গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের ভেতরে কয়েকটি নৌযানে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ বেশ সংকটে পড়েছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেন্ট মার্টিনের বেশিরভাগ দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত ফুরিয়ে আসছে। কারণ, নিরাপত্তার জন্য সেখানে মালামাল পৌঁছানো যাচ্ছে না।
মিয়ানমারের দিক থেকে গুলির আতঙ্কে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে চলাচলকারী অনেকেই আটকা পড়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আদনান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিকল্প পথে চারটি বোটে করে সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়া কিছু মানুষকে বুধবার টেকনাফ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতের পর বুধবার দিনেও প্রচণ্ড গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে নৌযানের অবস্থান দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইয়ামিন হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন নাফ নদী এড়িয়ে সাগরপথে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন থেকে শুক্রবার লোকজন ও পণ্য আনা নেয়ার জন্য টাগবোটের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছে, টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদে বাংলাদেশের ট্রলার ও স্পিডবোটে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হচ্ছে।
“তবে কারা গুলি করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গুলি করার ব্যাপার অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার,” বলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল নির্বাচনে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নিয়ে টেকনাফে ফেরার সময় তাদের নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় নাফ নদীতে বদরমোকাম এলাকার উল্টো দিক থেক এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়া হয়।
এ সময় তাদের ট্রলারে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ কর্মকর্তারা প্রাণে রক্ষা পেলেও ট্রলারে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে।
এরপর ৮ জুন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় গুলির মুখে পড়ে একটি মালবাহী ট্রলার।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে স্পিডবোটে করে একজন রোগী নেয়ার সময় স্পিডবোট লক্ষ্য করে দশ রাউন্ডের মতো গুলি হয়, যার কয়েকটি স্পিডবোটেও লেগেছে।
কিন্তু বাংলাদেশী নৌযান লক্ষ্য করে কারা এসব গুলি করছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এটি নিশ্চিত হওয়া কঠিন কারণ ওই অংশে (মিয়ানমার) বেশ কিছুদিন ধরে তাদের সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলছেন তারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে মিয়ানমার অংশে নাফ নদীতে তাদের সরকারি বাহিনী নৌযানে করে পেট্রল দিচ্ছে।
“তারাই গুলি করছে আমাদের নৌযানগুলোতে, এটা তো দেখাই যায়। তাদের ইউনিফর্মও দেখা যায়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ আলম বলছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ দুই অংশেই লোকজন আটকা পড়ে আছে।
“নাফ নদী দিয়ে যেতেই পারছি না। আমাদের দিকে গুলি চালাচ্ছে। আজ অন্য দিকে দিয়ে সাগর পথে চারটি বোটে করে লোক গেছে। সাগরের ভেতরে দিয়ে বড় নৌযানে তোলা হচ্ছে তাদের। টেকনাফের জিরো পয়েন্টের দিকে একটা ঘাটে নামানো হচ্ছে। এটা খুবই ঝুঁকির মধ্যে করতে হচ্ছে কারণ ওখানে কোন জেটিই নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
মি. আলম নাফ নদী দিয়ে যেসব নৌযান চলাচল করে তাদের মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুটো বোট আসা যাওয়া করতো। সাত দিন ধরে সব বন্ধ। দ্বীপের দোকান পাট খালি হতে শুরু করেছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।”
উল্লেখ্য, এর আগে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুই জন নিহত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকারকে এসব ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তথ্যসূত্র:
১. মিয়ানমারের দিক থেকে গুলি, সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা সংকটে
– https://tinyurl.com/mwkhswhz