আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
” إنَّ اللهَ جَميلٌ يُحِبُّ الجَمالَ”
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৯১)
এই হাদিসের ব্যাখ্যা কী? ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, চারটি বস্তুর সমন্বয়কে সৌন্দর্য বলে। যথা: সত্তাগত সৌন্দর্য, নামের সৌন্দর্য, গুণের সৌন্দর্য ও কাজের সৌন্দর্য।
সত্তাগত সৌন্দর্য: আল্লাহ তাআলার যাত ও সত্তা হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। এজন্য জান্নাতীদের সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম উপভোগের বিষয় হবে আল্লাহ তাআলার ‘দিদার লাভ’-চেহারার দর্শনলাভ। এটিই জান্নাতের সবচেয়ে মহান ও গৌরবময় নেয়ামত। এক আছারে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন জান্নাতীগণ রহমান, রহীম, আরশের অধিপতি আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ করবে তখন জান্নাতের সকল নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে।
নামের সৌন্দর্য: আল্লাহ তাআলার সকল নামই সুন্দর ও সর্বোত্তম। কুরআনে এসেছে,
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى.
অর্থ: আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো নাম।
আল্লাহ তাআলার নাম চূড়ান্ত পর্যায়ের সুন্দর। তাঁর নাম পরিপূর্ণ সুন্দর। তাঁর সকল নামই সুন্দর।
গুণের সৌন্দর্য: আল্লাহ তাআলার সকল সিফাত ও গুণও সুন্দর।
কাজের সৌন্দর্য: আল্লাহ তাআলার সকল কাজও সুন্দর। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাআলার সকল কাজ আদল-ইনসাফ, ইহসান-অনুগ্রহ ও সম্মানজনক। তিনি কারও উপর জুলম করেন না। তাঁর কোনও কাজে অসম্পূর্ণতা ও খুঁত নেই।
“إنّ الله جميل” আল্লাহ তাআলা সুন্দর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর সত্তা, নাম, গুণ ও কাজ সুন্দর হওয়া।
“আল্লাহ সুন্দর, পছন্দও করেন সৌন্দর্য”। তিনি কীসের সৌন্দর্য পছন্দ করেন?
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য পছন্দ করেন” এখানে সৌন্দর্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আখলাক-চরিত্র, গুণ, কলব, যবান ইত্যাদির সৌন্দর্য। একজন মুমিনের যবান সুন্দর হবে। সে উত্তম ও উপকারি কথা বৈ কিছু বলবে না। অপকারি-অযথা কথাবার্তা বলবে না। হারাম কথা বলবে না। আল্লাহ তাআলা নারাজ হন এমন কথা বলবে না। এমনিভাবে মুমিনের কলব হবে সুন্দর। তার কলব থাকবে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র। তার কলবে কোনও মুমিনের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, শিরক-নিফাক, গাইরুল্লাহর প্রতি ভ্রুক্ষেপ থাকবে না। বরং তার কলবে থাকবে ইখলাস, সততা, আল্লাহর উপর ভরসা, বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি সুধারণায় ভরপুর।
আল্লাহ তাআলা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক সৌন্দর্য পছন্দ করেন। মহান এই দ্বীন বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক সৌন্দর্যের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। এই দ্বীন-ইসলাম আমাদের আদেশ করছে ফিতরার সুন্নতের। দ্বীন আরও আদেশ করছে নাভির নীচের পশম, বগলের নীচের পশম মুণ্ডন করতে। আরও আদেশ করছে নখ ও গোঁফ খাটো করতে। এগুলো হচ্ছে বাহ্যিক সৌন্দর্য। আর আভ্যন্তরিক সৌন্দর্য হচ্ছে, আপনার কলব স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হওয়া।
আল্লাহ তাআলা চান আপনার কলব, যবান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চোখ, কান, হাত-পা ইত্যাদি কোনও হারাম কাজ না করুক। যে ব্যক্তি তার এসকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে হারাম কাজ করে, তার মাঝে সেই সৌন্দর্য নেই, যেটি আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। আমাদের উচিত মানুষকে আল্লাহ পাকের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা।
বর্তমানে বনী আদমকে দেখা যায় তারা মানুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করে। কোনও ব্যক্তিকে উল্টোভাবে জামা পরতে শুনেছেন? না; কেউ উল্টো জামা পরে না। বলবে, এটা কীভাবে সম্ভব? উল্টো জামা পরলে লোকে কী বলবে? আমাদের উচিত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জামা পরিধান করা। আমাদের গঠন, অবয়ব, আকৃতি মানুষের সামনে সুন্দর হওয়া উচিত।
ভালো কথা, আল্লাহ তাআলার সামনে আপনার সৌন্দর্যের কী খবর? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ ” .
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২৫৬৪)
আল্লাহ তাআলা চান আপনাদের অন্তর ও আমল ময়লা-আবর্জনা, নাপাকি, গুনাহ, অনিষ্টতা, অবাধ্যতা ইত্যাদি থেকে পবিত্র হোক। এটিই আভ্যন্তরিক সৌন্দর্যের উদ্দেশ্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আখলাক, আমল, কলব ইত্যাদি সুন্দর করার তাওফীক দান করুন। আমাদের গঠন-অবয়ব, আকৃতি সুন্দর করার তাওফীক দান করুন। তিনি আমাদেরকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক সৌন্দর্য দান করুন, আমীন।
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম