أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ * أياماً مَّعدوداتٍ)
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين حمدًا كثيرًا طيبًا مباركًا فيه، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله، أما بعد:
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হলো যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। রোযা নির্দিষ্ট কয়েকদিনের জন্য। [সুরা বাকারা, ২/১৮৩-১৮৪]
সম্মানিত সুহৃদগণ, রমাদান হচ্ছে আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ-গ্রহণের মোক্ষম সুযোগ। আমি এই মাসকে আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ-লাভের মোক্ষম সুযোগ মনে করি। রমাদানের হেকমত ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের
রব আল্লাহ তা‘আলা যেমনটি বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ*
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হলো যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। [সুরা বাকারা, ২/১৮৩]
সুতরাং, রমাদানের হেকমত হচ্ছে, মানুষের অন্তরে তাকওয়া, একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ভয়ের বীজ বপন করা। এজন্য অনেক মানুষকে দেখতে পাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এই ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে তরবিয়ত প্রদান করেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর যে ইবাদাতগুলো ফরজ করেছেন সেগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই ইবাদাতগুলো পালনের মধ্য দিয়ে অন্তর পরিশুদ্ধ করা, কলব ঠিক করা এবং মানুষ আখলাক ও মাসলাকের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন করে সর্বোচ্চ আখলাকে সুসজ্জিত হওয়া।
যেমন: আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর যাকাত কেন ফরজ করেছেন? যেন মানুষ কৃপণতা, লোভ-লালসা এবং সম্পদ গচ্ছিতকরণ থেকে পবিত্র হতে পারে। যেন খরচ করা, দান করা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হয়ে দানশীল ও মহান হতে পারে। যেন সে গরীব, অসহায় মুসলিম ভাই-বোনদের কথা স্মরণ করে, তাদের ব্যাপারেও চিন্তা করতে পারে।
ঠিক রোযা ফরজ করারও একটি তাৎপর্য রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা রোযার মাধ্যমে আমাদেরকে তাকওয়ার তরবিয়ত প্রদান করতে চান। মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুরাকাবা [আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ] করবে, ছোট-বড় সকল কাজে তাকওয়া অবলম্বন করবে। তাইতো রমাদানকে আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ-লাভের মোক্ষম সময় বলা হয়। চলুন দেখে আসি তা কীভাবে হয়!
রমাদানের আগে অনেকেই আপনাকে বলেছে: আমি ফজরের সালাত মসজিদে পড়তে পারি না। ফজরের সালাত মসজিদে পড়া তার কাছে কঠিন মনে হয়, এক্ষেত্রে সে অলসতা করে। কিন্তু যখনই রমাদান মাসের শুভাগমন হলো, আপনি দেখবেন সেই লোকগুলো হিম্মত ও সাহসিকতার সাথে, আযীমত ও দৃঢ়তার সাথে সংকল্প করেছে যে, তারা ফজরের সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করবে। অথচ তারা তা কঠিন মনে করত।
অনেক ধূমপায়ী আছে, যখন আপনি তাকে বলবেন যে, আপনি কেন ধূমপান ত্যাগ করছেন না? সে জবাব দেবে, আমি ধূমপান ছাড়তে পারছি না। মাফ করবেন, এতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু যখনই রমাদানের আগমন হলো, সে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে। আমি মনে করি, রমাদান অনেক মানুষের রহস্য উন্মোচন করে দেয়। কেননা, অনেকেই রমাদানের আগে এই গর্হিত কাজ ত্যাগ করতে পারছিল না। কিন্তু রামাদানে সেই ব্যক্তিকেই দশ ঘণ্টার অধিক সময় ধূমপান না করে ধৈর্যধারণ করতে দেখবেন। সে এমনটি কারো বাধ্যকরণের ফলে অপারগ হয়ে করেনি; বরং স্বেচ্ছায় করেছে। সে দূরে কোনো মরুভূমি বা জঙ্গলে গিয়ে একাকী ধূমপান করতে পারত। কিন্তু সে তা করেনি। সে জানে আল্লাহ তাআলা তাকে দেখছেন। তাই একমাত্র আল্লাহর জন্য এই দীর্ঘ সময় সে ধূমপান থেকে বিরত থেকেছে। যেহেতু সে নিজ নফসকে এই মাসে আয়ত্তে রাখতে পেরেছে, অনেক ইবাদাত ও আনুগত্যের কাজে নফসকে বাধ্য করতে পেরেছে, যা সে রমাদানের পূর্বে কঠিন মনে করত। লক্ষ করে দেখুন, সে রামাদানে নজরের হেফাজত করেছে। গালিগালাজ, হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে দিয়েছে। যবানের হেফাজত করেছে। অনেক হারাম কাজ বর্জন করেছে। সুবহানাল্লাহ! সে আপনাকে বলবে, কেন আমি এগুলো বর্জন করব না? আল্লাহর শপথ! এখন আমি রামাদানে প্রবেশ করেছি, এখন আমি রমাদান মাসে আছি।
তাই বলছি, রমাদান মানুষকে কিসের তরবিয়ত প্রদান করে? রমাদান মানুষকে ইবাদাত ও আনুগত্যের তরবিয়ত প্রদান করে। রমাদান আপনাকে তরবিয়ত দেবে যে, আপনার কাছে শক্তি, সাহস ও দৃঢ়তার সম্বল আছে। আমাদের উচিত এই ঈমানী কেন্দ্রবিন্দুকে গনীমত মনে করে এর যথাযথ কদর করা। এই মাস তরবিয়ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু। এই ইবাদাতগুলো তরবিয়ত-লাভের কেন্দ্রস্থল। মানুষ এই ইবাদাতগুলো পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের পাথেয় অর্জন করে। নফসকে ইবাদাতের প্রশিক্ষণ দান করে। যেন রমাদানের পরেও ইবাদাত অব্যাহত রাখা তার জন্য সহজ হয়।
প্রিয় ভাইয়েরা, যেমনটি আপনাদের বলেছি, বাস্তবেই রমাদান মাস মানুষকে এমন অনেক কাজে অভ্যস্ত করে তোলে, যে কাজগুলোতে সে আদৌ অভ্যস্ত হয়নি। রমাদান আসার সাথে সাথে দেখবেন সে কিয়ামুল লাইল করছে। প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সময় ও পরিমাণ নির্ধারণ করছে। মাশাআল্লাহ! দেখবেন সে অনেক হারাম কাজ থেকে বিরত থাকছে। তার হালত, আখলাক ও মাসলাক পরিবর্তন হচ্ছে। এর কারণ কী? আর কী-ই বা এর গোপন রহস্য?
এটি এমন এক সুবর্ণ সুযোগ যা আপনাকে এই নেক আমলগুলো করা এবং বদ আমলগুলো না করার ধারাবাহিকতা দান করবে। কেননা, আপনি রমাদান মাসের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধির মোক্ষম সময়কে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে অভ্যস্ত হয়ে পাথেয় সংগ্রহ করেছেন।
আমি মহান আরশের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক দান করেন।
সকল প্রশংসা সমগ্র জগতের রব একমাত্র আল্লাহর জন্য।
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম