পবিত্র ঈদ-উল-আযহা (১৪৪৫ হিজরি) উপলক্ষে ইমারতে ইসলামিয়ার সর্বোচ্চ আমির মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ মুসলিম উম্মাহর প্রতি অভিনন্দন বার্তা প্রদান করেছেন। তাকবীর, হামদ ও দরূদ পাঠের মাধ্যমে তিনি বার্তাটি শুরু করেন। অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআন ও নবিজীর হাদিসের আলোকে কুরবানির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মূল বক্তব্যের শুরুতে আফগানিস্তান ও সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি তিনি সালাম পেশ করেন। সকলের কুরবানি, হজ্ব, দান-সদাকা ও অন্যান্য নেক আমল কবুলের জন্য তিনি মহান আল্লাহর নিকট দোআ করেন। আফগান ভূমিতে দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত ইসলামী শরীয়াহ ব্যবস্থার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, জনগণের মাঝে দ্বীন ইসলামের অনুশীলন বাড়াতে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাই ইসলামী দাওয়াহ ও শিক্ষাকেন্দ্রসমূহের ভিত্তি মজবুত করা হচ্ছে, পাশাপাশি এগুলোর পরিধি ও সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে।
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সুদৃঢ় হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইসলামী শরীয়ার অধীনে অবস্থানরত নাগরিকদের অধিকার এখানে নিশ্চিত করা হচ্ছে। জনগণের সম্পদ, যেমন খনি, জমি, বন ও অন্যান্য সম্পত্তি সরকারি তত্ত্বাবধানে সুরক্ষিত রয়েছে।
অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগ, মুজাহিদদের অপরিসীম প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, শরীয়াহ আদালতের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের মহান দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে কৃষি, সেচ, সড়ক নির্মাণ ও খনিজ সম্পদ আহরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি বর্ণনা করেন।
বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সরবরাহের জন্য এই সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র মুসলমানের অধিকার রক্ষা ও তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য নিবেদিত ভাবে কাজ করছে ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। সুবিধা-বঞ্চিত এই সকল লোকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের বিত্তশালী লোকদের আহ্বান জানান আমিরুল মুমিনীন। এছাড়া শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান। বিশেষ করে ঈদের দিনসমূহে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে সরকারের সাফল্যের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার নীতি অবলম্বন করছে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার। শরীয়ার সীমার মধ্যেই এই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান সম্মানিত আমীরুল মু’মিনিন।
চলতি হজ্ব মৌসুমে ত্রিশ হাজার আফগান নাগরিক পবিত্র হজ্ব পালন করছে। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা প্রকাশ করেন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ বিশেষত নির্যাতিত ফিলিস্তিনবাসীর কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য দো’আ করতে তিনি হজ্বে গমনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক বন্যা, বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য দুর্যোগে আফগানবাসীর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি দুর্যোগে শহীদদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি আহত ব্যক্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে আহ্বান জানান। সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট তাদের কল্যাণের জন্য দোআ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন মুহূর্তে ইমারতের ইসলামিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান ও মুজাহিদগণের উদ্ধার ও সেবা কর্মসূচির প্রশংসা জ্ঞাপন করেন সম্মানিত আমীর। দেশের ব্যবসায়ী, বিত্তশালী ও সাধারণ জনগণকে নিজেদের সাধ্যানুযায়ী দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আফগান শরণার্থীদের প্রত্যাবসনে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদেরকে সনাক্তকরণ, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জমি বিতরণের পরিকল্পনা করছে ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। প্রত্যাবর্তিত সহায়-সম্বলহীন মানুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি ব্যবসায়ী, বিত্তশালী ও সাধারণ আফগানবাসীকে আহ্বান জানান। দুস্থদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে তিনি সকলকে অনুরোধ করেন।
বিবৃতির শেষ পর্যায়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের উপর ইহুদিবাদী ইসরাঈলের গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানান সম্মানিত আমীরুল মু’মিনিন। এই জঘন্য নৃশংসতা বন্ধ করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তিনি ক্ষমতাসীন দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
পরিশেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন। ইসলামী শরীয়ার বিজয় ও সবার মাঝে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ার কামনা ব্যক্ত করে তিনি বার্তাটি সমাপ্ত করেন।
তথ্যসূত্র:
1. Congratulatory Message from Sheikh-ul Quran and Hadith, Mawlavi Hebatullah Akhundzada, the Supreme Leader of the Islamic Emirate on the Occasion of the Blessed Eid-ul Adha
– https://tinyurl.com/m8jy2ntt