির এমপি তুবিয়াস ইলউড যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বাছাই কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
গত জুলাই মাসে তিনি আফগানিস্তান ভ্রমণের পর ইসলামি ইমারত সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, “ইসলামি ইমারত সরকার আফগানিস্তানকে পুরোপুরি পালটে দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নত হয়েছে, লোকেরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে। এছাড়া, পূর্ববর্তী আশরাফ গনির সরকারের প্রতিটি সেক্টরে যে দুর্নীতি শিকড় গেড়ে বসেছিল, ইসলামি ইমারত সরকার তা সমূলে উৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি আফিম বাণিজ্যের যে ভয়ানক কালোবাজার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, এখন সেটিও দূর করা হয়েছে।”
ন্যাটো জোটের ২০ বছরের দখলদারিত্বের সময় কেন এমন উন্নয়ন হয়নি, সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।
আফগানিস্তানের ক্রমাগত উন্নয়নের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন, যেন তারা ইসলামি ইমারতের সাথে ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং স্বীকৃতি দেয়। এ বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে টুইটারেও প্রকাশ করেছিলেন ইলউড।
ব্রিটিশ এমপি তুবিয়াস ইলউড একজন সেনা অফিসারও। তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে সেখানকার বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তালেবান সরকারের অভাবনীয় উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। আর ব্রেক্সিট সমস্যায় জর্জরিত ব্রিটিশ সরকারকে নিজস্ব লাভের জন্যই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু এ ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেয়নি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিকরা। তারা ইলউডেকে পদত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ক্রমাগত চাপের মুখে নতি স্বীকার করে অবশেষে ইলউড যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বাছাই কমিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে ‘ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান’ গ্রন্থের লেখিকা ও সাবেক ব্রিটিশ গণমাধ্যমকর্মী ইভন রিডলি পশ্চিমা মিডিয়ার অহংকারী মনোভাব ও অজ্ঞতাসুলভ আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “পছন্দ করেন বা না করেন, ইলউড সত্য বলেছেন। এই বিষয়ে আমারও তথ্যপূর্ণ মতামত আছে, কিন্তু আমরা আসলে এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে সত্য বললে সাংবাদিকদের সাথে আপনার ঝামেলা তৈরি হতে পারে। কারণ তারা প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও প্রমাণকেও সন্দেহ করে।”
তিনি আরও বলেন, “সত্য বিষয় হলো ২০ বছরের মার্কিন দখলদারিত্ব ও বর্বর যুদ্ধের পর বর্তমানে আফগানিস্তান একটি নজিরবিহীন নিরাপদ সময় পার করছে। এর আগে দখলদারিত্বের সময়টাতে প্রতিনিয়ত ন্যাটো বাহিনী মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য সব অপরাধ করেছে। আর কথিত লিবারেল সংবাদমাধ্যম কর্মীরা কখনও আফগানিস্তানে পা না রেখে সারা জীবন হিস্টেরিকেল ট্যাবলয়েড প্রতিবেদনের উপর বিশ্বাস রেখে গেছে। তারা এখন ইলউডের মতো লোকদের মুখ থেকেও তালেবান শাসনের কোনো ইতিবাচক দিক শুনতে চায় না।”
ইভন রিডলি বলেন, ইলউড কাবুল থেকে কান্দাহার পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে ঘুরে এসেছেন। তিনি নিজ চোখে দেখেছেন আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, ২০ বছরের দখলদারিত্বের সময়টাতে এমন ভ্রমণ করা অসম্ভব ছিল।
কাতারে ইসলামি ইমারতের রাজনৈতিক অফিসের প্রধান সুহাইল শাহীন বলেন, “দুঃখের বিষয় হলো পশ্চিমা মিডিয়া দাবি করে তারা গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তারা আফগানিস্তানের প্রকৃত ঘটনা শুনতে প্রস্তুত না। এছাড়া যারা আমাদের দেশ সম্পর্কে সত্য বলতে চায়, এই মিডিয়াগুলো তাদেরও কণ্ঠরোধ করে দিতে চায়। এটা কি তাদের দাবিকৃত বাক স্বাধীনতার বিরোধী আচরণ নয়? আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাই। যেসব বিষয় নিয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনে রাখা দরকার যে, কৌশল হিসেবে আফগানিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগের নীতি সর্বদা ব্যর্থ হয়েছে।”
তথ্যসূত্র:
1. Tobias Ellwood resigns as head of UK defence select committee after praising Taliban governance
– https://tinyurl.com/593py7wh
2. Seeing is believing in Afghanistan, and dialogue is the only way forward
– https://tinyurl.com/dw6996mf
এটা পশ্চিমাদের হলুদ সাংবাদিকতা।
এরা সতীনের মত সত্যের বিরুধিতা করে।
কিন্তু দিন শেষে সত্যই বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
نصر من الله و فتح قريب