যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে চলমান ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় অন্তত ৫০ জন অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে অনেক শিক্ষক পুলিশের হাতে মারধর ও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছেন। গ্রেপ্তার অধ্যাপকদের অধিকাংশই সরাসরি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, কেউ আবার বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন।
গত ১৭ এপ্রিল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করা সহ বেশ কিছু দাবিতে বিক্ষোভে নামেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইউরোপের অন্তত ১২টি দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। চলমান বিক্ষোভ থেকে এখন পর্যন্ত আমেরিকায় আড়াই হাজার ও ইউরোপে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
এক শিক্ষার্থীকে আটক করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারলিন ফলিন। এ সময় পুলিশের পাল্টা বাধার মুখে পড়েন তিনি। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এই নারী অধ্যাপককে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছেন এক পুলিশ সদস্য।
সম্প্রতি ওয়াাশিংটন ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভ থেকে স্টিভ তামারি ও অরলেক নামের দুই অধ্যাপককে আটক করেছে পুলিশ। তামারি অভিযোগ করে বলেন, আটকের সময় পুলিশের নির্যাতনে তার পাঁজরের একাধিক হাড় ও হাত ভেঙে গেছে। অরলেক জানান, বিক্ষোভের ভিডিও ধারণ করার সময় পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্প্রতি বিক্ষোভে যোগ দেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ অধ্যাপক। সেই অধ্যাপকদের একজন গ্রায়েম ব্লেয়ার। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা নিয়েই বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি ও তার সহকর্মীরা। সেদিন তিনি গ্রেফতার না হলেও তার অন্তত চার সহকর্মী অধ্যাপককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তাও করেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অবসরে যাওয়া জাপানি ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক গ্রেগরি ফ্লুগফেল্ডার নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তিনি শুধু ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের ছবি তুলেছিলেন। এই অপরাধে তাকে আটক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস বলছে, অধ্যাপকদের হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান। তবে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মুখে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ অনুষ্ঠান বাতিল নয়তো পিছিয়েছে। আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আয়োজন করা হলেও, তাতে বাধা দিচ্ছেন যুদ্ধবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
সব মিলিয়ে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের আচরণ পশ্চিমা সমাজের কথিত বাক-স্বাধীনতার চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমেরিকার এই বাক স্বাধীনতা কেবল নির্ধারিত সীমার মাঝেই আবর্তন করে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
তথ্যসূত্র:
1. Dozens of professors among those arrested in campus protests
– https://tinyurl.com/ns23p4hz