ফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৭ মে, ২০২৪

0
114

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে উত্তর গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর লাগাতার হামলায় আরও প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

 ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাংক ও সশস্ত্র যুদ্ধযানগুলো জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রের দিকে অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। আর  দখলদারদের বুলডোজারগুলো সাধারণ ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ও দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।

মধ্য গাজার দেইর-আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার প্রতিনিদি হানি মুহাম্মাদ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বলেছে যে, তারা জাবালিয়ার মূল রাস্তা ও সংযোগ সড়কগুলো থেকে গত ২৪ ঘন্তায় অন্তত ৯৩ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। সেখানে আরো অনেক মৃতদেহ পরে থাকার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

  শুক্রবার মার্কিন আর্মি ঘোষণা করেছে যে, গাজার উপকুলে নির্মিত অস্থায়ী পিয়ার বা বন্দর দিয়ে আগত সাহায্য সামগ্রী গাজায় পৌঁছে দিতে শুরু করেছে। তবে স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা বলছেন যে, “আমেরিকা ও ইসরায়েল প্রথমে আমাদেরকে হত্যা ও উচ্ছেদ করছে, আর তারপর আমাদের এলাকায় নির্মিত অস্থায়ী বন্দর দইয়ে আমাদের জন্য সামান্য কিছু সাহায্য প্রেরণ করছে! তারা মূলত গাজায় দস্থায়ি দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই এই অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করেছে। আমাদের এই সাহায্য দরকার নেই।“
আর জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলেছে যে, এই অস্থায়ী বন্দর কোন সমাধান হতে পারে না। বরং তারা ইসরায়েলকে স্থলপথে ত্রাণ প্রেরণের ব্যবস্থা করতে বলেছে এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি আর্মি শুক্রবার বলেছে যে, তারা গাজায় জিম্মিদের মধ্যে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইসরায়েলি দখলদার সেনাদের অভিযানের প্রশংসা করেছে এবং জীবিত জিম্মি ইসরায়েলিদের উদ্ধার ও মৃতদের দেহ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলের ‘জিম্মি উদ্ধারের’ দাবিকে ‘সন্দেহপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে আল-কাসসাম ব্রিগেড বেলছে যে, জিম্মিদেরকে উদ্ধার করার একমাত্র পথ হচ্ছে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো।

আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা (হাফি.) এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধের ফ্রন্টে গত ১০ দিনে হামাস যোদ্ধারা অন্তত ১০০ টি ইসরায়েলি যুদ্ধযানকে তাদের হামলার শিকারে পরিণত করেছেন। এতে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীতে অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বএল জানিয়েছেন তিনি।

এদিন দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর উপর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কিছু হামলার ঘটনা উল্লেখ করা হল –

আল কাসসাম মুজাহিদরা উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়া ক্যাম্পের ব্লক-২ এলাকায় দখলদার সেনাবাহিনীর একটি সৈন্যবাহী গাড়ী লক্ষ্য করে ইয়াসিন ১০৫ মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়ে এর ভিতরে থাকা ক্রু কে হত্যা ও আহত করেছে ।

আল কাসসাম মুজাহিদরা জাবালিয়া ক্যাম্পে প্রবেশরত অবস্থায় একটি “মারাকাভা- ৪”ট্যাঙ্ক শাওয়াজ নামক ডিভাইস স্থাপন করে ধ্বংস করেছে। এতে এর ভিতরে থাকা দখলদার ক্রু সদস্য আহত ও নিহত হয়েছে‌

রাফা শহরের উত্তরে আল মাশরু জাংশন এলাকায় দখলাদর ইসরাইলি বাহিনীর মারাকাভাহ ট্যাংক লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন ১০৫ দিয়ে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে আল কাসসাম বিগ্ৰেড।

আল কাসসাম মুজাহিদিনরা জাবালিয়া শহরের পূর্ব দিকে আক্রমণকারী দখলদার বাহিনীর পিছনের সারিতে আক্রমণ করে  একটি “টান্ডুম” শেল এবং একটি গেরিলা অ্যাকশন ডিভাইস সহ দুটি “D9” বুলডোজার উড়িয়ে দিয়েছে।

গাজা উপত্যকার পূর্ব জাবালিয়া ক্যাম্প এলাকায় যুদ্ধ থেকে ফেরার পর মুজাহিদরা জানিয়েছে, তারা দখলাদার ইসরাইলের ৪ টি D9 সামরিক বুলডোজার ও ১টি মারাকাভা ট্যাংক আল ইয়াসিন ১০৫ দিয়ে হামলা করে উড়িয়ে দিয়েছে।

