ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক লাশ বের করা হচ্ছে, যেগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত হয়ে গেছে।
যেসময় এসব গণকবর থেকে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লাশ বেড়িয়ে আসছে, ঠিক তখনই সামনে এসেছে আরো রোমহর্ষক ঘটনা। ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুঘাইয়ের জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া লাশের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেয়ার আলামত পেয়েছেন তারা।
তিনি বলেছেন, “১০টি লাশের হাত বাধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিকেল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে যে, তাদেরকে খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেয়া হয়েছে।”
সিভেল ডিফেন্সের এই সদস্য আরও বলেছেন, “যে ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি, তাদের লাশ ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে।”
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের লাশও উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ মুঘাইয়ের শিশুদের বিকৃত লাশের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “গণকবরে কেন শিশুরা? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে ইসরাইলি সেনারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।”
ফিলিস্তিনের গাজার বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র আল নাসের এবং আল শিফা হাসপাতাল চত্বরে খুঁজে পাওয়া গণকবরকে ‘ভয়াবহ’ ধ্বংসযজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। এক বিবৃতিতে তিনি এ বিষয়টিকে খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানান।এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গাজার সর্ববৃহৎ ওই হাসপাতাল দুটিতে অভিযান চালানোর সময় নৃশংসতা চালায় ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। ওই সময়ই বিভিন্ন সূত্রে খবর প্রকাশ হয় যে, ইসরাইলি সেনারা লাশ ও এম্বুলেন্সের উপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিয়েছে। নতুন করে হাসপাতাল চত্বরে গণকবরের সন্ধান যেন সেই অভিযোগের পক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
দুই সপ্তাহ আগে খান ইউনিস থেকে সরে যায় দখলদার ইসরাইলের সেনারা। এরপর সেখানে ফিরে যান সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা গিয়ে দেখতে পান খান ইউনিসকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদাররা। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হাসপাতালের পাশেই পুঁতে রেখেছে তারা।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গণকবর থেকে উদ্ধার করা মরদেহের ৮৫ শতাংশই অজ্ঞাত। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন খান ইউনিসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান ইয়েমেন আবু সোলায়মান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। ইয়েমেন আবু সোলায়মান আরও জানিয়েছেন, গাজার গণকবর থেকে ৩৯২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই লাশের মধ্যে মাত্র ৬৫টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি লাশগুলো বিকৃত হওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কিছু ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
1. Almost 400 bodies have been found in mass grave in Gaza hospital, says Palestinian Civil Defense
– https://tinyurl.com/bdeussuv