ডলার সংকটে বিপুল বকেয়া বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে

- সাইফুল ইসলাম

0
211

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। একদিকে তারা টাকার অভাবে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে দিতে পারছে না; অন্যদিকে মার্কিন ডলারের অভাবে বকেয়া রাখতে হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাওনা।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ হিসাবে, দেশে উৎপাদনরত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে পাওনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

ভারতের আদানির কাছে বিদ্যুতের দাম বকেয়া পড়েছে ৫০ কোটি ডলারের মতো (প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা)। জ্বালানি তেল আমদানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বিদেশি সরবরাহকারীরা পাবে প্রায় ২৭ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা)। আর বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলনকারী মার্কিন কোম্পানি শেভরন গ্যাসের দাম বাবদ পাবে ২০ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বকেয়া বাড়তে থাকলে জ্বালানি সরবরাহকারীদের আস্থা কমতে থাকে। তারা দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি করতে আগ্রহী হয় না। জ্বালানি সরবরাহে তারা গড়িমসিও করে। বকেয়া দিতে দেরি হলে চুক্তি অনুযায়ী জরিমানাও দিতে হয়। ব্যাংকগুলো নতুন আমদানির ঋণপত্র খোলার ফি বাড়িয়ে দেয়।

এদিকে আগামী মার্চে গরমের মৌসুম শুরু হচ্ছে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে বাড়তি জ্বালানির প্রয়োজন হবে, আমদানি বাড়াতে হবে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল। টাকার অভাব ও ডলার–সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জ্বালানির অভাবেই গত বছর গরমে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন অনুযায়ী চালানো সম্ভব হয়নি। এতে ঢাকায় দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা এবং গ্রামে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং করতে হয়েছিল।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শনিবার রাতে বলে, সরকার বন্ড দিয়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া কিছুটা পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে। বিদেশি পাওনা পরিশোধে তো ডলার লাগবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিদেশি কোম্পানির দেনা পরিশোধে ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কিন ডলার দিতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২০২১ সালে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে ১ বিলিয়ন) ডলারের বেশি, যা এখন ২৫ বিলিয়নে নেমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সূত্র মেনে করা হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারে।

বিশেষজ্ঞরা এই সংকটের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতাকে দায়ী করে থাকেন। তারা মনে করেন, দেশে গ্যাস উত্তোলনে জোর না দিয়ে সরকার আমদানির পথ বেছে নিয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এখন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সক্ষমতা ও বিপুল কেন্দ্রভাড়া দেশের অর্থনীতিকেই চাপে ফেলেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জ্বালানি খাতেই বছরে ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দরকার। এত ডলার জোগান দেওয়া কঠিন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের আর্থিক পরিস্থিতি লেজেগোবরে অবস্থায়। সক্ষমতা বাড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া দিতে দিতে পিডিবি এখন শ্বেতহস্তী হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সরকার হয়তো আর্থিক সাশ্রয় করতে পারবে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না।



তথ্যসূত্র:
——–
১. টাকার অভাব, ডলার–সংকটে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বিপুল বকেয়া
http://tinyurl.com/2ddeyesx

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুরকিনায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ৩ অভিযানে অন্তত ৩০ সৈন্য নিহত
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানে ১০ মাসে ১২২ বিলিয়নের রেকর্ড রপ্তানি আয়