
খনিজ সম্পদ বা প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। বর্তমান যুগে আধুনিক নগরায়ন, শিল্পায়ন, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় খনিজ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খনিজ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় আফগানিস্তানকে । কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমা আগ্রাসন ও তাদের মদদপুষ্ট দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের অপশাসনের ফলস্বরূপ বিগত শাসনামলে আফগান জাতি স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে নি। এর বিপরীত ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশে মজুদ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতিকে বেগবান করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।
স্বনির্ভর আফগানিস্তান গঠন করতে হলে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন আফগান অর্থনীতি বিশেষজ্ঞগণ। সম্ভাবনাময় এই খাত সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ শাকির ইয়াকুবী বলেন, খনিজ তেল উত্তোলন কাজে জড়িত কোম্পানিগুলোতে হাজার হাজার বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি তা জাতীয় রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে।
ইমারতে ইসলামিয়ার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, আফগানিস্তানে ৫ টি খনিজ তেল আহরণ অঞ্চল রয়েছে এবং আমু দারিয়া অববাহিকা তন্মধ্যে বৃহত্তম জোন হিসেবে বিবেচিত। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তান আমু দারিয়া অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১ লক্ষ টন অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করে থাকে।
সম্প্রতি আমু দরিয়া অববাহিকার কেবল কাশকারী তৈল কূপ থেকে আহরিত ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত খনিজ তেল বিক্রয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দরপত্র আহ্বান করেছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী শাহাবুদ্দীন দেলোয়ার জানান, আহরিত তেল নিলামে মনোনিত ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নিকট আন্তর্জাতিক বাজার দর অপেক্ষা প্রতি ব্যারেলে ২৪.৮ মার্কিন ডলার কম মূল্যে বিক্রয় করা হবে। মন্ত্রী মহোদয় আরো বলেন, অপরিশোধিত খনিজ তেল বিক্রয় করে ইমারতে ইসলামিয়া সম্প্রতি ২৭ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে।
এএফজি-চায়না অয়েল অ্যান্ড গ্যাস লিমিটেড কোম্পানির প্রধানের সাথে এক বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বলেন, আমু দরিয়া অববাহিকায় ২৪ টি নতুন তৈল কূপ স্থাপনের মাধ্যমে দৈনিক ২ লক্ষ টন অপরিশোধিত খনিজ তেল আহরণ সম্ভব হবে।
পাশাপাশি হেরাত প্রদেশের ১১ টি পৃথক অঞ্চলে তেল উত্তোলন কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এবং বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহকে এই খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হামায়ুন আফগান আমু দারিয়া অববাহিকা থেকে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার ব্যাপারে মন্ত্রী মহোদয়ের জোরালো নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, খনিজ তেল আহরণ প্রক্রিয়া আফগান প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্পাদন করা হবে।
খনিজ তেল প্রক্রিয়াকরণ ও প্রাকৃতিক গ্যাসে আফগানিস্তান ধীরে ধীরে আত্ননির্ভরশীল হয়ে উঠছে । আসন্ন বছরগুলোতে স্বনির্ভরতে অর্জন করতে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলে জানান ইমারতে ইসলামিয়ার মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
নিজস্ব পেট্রোল, ডিজেল, ইঞ্জিন তেল ও বিটুমিন বিদ্যমান থাকার বরকতে আগামী তিন বছরের মধ্যেই আফগানিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী শাহাবুদিন দেলোয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আফগান অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রা আরো বেগবান করতে নিজ দেশেই তেল শোধানাগারা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়জন বলে মত প্রকাশ করেন আফগানিস্তান খনিজ সম্পদ ও কল-কারখানা কার্যালয়ের উপ-প্রধান সখি আহমদ পেমেন ।
অদূর ভবিষ্যতে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান নিজস্ব খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের মাধ্যমে কেবল নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করবে না, পাশাপাশি দেশীয় চাহিদা পূরণ করে প্রচুর পরিমাণে তেল বিদেশে রপ্তানি করবে ইংশাআল্লাহ।