পূর্ব রাফা শহরের আরদ আল শাওয়ি  এলাকায় একটি বাড়ীতে দখালদার ইসরাইলি সৈন্যকে লক্ষ্য করে স্নাইপিং করেছে আল কাসসাম বিগ্ৰেডের একজন মুজাহিদ।

দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় পূর্ব রাফার আল তানুর এলাকায় দখলদার ইসরাইলের D9 বুলডোজার লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন-১০৫ দিয়ে হামলা চালিয়েছ আল কাসসাম বিগ্ৰেডের  মুজাহিদরা ।

জাবালিয়া ক্যাম্পের আবু জায়তুন জাংশন এলাকায় দখলাদার জায়োনিস্ট বাহিনী লক্ষ্য করে আল কাসসাম বিগ্ৰেড এবং আল কুদস বিগ্ৰেড একটি যৌথ হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন দখলাদর সেনা আহত ও নিহত হয়েছে ।

আবারো,  আল কাসসাম বিগ্ৰেড এবং আল কুদস বিগ্ৰেডের আরো একটি যৌথ অপারেশন চালায় । এই হামলায় দখলদার ইসরাইলের মারাকাভা ট্যাংক লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন ১০৫ দিয়ে হামলা চালায় মুজাহিদরা। ঐ একই লক্ষ্যবস্তুর পাশে দখলাদার ইসরাইলি পদাতিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । এই সংঘর্ষে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বেশ কিছু সৈন্য নিহত ও আহত হয় ।

আল কাসসাম বিগ্ৰেড “কেরেম শেলম ” এবং দখলদার ইসরাইলের কমান্ড ও কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টারে ১০৭ শক্তিশালী রকেটলঞ্চার দ্বারা হামলা চালিয়েছে।

গাজা উপত্যকায় পূর্ব জাবালিয়া শহরে দুটি শক ডিভাইস সহ ২ টি মারাকাভা-৪ ট্যাংক -বিস্ফোরণ ঘটায় ।

 গাজা উপত্যকায় পূর্ব জাবালিয়া শহরে দখলাদার ইসরাইলি বাহিনীর ৩ টি “মারাকাভা-৪” ট্যাংক লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন -১০৫ শেল দিয়ে হামলা চালিয়েছে আল কাসসাম বিগ্ৰেড ।

 জাবালিয়া শহরের পূর্বে দখলাদার ইসরাইলি বাহিনীর “মারাকাভা-৪ ” ট্যাংক লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন-১০৫ শেল দিয়ে হামলা চালিয়েছে আল কাসসাম বিগ্ৰেড ।

 গাজা উপত্যকায় জাবালিয়া শহরের পূর্বে দখলাদার ইসরাইলি বাহিনীর “মারাকাভা-৪ ” ট্যাংক লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন-১০৫ শেল দিয়ে হামলা চালিয়েছে আল কাসসাম বিগ্ৰেড ।

 গাজা উপত্যকার উত্তর জাবালিয়া শহরে দখলাদার ইসরাইলি কমান্ড এবং অবজারভেশন সাইট লক্ষ্য করে মর্টার শেল দিয়ে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করেছে আল কাসসাম বিগ্ৰেড।

 আল কাসসাম বিগ্ৰেড আল কুদস বিগ্ৰেডের সাথে একত্রিত হয়ে জাবালিয়া শহরের পূর্বদিকে মর্টার শেল দিয়ে গোলাবর্ষণ করে ।

 আল-কাসাম ব্রিগেড ভারী-ক্যালিবার মর্টার শেল দিয়ে জাবালিয়ার পূর্বে অনুপ্রবেশকারী শত্রু বাহিনীর একটি কমান্ড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করেছে।

 আল কাসসাম বিগ্ৰেড দখলাদার জায়োনিস্ট বাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফোর্সকে প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং তাদের আগমনের সাথে সাথে একটি এন্টি পার্সোনেল ডিভাইস বিস্ফোরণ করেছিলো। গাজা উপত্যকায় পূর্ব রাফা শহরে জর্জ সড়কের একটি মসজিদের সামনে তাদের অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধবুরকিনায় ১০দিনে আল-কায়েদার দুর্দান্ত ১৬ অভিযান