‘উদার নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের’ শিক্ষা দেওয়ার দাবিদার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারীদের জন্য ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠান। সহপাঠী পুরুষ ছাত্রের পাশাপাশি ‘বাবার মতো’ আখ্যায়িত শিক্ষকও যৌন নিপীড়ন করছে নারী শিক্ষিকা এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের। নিপীড়করা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক ও ছাত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করছেন না।
এক গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের শিকার ছাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ এসব ঘটনায় অভিযোগ করেন। এ অভিযোগগুলোও নিষ্পত্তি করে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উলটো নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষাজীবনে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হন অনেকে। শিক্ষকদের ভোটের রাজনীতি অভিযুক্তকে বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চলতে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়নের দাবি উঠলেও তা করা হয়নি। নারী ও পুরুষের অবাধ বিচরণের জায়গা এসব বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে যৌন নিপীড়ন আরও বেশি সহজ সেখানে।
দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ বছরের যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে যুগান্তর পত্রিকা জানিয়েছে, ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত ৫১টি যৌন হয়রানির অভিযোগ সামনে আসে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত সাতটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন অন্তত সাতটি ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ অভিযোগই নিষ্পত্তি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় গঠিত যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বেশির ভাগ সময়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয় না। আবার প্রতিবেদন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ফোরামগুলোতে উপাচার্যরা তা উপস্থাপন করেন না। শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন অন্তত ৬-৭টি ঘটনা রয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ নিষ্পত্তিতে নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কাজগুলো করছে। এভাবে বিচারপ্রার্থীরাও একসময় ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। ফলে যৌন নিপীড়করাও একসময় পার পেয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ও স্নাতকে অধ্যয়নরত ২০০ ছাত্রী ওই গবেষণায় অংশ নেন। গবেষণায় উঠে আসে, নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ যথাযথ নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অভিযোগ করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ অভিযোগ করেছেন বিভাগের শিক্ষক বা প্রক্টরের কাছে। ৫৬ শতাংশ নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক। চরিত্র হনন ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার ভয়ে ৯২ শতাংশ ছাত্রী সেলে অভিযোগ করেননি বলে গবেষণায় উঠে আসে।
এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী যুগান্তরকে বলেন, ল্যাবে স্যার আমাকে অযাচিতভাবে স্পর্শ করেছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ করেছিলাম। ফলে ওইবারের পরীক্ষায় আমাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন মনে হচ্ছিল যেন মরে যাই। পরে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এজন্য বিষয়টি নিয়ে আর কাউকে কিছুই বলিনি। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম যুগান্তরকে বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোয় জড়িতরা বেশ ক্ষমতাধর হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও ছাত্রীরা বিচার পান না। উলটো পদে পদে বাধা-বিঘ্ন, অসহযোগিতা করা হয়। যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলও বারবার আপত্তিকর, অসৌজন্যমূলক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা জিজ্ঞেস করে পুনরায় হয়রানি করে। এই কমিটিগুলো প্রভাবশালী অভিযুক্তকে ভোটের কারণে, রাজনৈতিক কারণে খ্যাপাতে চায় না। সত্য প্রকাশ না করে নিপীড়ককে রক্ষা করে। অপরদিকে অভিযোগ করলে শিক্ষকরা পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে টিউটোরিয়াল, উত্তরপত্র এবং ভাইভায় নম্বর কম দেন। ফলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতে ভয় পান। অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা না থাকায় তারা যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছে। এ ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পৃথক আইন প্রণয়ন জরুরি। কারণ বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার কারণে অনেকেই পার পেয়ে যান।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক কতৃক যৌন হয়রানি ছাড়াও ছাত্র কতৃক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহই। অধিকাংশ ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের নাম আসছে। দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তারাও অনেক সময় অভিযোগগুলো থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। পুরুষ সহকর্মীর দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক নারী শিক্ষক। তারাও এসব নিয়ে অনেক সময় মুখ খুলতে পারছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একজন নারী শিক্ষক যুগান্তরকে বলেন, তিনি বিভাগের দুজন সিনিয়র শিক্ষকের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় শরীরে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছে। হাতে কিছু দেওয়া-নেওয়ার অজুহাতে আপত্তিকর স্পর্শ করেছে। বিভাগের অনেক ছাত্রীকেও তারা এভাবে হয়রানি করেছে। অথচ কেউ তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস করেন না। এজন্য যথাসম্ভব তাদের এড়িয়ে চলেন।
নিপীড়ন হয়রানি চলছেই: জাবি প্রতিনিধি জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার পরিচিত মামুনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন বিভাগেরই একজন নারী শিক্ষার্থী। এই নারী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এ নিয়ে নাদির জুনাইদের বিচারের আগ পর্যন্ত সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেন বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারই জের ধরে সোমবার অধ্যাপক নাদিরের অফিসকক্ষ ও ক্লাসরুমে তালা দেন শিক্ষার্থীরা।
নারী শিক্ষকরাও হয়রানির শিকার : রাবি প্রতিনিধি জানান, গত বছরের মে-তে নিজের সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী অধ্যাপক।
নিপীড়নে ছাত্রলীগ, বিচার কম : জাবি প্রতিনিধি জানান, ২০২২ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও আরেক নারী শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগপত্র দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক শেফার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হুমকির পাশাপাশি ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতনের একটি অডিও ক্লিপও যুগান্তরের হাতে আসে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস মোহাম্মদ শ্রাবণের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
অনিরাপদ ক্যাম্পাসের শিশু ও স্টাফরাও : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে গত বছরের অক্টোবরে ১৩ বছর বয়সি এক শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। ওই শিশুর মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এ ঘটনার পর আরও অনেকেই ডা. রাজুর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করেন।
গত বছরের ৪ জুন এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থী।
নিপীড়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা : জাবি প্রতিনিধি জানান, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের এক গার্ডের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন হলটির এক আবাসিক ছাত্রী। ওই ছাত্রী অভিযুক্তের বিচার চেয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর অভিযোগপত্র দেন। পরে হল প্রভোস্ট সেটি যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে প্রেরণ করেন।
নিরাপদ নয় টিউশনও : ২০২২ সালের আগস্টে টিউশনিতে যাওয়ার সময় রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়ার বাশার রোড এলাকায় যৌন হয়রানির শিকার হন রাবির এক ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, সকালে টিউশনিতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বৃষ্টির কারণে রাস্তায় তেমন কেউ ছিল না। হঠাৎ সেখানে একজন পেছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে ও যৌন হয়রানি করে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রাবির এক ছাত্রী প্রাইভেট টিউশনি করাতে শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হন। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে ইসলাম অবৈধ সাব্যস্ত করেছে এবং নারীদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকার ও রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে। একইসাথে ধর্ষণ ও অন্যান্য অপকর্মের জন্য কঠিন শাস্তির বিধানও রয়েছে ইসলামে। প্রচলিত আইন কানুনের বদলে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত থাকলে নারীরা সঠিক নিরাপত্তা পেত, যথাযথ উপায়ে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে পারত এবং হয়রানির ঘটনা অপ্রতুল হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামীচিন্তাবিদগণ।
তথ্যসূত্র:
১. যৌন হয়রানির চাপা কষ্ট নিয়েই শেষ হয় উচ্চশিক্ষা
– http://tinyurl.com/3m2d5bch