মার্চ মাসজুড়ে বুরকিনায় ‘জেএনআইএম’এর অন্তত ২০ অভিযান

0
122

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। ইসলাম বিরোধী শক্তিকে হটিয়ে ইসলামি শরিয়াহ্ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে দেশটিতে একযুগেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির মুসলিমরা। এই লক্ষ্য অর্জনে চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশটির ইসলামবিরোধী জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করছেন জনপ্রিয় ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ এর মুজাহিদগণ। আর মুজাহিদদের এসকল অভিযানের ১০টিতেই অন্তত ১২২ সৈন্য নিহত হয়েছে।

মুজাহিদদের এসকল সফল অপারেশনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, গত ২ মার্চ সানকান্সি রাজ্যের বেতু এলাকায় পরিচালিত অভিযান। এদিন মুজাহিদগণ উক্ত এলাকায় অবস্থিত বুরকিনান বাহিনীর একটি সদর দফতর লক্ষ্য করে আক্রমণ চালান। এতে বহু সংখ্যক সৈন্য হতাহত হয় এবং একপর্যায়ে ময়দানে টিকে থাকতে না পেরে বুরকিনান সেনারা সদর দফতর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে মুজাহিদগণ সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অসংখ্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম গনিমত হিসাবে অর্জন করেন।

একই রাজ্যের সুল্লি এলাকায় গত ৫ মার্চ, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অতর্কিত আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে এক সৈন্য নিহত হয় এবং অন্যরা প্রতিরোধ না করেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এই অভিযানের দুদিন পর অর্থাৎ ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার, লিউ অঞ্চলের সিসিলি এলাকায় বুরকিনান সেনাবাহিনীর একটি সামরিক কনভয় টার্গেট করে ২টি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং কতক সৈন্য হতাহত হয়।

একদিন পর ৮ মার্চ শুক্রবার, ওয়ারঘি রাজ্যের নাবুদি এলাকায় অবস্থিত একটি সেনা সদর দফতরে আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয় এবং বস্তুগত অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এমনিভাবে ৯ মার্চ শনিবার, দেদুগু রাজ্যের সানবো এলাকায়, বুরকিনান সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদগণ। এতে সাঁজোয়া যানটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাতে থাকা সমস্ত সৈন্য নিহত হয়।

‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ গত ১০ মার্চ রবিবার, তিঙ্কোদজো রাজ্যের বেনি শহরে বুরকিনান বাহিনীর একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পর হামলা চালান। এতে ৩ বুরকিনান সেনা নিহত হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। অভিযান শেষে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ক্লাশিনকোভ ও ৭টি মোটরসাইকেল গনিমত লাভ করেন।

মুজাহিদগণ গত ১৩ মার্চ বলসা রাজ্যের বেলা শহরে একটি বুরকিনান সেনা ব্যারাক লক্ষ্য করে ভারী হামলা চালান। এতে বুরকিনান সেনাবাহিনীর ১৮ সৈন্য নিহত এবং অসংখ্য সৈন্য আহত হয়। অন্য সৈন্যরা সামরিক ব্যারাক ছেড়ে পালিয়ে গেলে মুজাহিদগণ এর নিয়ন্ত্রণ নেন। সেই সাথে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে মাঝারি অস্ত্র, দুশকা, আরপিজি, ২টি পিকা, ১৫টি ক্লাশিনকোভ এবং ৫টি মোটরসাইকেল সহ অনেক সামরিক সরঞ্জাম গনিমত লাভ করেন।

এর একদিন পর ১৪ মার্চ, দেশটির কিয়া রাজ্যের কালামবোগ এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি অবস্থানে অতর্কিত আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে ৪ সৈন্য নিহত এবং কতক সৈন্য আহত হয়। সেই সাথে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে সামরিক বাহিনীর ১টি পিকা, ৩টি ক্লাশিনকোভ এবং ৪টি মোটরসাইকেল জব্দ করেন।

একইদিন বিসরা ও তাগুরি এলাকার মধ্যবর্তি সড়কে একটি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদগণ। বুরকিনান সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় গাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। এসময় গাড়িতে থাকা সমস্ত সৈন্য নিহত হয়।

এদিন ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ বিসি রাজ্যের কেন্দ্রীয় শহরে সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে একটি গেরিলা আক্রমণ চালান। এতে ৩ বুরকিনান সৈন্য নিহত হয়। এসময় মুজাহিদগণ নিহত সেনা সদস্যদের কাছ থেকে ২টি ক্লাশিনকোভ উদ্ধার করেন।

