দীর্ঘ ৪ মাস ধরে গাজার দক্ষিণ খান ইউনুসে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দমন করতে মরিয়া হয়ে আগ্রাসন চালাচ্ছিল জায়োনিস্ট ইসরায়েলি বাহিনী। এই লক্ষ্যে শহরটিতে প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত ব্রিগেডের পর ব্রিগেড এবং ডিভিশনের পর ডিভিশন ঢুকেছে। শহরটিতে ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিমান ও আর্টিলারি বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ধ্বংস, হত্যা, সন্ত্রাস ও নির্মূল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। জায়োনিস্ট বাহিনীর এমন সব ধ্বংসাত্মক আগ্রসানের পরেও শহরটির পূর্ব ও পশ্চিম এলাকায় গত ২৭ রমাদান (৭ এপ্রিল) একে একে ৬টি সফল অ্যাম্বুশ করেছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। বিশেষ করে শহরটির আল-জিন্না এলাকাকে প্রতিরোধ যোদ্ধারা জায়োনিস্ট বাহিনীর জন্য জাহান্নামে পরিণত করেছেন।
সূত্রমতে, এলাকাটিতে জায়োনিস্ট বাহিনীর একটি পদাতিক বাহিনী ও তাদের নিরাপত্তায় থাকা ৩টি মারকাভা ট্যাংককে মুজাহিদগণ প্রথমে আল-ইয়াসিন রকেট দ্বারা সফলভাবে আঘাত করেন। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সৈন্যদের টার্গেট করে করে গুলি চালাতে থাকেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এতে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে সৈন্যদের মধ্যে ৯ সেনাকে নির্মূল করতে সক্ষম হন মুজাহিদগণ, সেই সাথে ট্যাংকের ভিতরে থাকা জায়োনিস্ট সৈন্যরাও নিহত হয় এবং ঘটনাস্থলে থাকা আরও অনেক সৈন্য আহত হয়।
পরে হতাহত সৈন্যদের উদ্ধার করতে জায়োনিস্ট বাহিনীর আরও একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তখন মুজাহিদগণ উদ্ধারকারী জায়োনিস্ট সৈন্যদের লক্ষ্য করে আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা ৩টি অ্যান্টি-পার্সনেল ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে উদ্ধারকারী জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্তত আরও ৬ সৈন্য নিহত হয়, তাদের মাঝে কিছু সৈন্যের দেহ টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এছাড়া ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া অন্য সৈন্যরা আহত হয়, যাদের অধিকাংশের অবস্থাই ছিলো গুরুতর।
এদিন খান ইউনুসের আল-হাদাথ এলাকায় একটি বাড়িতে একদল জায়োনিস্ট সৈন্যকে প্রলুদ্ধ করেন মুজাহিদগণ। বাড়িটিতে আগে থেকেই মুজাহিদগণ মাইনফিল্ড বিস্ফোরক ডিভাইস স্থাপন করে রাখেন। ফলে জায়োনিস্ট সৈন্যরা যখনই মুজাহিদদের তৈরি ফাঁদে পা দেয়, তখনই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্তত ৩ সৈন্য নিহত হয় এবং আরও অনেক সৈন্য আহত হয়। গুরুতর আহত সৈন্যদের কয়েকজনের বিভিন্ন অঙ্গ শরির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
একইদিন খান ইউনুস শহরের পশ্চিমে আল-আমাল এলাকায় জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে আরও একটি সফল অ্যাম্বুশ করেন মুজাহিদগণ। ফলশ্রুতিতে ৫ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত এবং আরও অনেক সৈন্য আহত হয়। একই এসময় মুজাহিদগণ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে জায়োনিস্ট সৈন্যদের বহনকারী একটি সামরিক গাড়িকেও ধ্বংস করেন। এতে গাড়িতে থাকা সমস্ত সৈন্য হতাহত হয়।
আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এদিন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরিচালিত অ্যাম্বুশে অন্তত ৪০ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ৩০ এর বেশি জায়োনিস্ট সৈন্য। ধ্বংস করা হয়েছে জায়োনিস্ট বাহিনীর ৬টি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান।
আল-কাসসাম ব্রিগেডের একজন কমান্ডারের মতে, মুজাহিদগণ এদিন সফল অ্যাম্বুশ পরিচালনা করতে প্রায় ৫০ দিন সময় নিয়েছিল। মুজাহিদগণ এসময়টাতে গোয়েন্দা তথ্য এবং ব্যাপক পর্যবেক্ষণ চালিয়ে শত্রুর সৈন্য এবং যানবাহন চলাচলের অবস্থানগুলো চিহ্নিত করেছিলেন। আর সে অনুযায়ী মুজাহিদগণ তাদের অ্যাম্বুশ প্রস্তুত করেছিলেন।