ভারতে কথিত গো-রক্ষার আড়ালে যারা মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়াটা একরকম নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে; গো-রক্ষক হওয়াটাই যেন তাদের রক্ষাকবজ। একাধিক মামালার আসামি হিসেবে আটক হলেও, উপরস্থদের সহায়তায় দ্রুতই মুক্তি পেয়ে যায় তারা, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা আরও পেয়ে যায় বীরোচিত সংবর্ধনা।
এমনি এক গো-রক্ষক পুনেত কেরেহাল্লি; রাষ্ট্র রক্ষা পাড়ে নামে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি গো-রক্ষা গোষ্ঠীর প্রধান সে। বর্তমানে তার বসবাস জেপি নগরে৷
২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ১০টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে, যার সবকটি বিচারাধীন রয়েছে। কর্ণাটকে সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সংগঠনের সঙ্গে সে যুক্ত। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যু সম্পর্কিত এবং অন্যান্য মামলায় সে অভিযুক্ত হয়েছে।
পুনেত কেরেহাল্লির অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা হল- গোপী, পবন কুমার, সুরেশ কুমার এবং পিলিং আম্বিগার। চারজনই পুনিতের রাষ্ট্র রক্ষা পাড়ের সদস্য।
এবছরের (২০২৩) এপ্রিলে ভোটের সময় গবাদি পশু পাচারের অভিযোগে মান্ডিয়ার গবাদি পশু পরিবহনকারী ইদ্রিস পাশাকে খুন করে পুনেত ও তার দলবল। নিহত ইদ্রিস পাশার ছোট ভাই ইউনুস দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিলেন, কেরেহাল্লির দলবল ইদ্রিসের গাড়ি আটকায়। তারপর গাড়ি ভাঙচুর করে তাকে পিটিয়ে ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন করে তারা। ভাইয়ের বুকে পিছনে পোড়া দাগ ছিল।”
এফআইআরে ইউনুস আরো দাবি করেছেন, “কেরেহাল্লি এবং তার দলবল ২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল ইদ্রিসের কাছ থেকে। তা না দিতে চাওয়ায় আমার বড় ভাইকে খুন করা হয়।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ইদ্রিসের হত্যাকাণ্ডে স্টান গান ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে তিনি পালাতে না পারেন। এর আগেও কেরেহাল্লি স্টান গান এবং বেসবল ব্যবহারের ভিডিও পোস্ট করেছিল।
ঐ হত্যাকাণ্ডের পর হয়তো সমালোচনার মুখে সাথানুর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল, কিন্তু কিছুদিন পরেই সে মুক্তি পেয়ে যায়। জামিনে বেরিয়ে আসার পর সে তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলিতে মুসলিমবিদ্বেষী উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু পোস্ট করতে থাকে, যা আইনশৃঙ্খলার জন্য ক্রমাগত হুমকি সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
পুনেত কেরেহাল্লিকে ১১ অগাস্ট সিটি পুলিশ আবারো গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর তার অনুসারীরা কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাকে ‘গুন্ডা আইনের’ অধীনে গ্রেপ্তার করার মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পরেই রাজ্য উপদেষ্টা বোর্ড একটি প্রতিবেদন দাখিল করে, আর এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র দফতর পুনেতের মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
মামলা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, তার নামে এ আইনের অধীনে মামলা করার জন্য “পর্যাপ্ত কারণের অভাব” রয়েছে। এরপর তাকে মুক্তি দিতে সিটি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে দফতর।
উল্লেখ্য, পুনেত কেরেহাল্লি বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক সি টি রবি ও সাংসদ তেজস্বী সূর্যের মতো ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। আরএসএস-এর বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাকে নিয়মিতই দেখা যায়।
হিন্দু গোরক্ষকরা সন্ত্রাসী কায়দায় খুন করলেও দ্রুত জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়, অন্যদিকে মুসলিমরা অপরাধ না করেও মিথ্যে মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র:
1. Goonda Act against cow vigilante Puneeth Kerehalli revoked
– https://tinyurl.com/4348pp3z
2. politics cow vigilante booked for murder in karnataka flaunted photos with bjp leaders party
– https://tinyurl.com/yfb47m2k