এদিকে গত ১৮ মার্চ সোমবার, ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ উয়াহিগুয়া রাজ্যে বুরকিনান সেনাদের একটি সমাবেশস্থলে একটি বোমা হামলা চালান। মুজাহিদদের নিক্ষিপ্ত এই বোমা বিস্ফোরণে ৮ বুরকিনান সেনা নিহত হয়।

এদিন রাজ্যটির ট্রপিরি এলাকায় বুরকিনান সেনাদের একটি ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে ৩ সেনা সদস্য নিহত হয় এবং কতক সৈন্য আহত হয়। আর অভিযান শেষে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ক্লাশিনকোভ নিয়ে নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসেন।

এর দু’দিন পর, অর্থাৎ ২০ মার্চ, ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ সেবসি এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে আইইডি হামলা চালান। এতে গাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাতে থাকা সমস্ত আরোহী সৈন্য নিহত হয়।

এদিকে গত ২৪ মার্চ, বুরকিনা ফাসোর কায়া এবং বানফোরা রাজ্যে ২টি পৃথক অপারেশন চালান মুজাহিদগণ। এর প্রথমটিতে বুরকিনান সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এবং দ্বিতীয়টিতে সামরিক কনভয়ের কয়েকটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সাথে বহু সংখ্যক সৈন্য হতাহত হয়।

এমনিভাবে গত ২৫ মার্চ, বুরকিনা ফাসোর কুঙ্গোসি রাজ্যের আলঘা শহরে জান্তা বাহিনীর একটি পদাতিক দলকে টার্গেট করেন মুজাহিদগণ। এতে বুরকিনার জান্তা বাহিনীর অন্তত ৪ সৈন্য নিহত হয়।

‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, গোব্রো শহরের উপকণ্ঠে একটি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান। বিস্ফোরণটি বুরকিনান বাহিনীর একটি টহল দলকে টার্গেট করে চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে একটি মোটরসাইকেল ধ্বংস হয়ে যায়। এসময় তাতে থাকা ২ আরোহী সৈন্য নিহত হয়।

মুজাহিদগণ গত ৩০ মার্চ, বুরকিনা ফাসোর তোঘান ও তুয়েনি সংযোগকারী সড়কে একটি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটান। যার সফল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় জান্তা বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান। এতে সাঁজোয়া যানটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাতে আরোহী সমস্ত সৈন্য নিহত হয়।

এদিকে গত ৩১ মার্চ রবিবার, ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ ফাদানগোরমা রাজ্যের কোগো এলাকায় একটি অতর্কিত আক্রমণ চালান। আক্রমণটি বুরকিনান সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত মিলিশিয়াদের একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়। এতে অন্তত ৩ মিলিশিয়া সদস্য নিহত এবং আর অনেক মিলিশিয়া সদস্য আহত, অন্যরা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিন ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ তাদের সবচাইতে সফল অভিযানটি পরিচালনা করেন তাপোয়া অঞ্চলের তাওরি শহরে। অভিযানটি এই অঞ্চলে বুরকিনান সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিকাল ৫টায় শুরু হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। অভিযানে কয়েক শতাধিক মুজাহিদ অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে বুরকিনান সেনাবাহিনীর ১৬ সৈন্য, ২৫ ভিডিপি সদস্য এবং ৩২ মিলিশিয়া সদস্য নিহত হয়। সেই সাথে ৩ সৈন্য মুজাহিদদের হাতে বন্দী হয় এবং অনেক সৈন্য আহত হয়। অন্য সৈন্যরা জীবন বাঁচাতে ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মুজাহিদগণ ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় মুজাহিদগণ ঘাঁটি থেকে ২টি সামরিক যান, ২টি দুশকা, ২টি পিকা, ৩টি আরপিজি, ৩৫টি কালাশনিকভ সহ অন্যান্য অনেক সরঞ্জাম গনিমত হিসাবে লাভ করেন।


বি:দ্র: প্রকাশিত বিভিন্ন নিউজ ও জেএনআইএম এর প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য থেকে অভিযানের সংখ্যা ও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অপ্রকাশিত অভিযান আরো থাকতে পারে; আল্লাহু ‘আলাম।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধভিডিও || যুদ্ধের ১৯৫ তম দিনে আল-কাসসাম ব্রিগেডের হামলা